কলোস্ট্রামের উপকারিতা

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই মাতৃ শরীর থেকে নিঃসৃত হয় একধরণের হলুদ রঙের দুগ্ধজাতীয় পদার্থ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম কলোস্ট্রাম। এটিই হলো মাতৃ শরীরে উৎপন্ন হওয়া প্রথম দুগ্ধজাতীয় পদার্থ কিছুকাল আগে পর্যন্ত এই কলোস্ট্রাম শিশুকে পান করানো হতো না। কিন্তু বর্তমানে নানা গবেষণা থেকে জানা গেছে এই কলোস্ট্রাম একজন সদ্যজাত শিশুর জন্য কতটা উপকারী। জানা গেছে, কলোস্ট্রামে থাকে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিবডি যা জন্মের পর শিশুকে রোগ প্রতিরোধের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। আর কি কি উপকারিতা রয়েছে কলোস্ট্রামের চলুন জেনে নেওয়া যাক..........

 

বিশ্বের সমস্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীরাই জন্মের পর তাদের সন্তানদের মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে থাকে। তাই জন্যই তাদের স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি নানা গবেষণা থেকে উঠে এসেছে এমন তথ্য যা দেখে স্তম্ভিত চিকিৎসাবিজ্ঞান। দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে সম্প্রতি শিশুকে স্তন্যপান করানোর অভ্যেস অনেকটাই কমে গেছে। প্যাকেটজাত ফুডের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি দেখা যাচ্ছে মানুষের মধ্যে। "বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা" এবং "ইউনিসেফ" যৌথ উদ্যোগে জানায়, জন্মের পর প্রথম ছয়মাস শিশুকে মাতৃদুগ্ধের বাইরে কোনো খাবার দেওয়া যাবে না। এরপরেও নানা গবেষণা থেকে জানা গেছে, আজও প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ৩ জন শিশুকে জন্মের পর কলোস্ট্রাম দেওয়া হয় না। জন্মের পরেই শিশুদের পাচনতন্ত্র বাইরের খাবার হজম করার মতো ক্ষমতাশীল হয় না। তাদের ক্ষেত্রে আদর্শ খাবার এই কলোস্ট্রাম।

 

প্রোটিন, ভিটামিন এ এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ কলোস্ট্রাম শিশুদের জন্য খুবই উপকারী বলে প্রমাণিত। প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই দুধের অত্যন্ত সামান্য পরিমানই সদ্যোজাতের পেট ভরানোর জন্য যথেষ্ট। এই দুধ গ্রোথ ফ্যাক্টর এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফ্যাক্টর পূর্ণ হওয়ার কারণে এই দুগ্দ্ধ পানের ফলে শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রথম ধাপটি তৈরী হয়ে যায়। এই কথা স্মরণ করাতেই আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। বিশ্বের মোট ১২০ টি দেশ অংশগ্রহণ করে এই প্রোগ্রামে।

 

শিশুকে স্তন্যপান করানোর প্রথম ধাপ হওয়া উচিত শিশুকে মাতৃশরীর থেকে নির্গত হওয়া কলোস্ট্রাম পান করানো। কলোস্ট্রামকে বলা হয় সদ্যোজাতের জন্য সুপারফুড। কি কারণে? চলুন জানা যাক...... 

 

১) কলোস্ট্রামে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিবডি তাই কলোস্ট্রাম শিশুর শরীরে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কলোস্ট্রামে প্রচুর পরিমানে শ্বেতরক্তকনিকাও বর্তমান। তাই প্রতিদিন সদ্যোজাতকে ১ থেকে ৪ চা চামচ কলোস্ট্রাম পান করানো অত্যন্ত প্রয়োজন।

 

২) কলোস্ট্রাম সদ্যোজাতের পাকস্থলী এবং পাচনতন্ত্রের অন্তর্গত অন্যান্য অঙ্গগুলির উপর একধরণের কভার সৃষ্টি করে থাকে যা জীবাণুর সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

 

৩) শিশুর জন্মের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে ডার্ক স্টুল পাস করে থাকে। সেই ক্ষেত্রেও কলোস্ট্রমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কলোস্ট্রাম একধরণের ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে।

 

৪) মাতৃশরীরে তৈরী হওয়া কলোস্ট্রাম শিশুকে জন্ডিসের হাত থেকে বাঁচায়

 

৫) কলোস্ট্রাম শিশুর ব্রেন, চোখ এবং হার্ট গঠন হওয়ার জন্য যে সকল নিউট্রিয়েন্টস এর প্রয়োজন হয় তার অভাব পূরণ করে।

 

৬) শিশুদের লো ব্লাড সুগারের হাত থেকে রক্ষা করে কলোস্ট্রাম।

সদ্যোজাতের পাকস্থলীর পরিমাপ হয় একটি ছোট সাইজের মার্বেলের মতো। সেই পাকস্থলী সম্পূর্ণ ভরার জন্য এক থেকে চার চামচ কলোস্ট্রামই যথেষ্ট।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...