শিবের শ্রাবণ মাস

বিশ্বব্রহ্মান্ড জুড়ে মহাদেবের ভক্ত কূল ছড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে থাকলেও তাদের ভক্তির মানদন্ড সকলের ক্ষেত্রেই সমান। প্রতি বছরই সময়, দিনক্ষণ, আচার ও সূচী মেনেই ভক্তরা মহাদেবের পূজা করে থাকেন। যাতে পূজোর সময় কোন রকম ভুল বা ত্রুটি না হয় সে বিষয়ে ভক্তবৃন্দ বেশ ওয়াকিবহাল। কারণ শিবকে তুষ্ট করতে পারলে জীবন সার্থক। প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষ গিয়ে ভিড় জমায় মহাদেবের বিভিন্ন ধাম গুলিতে। যাত্রা পথে যতই কষ্ট হোক তাদের একটাই লক্ষ্য একবার শিবের দর্শন। আবার শিব রাত্রির সময় মন্দিরে মন্দিরে ভক্তরা এসে একত্রিত হন তদের আরাধ্যকে পূজা করতে। ঠিক তেমনই শ্রাবণ মাসও শিবের উপাসকদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার রীতি মেনে শিবের পুজো করা হয়। আর প্রতিটি পূজার মতন এই শ্রাবন মাসের শিবের আরাধনার ক্ষেত্রেও আছে এক বিশেষ কারণ ও ফলাফল|

বহু ক্ষেত্রেই আমরা শুনে থাকি মহাদেব ভিষণ তেজী। তাঁকে সন্তুষ্ট করা মুখের কথা নয়। তাই মহাদেবের কৃপা পেতে হলে স্বচ্ছ মনে সঠিক নিয়মে তাঁর পূজা সম্পন্ন করতে হবে। শোনা যায় শ্রাবন মাসে শিবের উপাসনা করার মূল উদ্দেশ্য হল মনস্কামনা পূরণ হওয়া। ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা পূর্ণ করতে পারে শ্রাবন মাসে শিবকে পুজোর মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে পারলে।

শ্রাবন মাসে মহাদেবের পূজার একটি পৌরাণিক আখ্যান বর্তমান। পুরাণানুসারে অমরত্ব লাভের জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যে লড়াই হয়েছিল তার ফলশ্রুতি হিসাবে সমুদ্র মন্থন হয় এবং সেই মন্থনে অমৃতের সাথে যে বিষ উঠে আসে তা বিশ্বব্রহ্মান্ডকে ধ্বংস করে দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল। পৃথিবীকে রক্ষা করতে মহাদেব সেই বিধ্বংসী বিষ পান করে ছিলেন। সেই বিষ মহাদেব নিজের কণ্ঠে ধরে রাখেন। তাই মহাদেবের অপর নাম নীল কন্ঠ। আপনারা সকলেই হয়তো ভাবছেন নীল কণ্ঠ-সমুদ্র মন্থন এসবের সাথে শ্রাবণ মাসের কী সম্পর্ক? এবার আসা যাক মূল বিষয়ে, আসলে পুরাণ মতে এই সমুদ্র মন্থন ঘটে ছিল শ্রাবন মাসে। অর্থাৎ এই সময়ে দেবাদিদেব পৃথিবীকে ভয়াবহ বিষ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই শ্রাবণ মাস হল মহাদেবের উপাসনার এক মহৎ সময় কাল। প্রতি সোম বার শিবের পুজো করলে ভক্তের মনস্কামনা পূরণ করেন স্বয়ং মহাদেব।

শ্রাবণ মাসের শিবের পুজোর করেকটি রীতি আছে যেগুলি মেনে চলতে পারলে মনস্কামনা পূরণের পাশাপাশি ভাল ফল পাওয়া যায়। যেমন –

  • শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার শিব লিঙ্গের প্রতি দুধ নিবেদন ও শিবের পূজা করা।
  • প্রতিদিন স্নানের পর শুদ্ধ মনে শিবের স্তোত্র জপ করা।
  • এই মাসে স্ফটিক শিব লিঙ্গ স্থাপনে সুফল পাওয়া যায়।
  • শুভ কথা শোনার অন্যতম মাস হল শ্রাবণ কারণ শ্রবন শব্দটির উৎপত্তি শ্রাবণ থেকে।
  • শ্রাবণ মাসের এই পূণ্য তিথিতে শিব-গৌরীর আরতি করলে ভাল ফল লাভ হয়।
  • শিবের পুজোর মূল উপকরণের মধ্যে একটি হল বেল পাতা। তবে শ্রাবণ মাসে শিবের পুজোর ক্ষেত্রে শিবলিঙ্গের উপর যে বেল পাতা নিবেদন করা হয় তা অষ্টমী, চতুর্থী, নবমী, অমাবস্যা, সংক্রান্তি ও সোমবার করে সরাতে নেই।
  • রুদ্রাক্ষ ধারণের উপযুক্ত সময় এই শ্রাবণ মাস।
  • শ্রাবণ মাসে শিবের পুজো করা কালীন প্রতি সোমবার উপবাস করে শুধু মাত্র সাবু ও ফল আহার করা হয়।
  • এই সময় শিবের পাশাপাশি মঙ্গল গৌরীর পূজা করলেও ভাল ফল লাভ করা যায়।

উপরিউক্ত রীতিগুলি মেনে চললে শ্রাবণ মাসে মহাদেবের আরাধনা করা সার্থক হবে। গত ১৮ই জুলাই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ১লা শ্রাবণ ছিল আর ২২শে জুলাই অর্থাৎ বাংলার ৫ তারিখ ছিল এই বছরের শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। যারা এই শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবার মেনে নিষ্ঠার সাথে উপাসনা করবেন তারা উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়।  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...