ঘুমোতে যাওয়ার আদর্শ সময়

সাম্প্রতিক কালে ছোট থেকে বড় সকলেরই জীবন থেকে 'আর্লি টু বেড এন্ড আর্লি টু রাইজ ' এই কথাটি আস্তে আস্তে মুছে যাচ্ছে। এই সমস্ত প্রবাদকে আমল দিতে নারাজ সবাই। বিশেষত শিশুরা বা যারা এখনও ১৮ বছরে পা দেয়নি, সেইসব কিশোর-কিশোরীদের জীবন থেকে তাড়াতাড়ি রাতে ঘুমোতে যাওয়া নেই বললেই চলে। তাই ঘুমোতে যাওয়ার আদর্শ সময় নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে যে, সমগ্র দেশের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ নাবালক-নাবালিকাকে এই সমীক্ষার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই বিশেষ সমীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে যে, কলকতার প্রজন্মের রাত ১০টায় ঘুমোতে যাওয়ার অভ্যাস একেবারেই নেই। রাত ১২টার পর বা মাঝরাতে ঘুমোনোর অভ্যাস যেমন মিশে গিয়েছে তাদের অধিকাংশের রুটিনে, তেমনই সমীক্ষায় বহু শিশু বা কিশোর জানিয়েছে, সকালে বিছানা ছাড়লেও, তাদের ঘুম ছাড়ে না। তবে শরীর সুস্থ রাখতে এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম  সঠিক ভাবে চালিয়ে যেতে পর্যাপ্ত ঘুমের অত্যন্ত প্রয়োজন এমনটাই জানা গিয়েছে। কিন্তু কলকাতার অভিজ্ঞতা বলছে, ঘুম-ছাড়া জীবনে অভ্যস্ত হতে জুড়ি নেই এই শহরের। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে এ শহরে রাত ১০টায় ঘুমোতে যাওয়ার হার শতকরা এক শতাংশেরও কম। অথচ এই প্রজন্মের ৬১ শতাংশ বলছে, রাত ১২টার পরই তারা ঘুমনোর কথা চিন্তা করে। ৩৩ শতাংশ শিশু বা কিশোরের স্পষ্ট বক্তব্য, তারা সারা রাতে ছ’ঘণ্টার কম সময় ঘুমোয়। ঘুম-চুরির এই এপিসোডে অবশ্য গোটা দেশ হাত মিলিয়েছে একসঙ্গে। ৯৩ শতাংশ মানুষ সমীক্ষায় জানিয়েছে, তারা পর্যাপ্ত ঘুম থেকে প্রায় বঞ্চিত। তবে বিছনায় গড়িয়ে পড়লেই অনেকে এক ঘুমে রাত কাটায়। আবার  অনেকে কিছুক্ষণ টিভি দেখে, বই পড়ে বা পড়ার বইয়ে চোখ রেখেই চোখ জুড়িয়ে আসে।

কিন্তু এসব অভ্যাসকে দূরে ঠেলে জেনারেশন ওয়াইয়ের চোখ এখন মোবাইলে। ঘুম-চুরির কারণ খুঁজতে গিয়ে এই তথ্য সামনে এনেছে সমীক্ষা। ‘বেড টাইম’-এর আগে এখন অভিধানে নতুন শব্দ স্ক্রিন টাইম’। তা সেই স্ক্রিন যতটা টিভির, তার চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট ফোনের। টিভির পর্দায় কোনও ভালো ম্যাচ বা সিরিয়াল হলে আলাদা কথা। তাছাড়া টিভিতেও তেমন মন নেই। তার চেয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে অনেক বেশি বিনোদন, গল্পগাছা। সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট ছাপিয়ে যাচ্ছে সব কিছু কে। হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক ছাপিয়ে ঘুমের আগে আরও বেশি করে চোখ টানে ইউটিউব, নেটফ্লিক্স। সেই মোহ উপেক্ষা করে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসে ফিরতে রাজি নয় অনেকেই। সমীক্ষায় ৪৭ শতাংশ কচিকাঁচা জানিয়েছে, টিভি ও মোবাইলে বিনোদন খোঁজা তাদের নিত্য রুটিন। তার পরে আসে ঘুমের পালা। তবে উক্ত সমীক্ষা ঘুম চুরির কোনও কিনারা করতে পারেনি। বরং তারা খুঁজতে চেয়েছে কম ঘুমের পরিণতি। সেখানে ১৮ বছরের নীচে থাকা কিশোর-কিশোরীরা জানাচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠেও তাদের ঘুম-ঘুম ভাব কাটে না।ঝিমুনি আসে। ম্যাজম্যাজ করে গা। ক্লান্ত লাগে। স্কুল যাওয়া, টিউশন, পড়তে বসা বা খেলাধুলোর আগ্রহও যে কমিয়ে দেয় ওই কম ঘুম, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দিনের শুরুতেই উদ্যম হারিয়ে ফেলে নয়া প্রজন্ম। মানসিক বিকাশও যে কোথাও থমকে যায় নিদ্রাহীনতাকে আকঁড়েই, তা মানেন অনেকে। কিন্তু নিজের এই ক্ষতিকে আমল দিতে নারাজ নতুন প্রজন্ম। সুস্বাস্থ্য নয়। বিত্ত নয়। বুদ্ধির বিকাশ নয়। অর্ধেক রাত জেগে কাটানোই এই জেনারেশনের বারোমাস্যা। এই অভ্যাস কে খণ্ডানোর ক্ষমতা নেই কোন সমীক্ষার।

 

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...