তুই কি আমার দুঃখ হবি?

হতে পারে সে নীললোহিত। হতে পারে সে অনিমেষ, কিংবা হিমু।আসলে তার কোনও নাম নেই। রাজপথে অনেক মুখের ভিড়ে সে প্রতিদিন মিশে থাকে। নির্বিকার নিয়তির মতো। অমোঘ। সে আসলে ফাগুনের ফুল। ক্ষণিকের মুঠো ভরে দিয়ে ফিরে যায়। আর কিছু মনে রাখে না।তেমনি এক ছেলের গল্প।পাহাড়তলীর এক মফস্বল থেকে সে পা রেখেছে কলকাতা শহরে। ইউনিভার্সিটির প্রথম বছর।এ শহর তাকে কেমন একটা ধোঁয়া-ধোঁয়া ভাবে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ।  কেমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে।তার ঘুমের মধ্যে জেগে ওঠে ছেড়ে আসা স্মৃতি।  মনে হয় এক ছুট্টে চলে যায়। পারে না।  তাই পরদেশী শহরের অলিতে-গলিতে খুঁজে ফেরে ঘরভূম।

ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র হিসেবে নাম আছে।  গান-কবিতা-স্লোগান কিংবা রাজপথের আন্দোলনে সে চেনা মুখ।পৃথিবীর  সব রহস্য যুক্তি আর মগজ দিয়ে বুঝে নেওয়ার অভ্যাস থাকলেও  পাশের পাড়ার এক ষোড়শী তাকে খুব টানে আজকাল।ক্লাসে ফাঁকে ফাঁকে আচমকা মনকেমন। খুব দেখতে ইচ্ছে করে।  মাঝেমাঝে তাই অকারণেই সাইকেল ছোটে পাশের পাড়ার রাস্তায়। গলিতে। যদি একবার...অচেনা গলিতে দাঁড়িয়ে বই লেনদেন চলে দ্রুত হাতে।  সে তাকে গল্প বলে। সেই গল্পে মিশে যায় কবিতা।  

কখনও সখনও গঙ্গার ঘাটে। রেললাইন ধরে পাশাপাশি হেঁটে যায়।  মনে হয় খুব নরম কোনও আলো ভোরের মতো নেমে আসছে তার চোখের ওপর। খুব ধীরে ধীরে। আর সেই আলোয় আচ্ছন্ন হচ্ছে সে। নিয়তির মতো আলোটা দূরে সরে গেলেও রেশ রয়ে যাচ্ছে; তার মনে, মগজে।জোড়া বেণি। ফিতের ফুল।  সুতির শাড়ী। কাজল চোখ। আর কপালে টিপ।ভিতু খরগোসের মতো সারাক্ষণ  অকারণ খুশিতে চঞ্চল। কিন্তু কলেজ বাদে বাড়ির বাইরে পা রাখার অনুমতি বিশেষ নেই।নতুন চোখে পৃথিবী চিনছে। অপার কৌতূহলে  বাধ্য পড়ুয়ার  দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।সাইকেলের ঘণ্টির আওয়াজ কানে গেলেই ছটফটানি।  সকলের নজর এড়িয়ে বারান্দা বা ছাদ।ছটফটে চোখ কাকে যে  খোঁজে!পাশের বাড়িতে আসা একটা লম্বা ছেলে।রবীন্দ্রজয়ন্তীর গানের আসরে গীতবিতানের গানে গলা মেলাতে গিয়ে আড়ষ্ট আলাপ।  তারপর টুকরো-টুকরো কথা।  সে যেন ভিনগ্রহী এক মানুষ।ছেলেটা তাকে বই দিয়ে যায়।  অদেখা দুনিয়ার গল্প বলে। অনেক দূরে চা বাগান আর পাহাড়তলীর মানুষের গল্প। কিছু সে বোঝে, বাকিটা বোঝে না। 

তবে এসবের ফঁাকে ফাঁকে সে  বেশ বুঝতে পারে ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে...চোখে চোখ মিলে গেলে তার  ভারী লজ্জা করে।একদিন আচমকাই ফুরিয়ে যায় গল্পগুলো। বদলে যায় পথ। অন্তমিলের পদ্য তখন হাত ছাড়িয়ে অনেকক দূর।দুটো আলাদা দেশের মতো। মাঝখানে খাঁ-খাঁ কাঁটাতার।তবু শুকনো চোখে টলটলে বিষাদ। কে যেন মুখ তুলে জেগে।প্রথম প্রেম। প্রথম সর্বনাশ। অনন্ত বিষাদ...

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...