আজকাল এলোপ্যাথি চিকিৎসার ওপর অনেকেরই ভরসা উঠে যাচ্ছে। আসলে এই চিকিৎসায় মাঝে মাঝেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার ফলে একটা রোগের থেকে আর একটা রোগের উপদ্রব হয় শরীরে। ফলে অনেকেই এই চিকিৎসা করতে চাননা। তার বিকল্পস্বরূপ হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে সব ধরণের শারীরিক রোগ, মানসিক রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তার প্রতিরোধের ব্যাপার নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। রোগে পড়ার আগেই যাতে শরীর ও মনকে সুস্থ্য রাখা যায়, তার উপায়ও বলা হয়েছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে। এই শাস্ত্রে মধ্য রসায়ন বলে একটি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে, যার সাধারণ অর্থ হল মস্তিষ্ক, স্নায়ু বা স্নায়ুতন্ত্রকে সবল ও সক্ষম রাখার জন্য দ্রব্য। এই দ্রব্যগুলোর মধ্যে সহজলভ্য ও বিশেষ কার্যকরী হল-ব্রাহ্মী, থানকুনি, যষ্টিমধু, শংখপুষ্পি, গুড়ুচী, কুষ্মান্ড, জ্যোতিষ্মতী ইত্যাদি। এছাড়া আয়ুর্বেদে আরও অনেক দ্রব্যের উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর বেশ ভালো কাজ করে।
জ্যোতিষ্মতী গাছটির কান্ডে সাদা বিন্দু বিন্দু দেখা যায় বলে একে জ্যোতিষ্মতী বলে। বৈজ্ঞানিক নাম সিলাসট্রাস প্যানিকুলাটাস, এটি সিভাস্ত্রাসী গোত্রভুক্ত উদ্ভিদ।গাছটির বীজ এবং তেল আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মস্তিষ্কের বোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং স্নায়ুর দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে জ্যোতিষ্মতী।
যষ্টিমধুর কান্ড এবং মূল সরু লাঠির মত এবং স্বাদে মধুর তাই একে যষ্টিমধু বলে। বৈজ্ঞানিক নাম গ্লাইসিরাজিয়া গ্লেসরা। গাছটির মূলের গুঁড়ো আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ চড়ক সংহিতায় এর মূল গুঁড়োকে মেধ্য রসায়ন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর বল প্রদানকারী।
গুরুচি গাছটি বাংলায় গুলঞ্চ বা পদ্মগুলঞ্চ নাম পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম টিনোস্পোরা কর্ডিফোলিয়া। গাছটি লতানো এবং কান্ডে ছোট ছোট ফোলা উঁচু অংশ থাকে। গাছটির পাতা পান গাছের মতো দেখতে এটি আমাদের রাজ্যে প্রচুর হয়। এই গাছের কাণ্ডের রস ব্রেন টনিক হিসেবে কাজ করে।
অশ্বগন্ধা গাছটি এক ফুট থেকে পাঁচ ফুট উঁচু হয় এবং পাতা চওড়া ও সামান্য মোটা হয়। বৈজ্ঞানিক নাম ওইথেনিয়া সোমনিফেরা এবং সোলানেসি গ্রোত্রভুক্ত উদ্ভিদ। এর মূল চূর্ণ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়। মানসিক দুশ্চিন্তা ও অবসাদ দূর করতে কার্যকরী ওষুধ অশ্বগন্ধা।
কুষ্মাণ্ড বাংলায় আমরা যাকে কুমড়ো বলি সেই কুমড়োর পাকা ফল মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর পক্ষে উপকারী। কুমড়ো থেকে তৈরি ওষুধ বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
আয়ুর্বেদে একটি বিষয় বলা হয়, গরুর দুধ থেকে তৈরী ঘি খেলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু ভালো থাকে। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক এবং নার্ভের বিশেষ একটি উপাদান হল লিপিড। সেই কারণে স্নাযু বা নার্ভের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় গোঘৃতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।