মনিপুরের ''ইমা কেথেল" বৃত্তান্ত

একটি বিশেষ জায়গা। 'লেডিল্যান্ড'। পুরুষরা পর্দানশীন এখানে। আর মেয়েরা? মুক্ত। পাখির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়। অবশ্যই ইচ্ছেডানা। তাঁরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা উড়ন্ত গাড়ি আবিষ্কার করেছে। সৌর শক্তির ব্যবহার তাঁদের নখদর্পণে। তাই ওই জায়গার নাম লেডিল্যান্ড। পুরুষরা এখানে বাড়িতে থাকে। সাংসারিক কাজকর্ম করে। সেভাবে নেই পুরুষের স্বাধীনতা।

এমন জায়গা কোথায় আছে? আদৌ কি আছে?

Women-Market3

বিখ্যাত সমাজসেবিকা এবং লেখিকা বেগম রোকেয়ার ''সুলতানাজ ড্রিম'' গল্পে উল্লেখ ছিল এই জায়গার। কল্পবিজ্ঞানের মাধ্যমে নারীমুক্তির বার্তা দিতে চেয়েছিলাম লেখিকা। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৫ সালে।

কল্পবিজ্ঞানের এই কাহিনী ইউটোপিয়ার মতো মনে হচ্ছে না? যেন এক কাল্পনিক পৃথিবী। এমনটা হতেই পারে না।

এবার অনেকটা পিছিয়ে যাই। ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ। নারীমুক্তি, নারীবাদ বা নারী-স্বাধীনতা শব্দগুলো তখনো পৃথিবী পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি।

এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তখনই শুরু করেছিল ছকভাঙা গল্প। মনিপুর। সেখানে মেয়েদের কাঁধ বরাবরই চওড়া। অনায়াসে সে বহন করতে পারে একটা পরিবারের দায়িত্ব।

বাবা, দাদা, ভাই বা স্বামী এই সম্পর্কগুলোর আড়ালে কখনোই হারিয়ে যায়নি মেয়েদের নিজেদের অস্তিত্ব।

মনিপুরের ''ইমা কেথেল'' অর্থাৎ মাদার্স মার্কেট। মায়ের ভালবাসার গন্ধ লেগে থাকে এই বাজারে।

১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শুরু হয়েছিল এই বাজারটি। এখানে সমস্ত দোকানের বিক্রেতাই মহিলা। সম্পূর্ণরূপে মহিলা পরিচালিত একটা ''মার্কেট কমপ্লেক্স''। এশিয়ায় প্রথম এমন বাজারের কথা জানা গেছে। এত বছর ধরেও মনিপুরের এই বাজার তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে। এখনো পর্যন্ত একটি দোকানেও কোন পুরুষ বিক্রেতা নেই। এমনটাই চলে আসছে।

জামাকাপড়, ফল, সবজি, মাছ,গয়না সমস্ত কিছুই পাওয়া যায় ওখানে।

Women-Market2

উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোয় মেয়েদের অবস্থান বরাবরই শিক্ষণীয়। তাই সেখানে কোন একটি মেয়ে ধর্ষিতা হলে ওই অঞ্চলের সকলে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার প্রতিবাদে।

মেয়েরা সেখানে দয়া বা করুনার পাত্রী নয়। নিজের অধিকার বুঝে নিতে পারে। সহ্য করে না কোনো অন্যায়। তাঁরা শিকলহীন।


তবে এত বছর ধরে এই ইমা কেথেলের অস্তিত্ব সেভাবে জানা ছিল না।

সম্প্রতি এক তরুণী পরিচালক নিকিতা কালা এই বাজারটিকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারপরই এই "মাদার্স মার্কেট" প্রচারের আলোয় এসেছে।

সমাজের এমন আলোর অস্তিত্বের কথা জেনে সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিকিতা। আর্থিক চিন্তা করেননি।

Women-Market1

তাঁর মতে এমন একটি জায়গার অস্তিত্বই রোদ্দুরের মত। গতানুগতিক, ক্লিশে চিন্তাভাবনাকে হেলায় গুঁড়িয়ে ফেলতে পারে। তাই এটা সারা পৃথিবীর সামনে আসা উচিত।

সেই ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দের পর সমাজ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়েছে। চিন্তাভাবনা, মনন সবকিছুতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু আজও পুরনো বট গাছের মত পুরুষতান্ত্রিকতা রয়েছে এই সমাজে।

কখনোও তা মেয়েদের জীবনে অন্ধকার ডেকে আনে। ইমা কেথেল তেমন অন্ধকারে আলোর পরশ, যা সকলের কাছেই অনুপ্রেরণা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...