কথায় বলে, আদাজল খেয়ে কাজে লেগে পড়ার কথা।প্রায় শেষ সময়ে পৌঁছে যাওয়ার পর মানুষ যখন কোনো অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে তখন তাকে বলা হয় আদা জল খেয়ে লেগে পড়া কিন্তু আদা জলের কথাই কেন আসে এই ক্ষেত্রে? অন্য কোনো মশলা মিশ্রিত জলের কথা তো বলা হয় না। আদার সাথে জল মিশিয়ে খেলে কি বিশেষ কোনো উপকার পাওয়া যায়? চলুন আজ এই বিষয়ে বিশদে জানা যাক.........
চিকিৎসাশাস্ত্রে আদার উপকারিতা নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। সর্দিকাশি থেকে শুরু করে না রোগের ক্ষেত্রেই আদার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এর সাথে জল যুক্ত হলে কি এর উপকারিতা বেড়ে যায়? হ্যাঁ, শুধু আদাই যে শরীরের পক্ষে উপকারী তা কিন্তু নয়। আদা যদি জল দিয়ে ফুটিয়ে সেই জল খাওয়া যায় তাহলেও উপকার মেলে। বলা হয়, আদা জল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত জিমে যান বা শরীরচর্চা করে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রেও আদা জল খুবই উপকারী। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে যদি শরীরের কোনো পেশিতে টান লাগে তাহলে আদা ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে সেই জল পান করলে কয়েক দিনের মধ্যেই পেশির টানের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।
ঠান্ডা লাগলে সেক্ষেত্রে মহৌষধি হিসেবে কাজ করে আদাজল। সর্দি কাশি হলেই প্রতি বাড়িতে আদা দিয়ে চা করা হয়ে থাকে। ঠান্ডা লেগে গলা খুসখুস করলেও আদা সেক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। জলে আদা দিয়ে সেই জল ছোট ছোট সিপ্ নিতে থাকলে গলা খুসখুস কমে যাবে।তবে এই পানীয় দিনে তিন থেকে চারবার খেতে হবে।
গাড়িতে ট্রাভেল করার সময় অনেকেই মোশন সিকনেসের শিকার হয়ে থাকেন। অনেকে আছেন যাদের পেট্রল বা ডিজেলের গন্ধ সহ্য হয় না।তারা আদা দিয়ে ফোটানো জল খেতে পারেন। গা গলানোর সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এমনকি বমিভাব কমাতেও এর জুড়ি মেলা ভার। বাজারে অনেক ওষুধ রয়েছে যা নসিয়া কমানোর জন্য কিন্তু বাজারচলতি ওষুধ খাওয়ার থেকে প্রাকৃতিক ওষুধ খাওয়া অনেক বেশি ভালো। তাই গাড়িতে উঠলেই যদি বমিভাব হয় তাহলে আদাজল খেয়ে দেখতেই পারেন।
শরীরের মেটাবলিসম বাড়াতে আদাজলের উপকার সবচেয়ে বেশি।এছাড়াও সারাদিন শরীরকে সতেজ রাখার জন্য চায়ের বদলে গরম জলে আদা ও মধু মিশিয়ে খাওয়া গেলে উপকার মেলে। শরীর থেকে অতিরিক্ত মেদ ঝেড়ে ফেলতে চাইলে সেইক্ষেত্রেও উপকার দেয় সে বস্তুটি তা হলো আদা। আগেরদিন রাতে ভিজিয়ে রাখা জিরে ও আদা সকালে উঠে চেকে নিয়ে সেই জল পান করতে পারলে মেদ কমতে বাধ্য। তবে এই জল প্রতিদিন নিয়ম করে পান করতে হবে।
তাহলে অবশেষে জানা গেলো কি কারণে বাঙালিরা তৈরী করেছে আদা জল খেয়ে কাজে নামার মতো প্রবাদ। আদাজলের উপকারিতা আগে জানা না থাকলেও এখন আমরা সকলেই জেনে গেছি। শেষ মুহূর্তে যখন কিছুতে উপকার পাওয়া যায় না সেক্ষেত্রে উপকার দেয় আদা। তাই এই আদাজল খাওয়ার প্রবাদ। তা মেদ ঝরানোর কথাই বলুন কিংবা সর্দিকাশি কমানোর কথা আদা যে সবক্ষেত্রেই উপকারী তা কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রমাণিত।