খাদ্য অপচয় রুখতে নয়া উদ্যোগ, ইউরোপের মুদিখানাগুলিতে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে ‘হ্যাপি আওয়ারস্‌'

 

খাদ্য অপচয়ের মতো একটি বিষয় পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যার মধ্যে পড়ে। এর প্রতিকারও প্রায় দুষ্কর। এই অবস্থায় খাদ্য অপচয়ের পৃথিবীতে খাদ্য অপচয় বন্ধ করতে নতুন পথ দেখাচ্ছে ইউরোপ। ফিনল্যান্ডের এস মার্কেট নামক একটি মুদিখানাচক্রে প্রতিদিন রাত ৯টার পর থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে হ্যাপি আওয়ারস্‌। দিনের এই নির্দিষ্ট সময়টিতে, মার্কেট অন্তর্গত প্রায় ৯০০টি দোকানের বিক্রেতা পচন ধরতে শুরু করার আগের মূহুর্তেই দাম কমিয়ে বিক্রি করে ফেলছেন সেই সব দ্রব্য, যা মূলত অন্যান্য জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়ে থাকে।

খাদ্য অপচয়ে রাশ টানতে ইউরোপের অন্যান্য মুদিখানাগুলিও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন। এর ফলে খাদ্য অপচয়ের বন্ধ করার পাশাপাশি অর্থ অপচয়ে রাশ টানাও সম্ভব হচ্ছে। আগে কোনো দ্রব্য বিক্রি না হলে নির্দিষ্ট সময়ের পর তা ফেলে দিতে হত, এখন ‘হ্যাপি আওয়ারস্‌’-এর সৌজন্যে সেই টাকা নষ্ট না হয়ে ফিরে আসছে বিক্রেতাদের কাছে। সম্প্রতি ডেনমার্কের সর্ববৃহৎ মুদিচক্র রেমা’ও (REMA) প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য ক্রয় রোধ করতে এই প্রক্রিয়ায় সামিল হয়েছেন।

ইউরোপের দেখাদেখি আমেরিকাও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে। মূলত এই ‘হ্যাপি আওয়ারস্‌’-এ খাবার কেনার জন্য ভীড় করেন অসংখ্য শ্রমিকশ্রেণীর মানুষ। আমেরিকার কস্তকো হোলসেল কর্পোরেশনের অন্তর্গত দোকানগুলি খাবার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে দাম কমিয়ে দ্রব্যগুলি বিক্রি করছে। একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের পেশ করা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, খাদ্য অপচয়ের জন্য আমেরিকার ১০টি সুপারমার্কেটের মধ্যে ৯টি মার্কেটকেই ‘সি’ গ্রেড প্রদান করা হয়েছে।

ফুড অ্যান্ড অ্যাগরিকালচার অরগানাইজেশন অফ দ্য ইউনাইটেড নেশনস্‌-এর একটি সার্ভে বলছে, মানুষের পেটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত প্রতি ৩ ভাগের ১ ভাগ খাদ্য নষ্ট অথবা অপচয় হয়। যার অর্থ প্রতি বছর প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য অপচয়ের ঘটনা ঘটে গোটা বিশ্বে, অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি সমীক্ষা থেকে উঠে আসছে, পৃথিবীতে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন মানুষ অপুষ্টির শিকার।

খাদ্য অপচয় রুখতে, সম্প্রতি ভারতের হায়দ্রাবাদে স্থাপিত ফুড রেফ্রিজারেটর এক নতুন ভাবনা নিয়ে এসেছিল। বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া ঐ রেফ্রিজারেটর-এ কেউ চাইলেই রেখে আসতে পারেন যে কোনো রকম খাবার। খাদ্য অপচয় রোধের পাশাপাশি ক্ষুধার্ত ও পথিকদের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এবার খাদ্য বাঁচাতে ইউরোপ-আমেরিকার এই ভাবনা নিঃসন্দেহে পৃথিবীকে নতুন দিশা দেখাতে সমর্থ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...