আপনি কি ভেজিটেরিয়ান? কিংবা, কিছুদিন আগে আমিষভোজি থেকে নিরামিষভোজি হয়েছেন? পুরোনো খাবার গুলোকে মিস করেন? মাংস বা ডিম এইগুলো কি একটা সময় প্রিয় খাবার ছিলো? এখন নানান শারীরিক সমস্যার চাপে পড়ে এইসব খাবারে বিধিনিষেধ পড়েছে?
তাহলে জেনে নিন আপনার এই সমস্যা গুলোর সমাধান হতে চলেছে এবার| সূত্রের খবর, আইআইটির স্টুডেন্টরা উদ্ভিদজাত উপাদান দিয়ে ‘মক মিট’ অর্থাৎ ‘আর্টিফিসিয়াল মাংস’ বানাতে চলেছেন| এতদিন কৃত্রিম মাংস তৈরি হয়েছে সোয়া প্রোটিন দিয়ে| এবার প্রথম সোয়া ছাড়া অন্য কোনও প্রোটিন দিয়ে তৈরি হতে চলেছে ‘মক মিট’|
জানতে চান এই প্রোটিনের প্রধান উৎস কী?
‘মুগ বিন্স’ অর্থাৎ মুগ ডাল দিয়ে তৈরী হবে এই ‘মক মিট’.....
অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, হওয়ারই কথা...
সারা বিশ্বে ভেজিটেরিয়ানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে| ভেগান সোসাইটি’র মতে পুরো পৃথিবীতে ভেজিটেরিয়ানদের সংখ্যা ২.১৬%, যা ২০১৪ সালে ০.২৫% ছিল| অনেক সময় ভেজিটেরিয়ানদের শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে এই আবিষ্কারে অনেকটাই উপকৃত হবেন তাঁরা।
শুধু তাই নয়, রয়েছে আরও চমক…
মক মিটের মধ্যে শুধু চিকেন এর আইটেম নয়, থাকবে ‘মক এগ’ও...‘স্ক্রাম্বেল এগ’ অর্থাৎ ডিমে ঝুরো... যারা মাছ-মাংস একদমই খেতে রাজি নন, অথচ ডিমে না নেই এবং নানা কারণে ডিম খাওয়া বারণ যাঁদের, তাঁদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে খুশীর খবর|
শুধু ভেজিটেরিয়ানরা নয়, যাঁরা শরীরচর্চা করতে হাই প্রোটিন খাওয়ার জন্য ডিমের ওপর নির্ভর করেন, তাঁদের জন্য এই কৃত্রিম ডিম প্রযোজ্য হবে, কারণ গবেষকদের মতে, একটি সাধারণ ডিমে থাকে ৪% প্রোটিন, আর একটি ‘মক এগ’-এ থাকবে ৮% প্রোটিন, অর্থাৎ দ্বিগুন|
সূত্রের খবর, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১শে সেপ্টেম্বর একটি ইভেন্টে আইআইটি দিল্লির স্টুডেন্টরা ডিম, চিকেন সসেজ এবং চিকেন সালামি তৈরি করে দেখাবেন, তাও আবার মুগ ডাল দিয়ে|
গবেষকরা বিগত ৬ মাস ধরে উদ্ভিদজাত উপাদান থেকে ডিম ও চিকেনের বিকল্প তৈরি করার জন্য গবেষণা করেন| তাঁরা জানান, এই আবিষ্কারটি সফলভাবে সম্পাদন হলে মাছ, মটন বা বীফ তৈরির দিকে এগাবেন|
এই গবেষনার তত্ত্বাবধানে আছেন, ড: কাভ্যা দাশরা, যিনি 'রুরাল ডেভেলপমেন্ট এন্ড টেকনোলজি’ সেন্টারে সহকারী অধ্যাপকের পদে নিযুক্ত| তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথমে ডিম দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন, কারণ এটি সাধারণ মানুষের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য|
ড: কাভ্যার সঙ্গে রয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা পুনম দেশাই, ও আরও অনেক ছাত্রছাত্রী, যাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা পরিশ্রম করে এই উদ্ভাবনটি সফল করেছেন| পুনম জানিয়েছেন, তাঁরা এর আগে বেসন এবং পরিশোধিত ময়দা ব্যবহার করে গবেষণা করে দেখেছেন, কিন্তু অবশেষে মুগের দানাতেই তাঁরা স্থায়ী হয়েছেন, কারণ এতে রয়েছে প্রোটিনের সেরা উপাদান| আর সবচেয়ে জরুরি বিষয় এই যে, এটি ডিমের সবচেয়ে ভালো ‘টেক্সচার’ দিতে সক্ষম|
আরও জানা যায়, ‘ফোর পারসুইট ভেনচারস’ হলো একটি কোম্পানি যা নতুন নতুন আবিষ্কারে অর্থ বিনিয়োগ করে, এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রাহুল দেওয়ান এই আবিষ্কারের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছেন| তাঁর কথায়, ৩-৪ মাস ধরে প্রায় ১০০ জন মানুষ এই ‘মক ফুড’-এর স্বাদ নিয়েছেন এবং তার ফলাফলে তাঁরা যথেষ্ট খুশি| তাঁদের কথায়, ‘মক-ডিম’-এ রয়েছে ডিমের থেকেও বেশি পুষ্টি।