মোহনবাগানের আঁতুড় ঘর উত্তর কলকাতা। হাতিবাগান, শ্যামবাজার, শোভাবাজার, লাহা কলোনীর মাঠ, মোহনবাগান লেন এই জায়গাগুলো যেন সবুজ-মেরুন রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ফ্যান্স ক্লাব। সেই ক্লাবগুলোর সদস্যদের দু চোখে না জানি কত স্বপ্ন। নতুন নতুন কিছু করার কত আকাঙ্খা।
১৯১১ সালে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। সমস্ত স্বদেশীরা তখন হিংস্র বাঘের মতো হয়ে উঠেছে। সেই সময় মোহনবাগানের ১১ জন ফুটবলার লড়লেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। বিনা অস্ত্রের এই যুদ্ধে জয় হল ভারতেরই। মোহনবাগান বনাম ইস্ট ইয়াকসার -এর ম্যাচ। ইংরেজদের এই দলটি খেলল বুট পায়ে। তথাপি মোহনবাগানের ১১ জন যোদ্ধাই ছিলেন খালি পায়ে। ২-১ গোলে জয় হয়েছিল মোহনবাগানের। বাগানের হয়ে গোল দুটি করেন অভিলাষ ঘোষ এবং শিবদাস ভাদুড়ী। শিল্ড জিতেছিল গঙ্গাপাড়ের ক্লাবটি। দিনটা ছিল ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই। সেদিন মোহনবাগানের এই দলটিতে কোনও বিদেশী ছিল না। ১১ জন বাঙালি হারিয়েছিল ১১ জন ইংরেজ অর্থাৎ বিদেশিকে। নীরবে থেকে যেন সেদিন ভারতের এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জয় ছিনিয়ে এনেছিল অত্যাচারী ইংরেজদের থেকে।
সেই ১১ জনের নাম আজও ইতিহাসের পাতায়, বিশেষ করে মোহনবাগান প্রেমীদের বুকে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যা আজ 'অমর একাদশ' বলেই নামাঙ্কিত। সেই অমর একাদশের গোল্ডেন ফ্রেম তৈরি হল উত্তর কলকাতারই একটি ফ্যান্স ক্লাবে। যে ক্লাবটির নাম 'সবুজ-মেরুন তরী'। হাতিবাগান এলাকার পৌরপিতা মোহন গুপ্তার তত্ত্বাবধানে সবুজ-মেরুন তরীর বাইরে বসানো হয়েছে এই ১১ জন ফুটবলারের মূর্তি। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কুমোরটুলির প্রখ্যাত মৃত শিল্পী মিন্টু পালকে। আর তিনি অতি যত্ন সহকারে বানিয়েছেন এই গোল্ডেন ফ্রেম। এবার অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। তারই জন্য দিন গুনছে এই ক্লাবের সদস্যরা।