মনে পড়ে, প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির অভিনীত সিনেমা 'ইয়েতি অভিযান'-এর কথা? তুষার দেশের মানব বা তুষার দেশের এক ভয়াবহ দস্যু যাকে বলা হতো ইয়েতি, সেই ইয়েতির খোঁজে যাত্রা করেছিল কাকাবাবু। কিন্তু সত্যিই এই ইয়েতিরা কি রয়েছে আজও? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
সম্প্রতি ভারতীয় সেনার অভিযাত্রী দলের তোলা একটি ছবি নতুন করে পাহাড়ের কোলে থাকা ইয়েতিদের বর্তমান অস্তিত্ব নিয়ে গুজব তুলেছে। এর আগেই অনেকে দাবি করেছিলেন, তারা পাহাড়ের বরফের মাঝে ঘুরে বেড়ানো ইয়েতি দেখেছেন। কিন্তু সেই কথা বিজ্ঞানীমহলে কোনোদিনও স্বীকৃত হয়নি। পাহাড়ি লোককথা অনুযায়ী ইয়েতি হলো, বিশাল পা যুক্ত, সাদা ও লোমশ একপ্রকার জন্তু। এদের সাধারণত তুষার মানব বা বনমানুষ বলা হয়ে থাকে। বহুযুগ আগে থেকেই নানা সংস্কৃতিতে এদের খোঁজ মেলে। প্রধানত হিমালয়, সাইবেরিয়া এবং মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে মে মাস নাগাদ দেখা মেলে এদের। প্রথম ১৯ শতকে এদের নিয়ে জনশ্রুতি তৈরী হয়। এরপর থেকে নানা গল্পে, উপন্যাসে এদের দেখা মিলতে থাকে। যত দিন এগোতে থাকে ধীরে ধীরে এদের নিয়ে আগ্রহ আরও বাড়ে। এর আগে পাহাড়ের কোলে বিশাল বড় এক পায়ের ছাপ মেলায় বিজ্ঞানীরা তার ডিএনএ টেস্ট করিয়ে দেখেন তা আসলে প্রাগৈতিহাসিক যুগ প্লিস্টোসিনের আমলের তুষার ভাল্লুকের মত দেখতে একটি জন্তুর। তবে সেই তুষার ভাল্লুক এখনো বেঁচে আছে কিনা সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই ইয়েতিরা খুবই ভয়ঙ্কর হয়ে থাকে। এরা পাহাড়ের কোলে শিস দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এদর কাছে অস্ত্র বলতে থাকে একটি বিশাল বড় পাথর। বলা হয়, কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত ঠিকভাবে ইয়েতি দর্শন করতে পারেননি কারণ ইয়েতিদের সামনে কোনো মানুষ এসে গেলে ইয়েতিরা তাদের মেরে ফেলে। বলা হয়, এক একজন ইয়েতির চেহারা দীর্ঘ পেশীবহুল। উচ্চতায় ৬ থেকে ১০ ফুট হয়ে থাকে। তাহলে এরকম উচ্চতা যুক্ত প্রাণীর ওজন কত হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এদের ওজন প্রায় ৯০ থেকে ২০০ কিলোগ্রাম হয়ে থাকে। গায়ে অত্যধিক লোমের উপস্থিতির জন্য এদের দেখতে বিশালাকার মনে হয়।
এর আগে ২০১০ সালে বিজ্ঞানীরা জানান, একদল শিকারি বরফের মধ্যে লোমহীন এক বিশালাকার প্রাণী দেখেছেন। তারা দাবি জানান সেটিই ছিল ইয়েতি। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেন, সেটি ছিল অন্য এক প্রজাতির প্রাণী যে রোগের কবলে পরে তার লোম হারিয়েছে। শিকারিদের দেওয়া বর্ণনার মতো বিশালাকার ছিল না সেই নাম না জানা প্রাণীটি। বিজ্ঞানীদের দাবি বিড়ালের ন্যায় দেখতে সাদা লোমযুক্ত প্রাণী ছিল সেটি। তাকে দেখেই শিকারিরা ইয়েতি বলে ভুল করেছিল সেই সময়। তবে সম্প্রতি সেনা অভিযাত্রীদের তোলা ছবি থেকে আবারও জল্পনা ওঠে তুঙ্গে। সত্যিই কি পাহাড়ের খাঁজে কোথাও বাস রয়েছে ইয়েতিদের? আবারও একবার ইয়েতি অভিযান করলে কেমন হয়? বলা যায় না খোঁজ মিলতেও তো পারে।..............