গ্রীনল্যান্ডের পর এবার আইসল্যান্ড, হিমবাহ উপাধি হারালো আইসল্যান্ডের ওকজোকাল হিমবাহ

ফের কপালে ভাঁজ, আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে গলে গেল আইসল্যান্ডের ওকজোকাল হিমবাহ। আইসল্যান্ডের শতাধিক হিমবাহের মধ্যে এটিই প্রথম হিমবাহ যা সম্পূর্ণভাবে গলে গিয়েছে। রবিবার, ওকজোকাল যাওয়ার পথে একটি ফলক চোখে পড়েছে যেখানে আইসল্যান্ডবাসীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে, ‘আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে দেশের শতাধিক হিমশৈলের মধ্যে প্রথম হিমশৈল হিসেবে ওকজোকাল তার হিমবাহ উপাধি হারিয়েছে,‘ ঘটনার জেরে স্বভাবতই চিন্তার ভ্রুকুটি দেখা গিয়েছে আবহাওয়াবিদ মহলে। তবে এই ঘটনা নতুন নয়, শেষ ১০ বছরে বিপুল পরিমাণে গলেছে আইসল্যান্ডের বরফ, আর এ বছর তা আরও বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে।

এ বছর রেকর্ড পরিমাণ গরমে নাভিশ্বাস ফেলতে হয়েছে ইউরোপবাসীদের, ঊষ্ণায়নের ফলেই বারবার এ ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে, এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদ মহল। সম্প্রতি গ্রীনল্যান্ডের বরফও প্রচুর পরিমাণে গলে গিয়ে জলে পরিণত হয়েছে, বিশ্বের নানা প্রান্তে বন্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুততার সঙ্গে।  ইতিমধ্যেই গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেন গ্রহণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলির মধ্যে এটি অন্যতম ভয়ঙ্কর, যা ইতিমধ্যেই আইসল্যান্ড তথা বিশ্ববাসীর কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৪ তে একদল বিজ্ঞানী এবং সেখানকার স্থানীয় কিছু বাসিন্দা মিলে মধ্য-পশ্চিম আইসল্যান্ডের হিমবাহটিতে ফলক বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করলেও, সমগ্র বিশ শতক ধরে বহুল পরিমাণে বরফ গলে যাওয়ার ফলে হিমবাহটি সম্পূর্ণ তুষারশূন্য হয়ে যাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া কার্যত অধরা রয়ে গিয়েছে

“ওকজোকাল’ই আইসল্যান্ডের প্রথম হিমবাহ, যা বরফশূন্য হয়ে ‘হিমবাহ’ উপাধি হারিয়েছে। আগামী ২০০ বছরে আমাদের সমস্ত হিমবাহই এই পথ অনুসরণ করতে চলেছে,” ওকজোকাল যাওয়ার পথে একটি ফলকে এমনই চাঞ্চল্যকর একটি লেখা চোখে পড়েছে যেটি লিখেছেন আইসল্যান্ডের লেখক আন্দ্রি ম্যাগনাসন।  

১৯৮৬ তে নাসা আর্থ অবজার্ভেটরি’র স্যাটেলাইট চিত্রে আইসল্যান্ডের দিকে চোখ রাখলে কেবলই ধূ ধূ সাদা প্রান্তর নজরে আসতো, কিন্তু এ বছর পয়লা আগস্টের পর আইসল্যান্ডের এক অচেনা চিত্র ক্যামেরাবন্দী হয়েছে, বরফপূর্ণ সাদা জমির বদলে সেখানে শুধু বিক্ষিপ্তভভাবে কিছু কিছু জায়গায় সুতোর মতো সাদা স্তর চোখে পড়ছে।

 “এখানে আর কোনো সন্দেহই নেই যে পৃথিবীর জলবায়ু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে,” বলছেন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিনিক রসিং।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির তুলনায় এ দেশে বৃহৎ সংখ্যক হিমবাহ ও আগ্নেয়গিরির অবস্থানস্বরূপ আইসল্যান্ডবাসীর কাছে তাদের দেশ ‘ল্যান্ড অফ ফায়ার অ্যান্ড আইস’ নামে খ্যাত। তবে ইতিহাসের এই চিরাচরিত ছবিটি সত্যিই কি এবার পাল্টে যেতে চলেছে? এই আশঙ্কাতেই এখন প্রহর গুনছে বিশ্ববাসী।

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...