সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছাড়া ভারতের ইতিহাস কল্পনাই করা যায়না| সারা বিশ্বের মধ্যে প্রাচীন দেশের মর্যাদা পাওয়ার জন্য হরপ্পা সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য| রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক এই সভ্যতা আবিষ্কারের আগে অব্দি ভারতের প্রাচীনতার গুরুত্ব অনুধাবন করা যেতনা, তা বলাই বাহুল্য| কিন্তু হঠাৎ এই সভ্যতার ধ্বংস হল কেন, তা নিয়ে যথেষ্ট মত পার্থক্য রয়েছে ইতিহাসবিদদের মধ্যে| এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এল খড়গপুর আইআইটি| সমসাময়িক পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণের অভাবে 'কৃষ্ণ যুগ' হিসেবে পরিচিত যুগটির জলবায়ু পরিবর্তন ও জল সংকটের কারণে কিভাবে পতন হয়েছিল, সেই বিষয়টি জানা যায়নি| কচ্ছের রান ও থর মরুভূমিতে ৩ হাজার বছর আগের লৌহ যুগের ওপর গবেষণা চালিয়েছে আইআইটি খড়গপুর|
এই অঞ্চলে অর্থাৎ কচ্ছের রান-এ যে সমস্ত পাথুরে দ্বীপগুলি রয়েছে, সেখানে হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে| থর এবং রান অঞ্চল দীর্ঘদিন মনুষ্যবর্জিত বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে| রন-এর করিমশাহী অঞ্চল ও মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চল খননকার্যের ফলে মাটির জিনিসপত্র এবং কাঠকয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই সব জিনিস ও কাঠকয়লার ওপর উদ্দীপিত আলোক বিকিরণ এবং রেডিও কার্বন পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ৩১০০-২৩০০ বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক যুগে এই অঞ্চলে মনুষ্য বসতি ছিল। বিভিন্ন তরল পদার্থের অবশিষ্টাংশ, ফুলের রেণু এবং শামুক জাতীয় প্রাণীর নরম অংশের জীবাশ্ম অক্সিজেন আইসোটোপের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রমাণ পাওয়া গেছে, ওই অঞ্চলে সক্রিয় একটি নদী ছিল এবং লৌহ যুগের শুরু থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত সেখানে বসবাস করত মানুষ। ওই অঞ্চলে খননকার্য চালানো হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহায়তায়। এলাকাটি ভারত-পাক সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় সেখানে সহজেই যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ রয়েছে। গবেষকেরা এই প্রসঙ্গে ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে আল বিরুনির ভ্রমণ কাহিনী উল্লেখ করেছেন যেখানে কচ্ছ এলাকায় নদীর কথা উল্লেখ আছে। ওই এলাকাগুলিতে হরপ্পা সভ্যতায় ব্যবহৃত নানান জিনিসপত্রের পাশাপাশি হাড়, দাঁত-সহ বহু প্রাণীর অবশেষ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমেই ওই অঞ্চলের সামাজিক অবস্থার পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছে।