উত্তর অতলান্তিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত ডেনমার্কের একটি সুবৃহৎ দ্বীপ হল গ্রিনল্যান্ড। মেরু অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার ফলে সেখানে সূর্যের দেখা পাওয়া যায় দিনে মাত্র তিন ঘন্টার জন্য। ফলে শীতকাল ও শৈত্যপ্রবাহ খুব কম সময়ের জন্য হয়ে থাকে। প্রচন্ড ঠান্ডা ও সূর্যালোকবিহীন একটি পরিবেশ সারা বছরব্যাপী বিরাজমান সেখানে।
বরফের চাদরে মোড়া গ্রীনল্যান্ডের সেই বরফ ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে দেওয়া একটি তথ্য থেকে জানা গেছে, যে গতিতে এই বরফ গলতে শুরু করেছে তা বয়ে আনতে চলেছে এক ভয়ানক খারাপ খবর। জানা গেছে, গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে বেশি হিমবাহ না থাকার ফলে গলে যাওয়া বরফ এক ফাঁকা জায়গা তৈরী করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, যতটা বরফ ইতিমধ্যেই গলে গেছে তা যথেষ্ট এলার্মিং। এই হারে বরফ গলতে থাকলে নিকট ভবিষ্যতে বন্যায় সমস্ত উপকূলবর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই বরফ গলার ফলে প্রতিবছর সমুদ্রতল ০.০৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনার জন্য পরিবেশবিদরা দায়ী করছেন গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পরিবেশ উষ্ণায়নকে। তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন এইভাবে চলতে থাকলে সমুদ্রতল এখনকার থেকে ৭ মিটার উঁচুতে উঠে যাবে ফলে বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী নানা এলাকার সলিল সমাধি ঘটে যাবে।
এর আগেও পরিবেশবিদরা গ্রীনল্যান্ডের হিমবাহ গলে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ২০০৩ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বরফ গলার পরিমান প্রায় ৪গুন বেশি। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল বেভিসের কথা অনুযায়ী, গ্রীনল্যান্ডের বরফ মোটামুটি দুটি কারণে গলছে। তিনি জানান, এই বরফ গলার ঘটনা কন্ট্রোল করে নর্থ অ্যাটলান্টিক অসিলেশন, যা অতলান্তিক মহাসাগরের উপর একধরণের বায়ুমণ্ডলের চাপের এক অনিয়মিত পতন। এই চাপের দুটি ফেজ আছে। প্রথমটি হল নেগেটিভ ফেজ যখন গরম বাতাস গ্রীনল্যান্ডের দিকে বয়ে আসে এবং একটি হল, পজিটিভ ফেজ যখন ঠান্ডা আবহাওয়া গ্রিনল্যান্ডে আসে। বেভিস জানিয়েছেন, গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলার পিছনে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন খুব সামান্য প্রভাব বিস্তার করে। তিনি জানিয়েছেন, মূলত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তনের ফলেই ঘটছে এমন ঘটনা।
পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য দায়ী পারিবেশ উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং। যথাযথ পরিমান গাছ না লাগানোর ফলে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং এর ফলে হচ্ছে খরা। কখনো বা অতিবৃষ্টি এবং তার ফলে হচ্ছে প্লাবন। তাই যথাযথ পরিমানে যদি গাছ লাগানো যায় তাহলে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে এই গোটা বিশ্ব। এছাড়াও রয়েছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইলেক্ট্রনিক জিনিসের ব্যবহার তথা ইলেকট্রনিক বর্জ্য পদার্থের আধিক্য। আমাদের নিজেদের যথেষ্ট সজাগ হতে হবে, যাতে পরিবেশের প্রতিকূল কোনো রকম কাজ আমরা না করি। তাহলেই আগামীদিনের ভয়াবহতা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারব।