এম্পায়ার থিয়েটার

এখনও  অনলাইনে টিকিট বুক করতে গেলে জ্বলজ্বল করছে নামটা। কিন্তু ক্লিক করলেই ফাঁকা। জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে মহানগরীর বুক থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে গিয়েছে সিঙ্গেল স্ক্রিন এই সিনেমা হলের নামটা। এখন সবটাই অতীত।

রক্সি সিনেমা হল। উনিশের দশকের কলকাতার এক উজ্জ্বল আকর্ষণ।

উনিশ শতকের কলকাতা। সাহেবি কেতার কলকাতা। ব্রিটিশ আভিজাত্যে রপ্ত হতে শিখছে আসতে আসতে। জীবনযাত্রা থেকে বিনোদন সব কিছুতেই সেই ছাপ ক্রমশ স্পষ্ট।

ধর্মতলা চত্বরে ব্রিটিশ স্থাপত্যের অনুকরণে গড়ে উঠল এক অপেরা হাউজ। নাম এম্পায়ার থিয়েটার। ঠিকানা ৪বি চৌরঙ্গি প্লেস। সালটা ১৯০৮-০৯।

হলের বাইরের গম্বুজ আলাদা করে চিনিয়ে দিত এই অপেরা হাউসকে। ইউরোপের ক্ল্যাসিক অপেরার শো চলত অভিজাত এই প্রেক্ষাগৃহে। উদয় শঙ্কর তাঁর ডান্স ট্রুপ নিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন।

চল্লিশের দশকে এম্পেয়ার অপেরা হাউস নাম বদলে হয় ‘রক্সি টকিজ’। সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল।

প্রথম ছবি অশোক কুমার অভিনীত 'নয়া সংসার'। সালটা ১৯৪১। দু’বছর পর ‘কিসমিত’। প্রধান চরিত্রে অশোক কুমার। একটানা ১৮৬ সপ্তাহ চলেছিল কিসমৎ। গোটা দেশের  খবর হয়ে ছিল রক্সি। শোনা যায় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রক্সি অধিগ্রহণ করে আমেরিকান সেনা বাহিনী। সিনেমা হল হয়ে ওঠে সেনা ব্যারাক।

 ২০১১ সালে পুরসভার রাজস্ব বকেয়া থাকায় আরও একবার বন্ধ হয়েছিল রক্সি। কিন্তু তারপরও আবার ফিরে নতুন করে।

কিন্তু এবার সে সম্ভাবনা মৃত। চলতি সপ্তাহেই কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে রক্সি। শোনা যাচ্ছে সেখানে অফিস হবে পুরসভার। হেরিটেজ বিল্ডিং- এর ট্যাগ পড়েছিল গায়ে। কিন্তু তাও বাঁচানো সম্ভব হল না। ১১০ বছরের অতীত বুকে নিয়ে শুধু নাম হয়ে ইতিহাসের পাতায় ঘুমিয়ে পড়ল রক্সি টকিজ।  

১১ মার্চ সন্ধ্যা ছ'টায় শেষ শো। শেষ দিন একটি বাংলা এবং একটি হিন্দি ছবি দেখানো হয়েছে।  অদ্ভুত সমাপতনে ছবির নাম ‘ ভূত পার্ট ওয়ানঃ দ্য হন্টেড শিপ’।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...