মানবতাই আসল, বললেন জেনিফার

মানবতাই আসল, বললেন জেনিফার

বাম কাঁধের ওপর সিরিঞ্জ-এর নিডলটা যখন ফুটছিল তখন একটা কয়েক সেকেন্ড একটা চিনচিনে ব্যথা ছিল। কিন্তু ব্যথা নিয়ে কোনও কষ্ট ছিল না, তৃপ্তি ছিল।
চোখের সামনে রাতারাতি বদলে গেল চেনা পৃথিবীর ছবি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর ভয়ের মাঝে করোনার সঙ্গে জুঝে চলেছে মানুষ। তাঁর শরীরে প্রয়োগ হওয়া এই সিরিঞ্জ যে মৃতসঞ্জীবনী সুধার মতো। কোটি কোটি মানুষের প্রতীক্ষার ধন। ঘন আঁধারে আলোর দিশা।

জেনিফার হিলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। বয়স ৪৪। দু'সন্তানের মা। সিটেলের ল্যাবরেটরিতে নীল গ্লাভস আর মাস্ক ঢাকা রিসার্চ কর্মী যখন তাঁর শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছিলেন তখন ঠিক কী মনে হচ্ছিল তাঁর- এই প্রশ্ন তাঁকে অনেকেই করেছেন। তার উত্তরে জেনিভার জানিয়েছেন, পৃথিবীর জন্য কিছু করতে পারছেন, এতেই তিনি গর্বিত। কীভাবে ভ্যাকসিন ভলান্টিয়ার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি? জেনিফার জানিয়েছেন মার্চের এক সকালে ৮ সময় ল্যাবরেটরিতে এভাবে যে তাঁকে দেখা যাবে তার প্রস্তুতিটা কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছিল।
টেক স্টার্ট আপের অপারেশন ম্যানেজার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভ্যাকসিন ভলান্টিয়ার হওয়ার জন্য একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, সেই পোস্ট চোখে পড়ে তাঁর।
জেনিফার তখন ওয়াশিংটনে। সেলফ আইসোলেশনে।

তাঁর কথায়, অতিমারীর ঝড় যেভাবে বয়ে যাচ্ছে তা আটকাবার কোনও ক্ষমতাই মানুষের জানা নেই। পোস্ট দেখার পর মনে হল হয়ত আমি কিছু করার সুযোগ পাচ্ছি। সুযোগটাকে কাজে লাগাই। তবে সহজ ছিল না। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের বাধা ছিলই। তারা আশ্চর্য হয়েছিল। ঝুঁকি যে অনেক।
জেনিফারকে ৪৫ পাতার একটি সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করে দিতে হয়েছিল।
জানতেন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে বিপদ হতে পারে তবু শুরু থেকেই ভীষন পজেটিভ ছিলেন। ১৬ মার্চ সকাল ৮ টায় জেনিফারের ওপর ভ্যাকসিন ট্রায়াল করা হয়। তারপর প্রেসমিট। তাঁকে বলা হয় ২ সপ্তাহ নিজের প্রতিটা শারীরিক খুঁটিনাটি লিখে জার্নাল তৈরি করতে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরের দিন জেনিফারের বাম হাতে হালকা ব্যথা ছিল। পরে আর কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেনিফারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ তাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভ কামনা জানিয়ে গিয়েছেন। এই মুহূর্তে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ করোনায় আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। পজেটিভ আছেন জেনিফার। তবে করোনায় নয়, আত্মবিশ্বাসে। দেশের সংকটে কীভাবে এগিয়ে আসতে হয় সে নিয়ে তাঁর ওপর একটি চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে ৩০সেকেন্ডের। দ্বিতীয় ট্রায়ালের পর আবার তাঁকে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ-এ রাখা হবে। কবে মিলবে করোনার ভ্যাকসিন?
গবেষকদের মতে, এখনও ১৮ মাসের অপেক্ষা।

অসীম সাহসী এই মা জানিয়েছেন, ' মানবতাই সার সত্যি। মানুষকে সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য বহু মানুষ নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তিনি শুধুই তাঁদের শরিক হয়েছেন মাত্র। খুব তাড়াতাড়ি আলোর মুখ দেখবে সবাই।'

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...