রাস্তায় রেফ্রিজারেটরে বেঁচে যাওয়া খাবার ‘ডোনেট’

বিচারের নিরিখে নজর রাখলে দেখা যায়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অধিকাংশ দিনই কোনও না কোনও খাবার অপচয় হয়। জন্মদিন, বিয়েবাড়ি সহ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতে প্রায়শই লক্ষ্য করা যায় বহুল পরিমাণে খাবার অপচয়ের ঘটনা। অথচ বর্তমান ভারতে ১৯৬ মিলিয়ন ক্ষুধার্ত মানুষ প্রতিদিন যৎসামান্য খাদ্যের প্রত্যাশায় জীবন অতিবাহিত করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে খাদ্য অপচয় রুখতে এবং তা যথা সময়ে ক্ষুধার্তদের কাছে পৌঁছে দিতে হায়দ্রাবাদের জিএমএইচসি (দ্য গ্রেটার হায়দ্রাবাদ মিউনিসিপাল করপোরেশন) পক্ষ থেকে একটি অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হায়দ্রাবাদের মহাবীর হাসপাতালের বিপরীতে, এয়ারপোর্ট বাস স্টপের কাছে এসি গার্ডে  রয়েছে একটি রেফ্রিজারেটর। যাতে মুদ্রিত অক্ষরে লেখা রয়েছে ফিড দ্য নিড। এই সংস্থার পক্ষ থেকে স্থাপিত এটি এগারোতম রেফ্রিজারেটর। ক্ষুধার্ত মানুষদের কাছে নির্দ্বিধায় ‘বাঁচে যাওয়া’ খাবার পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। দিনের যে কোনও সময়ে যে কোনও মানুষ এই পরিসেবা গ্রহণ করার সুযোগ পাবেন। অ্যাপেল হোমস্-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অ্যাপেল হোমস্ একটি অ-লাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যা হাঙ্গার ফ্রি হায়দ্রাবাদ নামক সতর্কতামূলক বাণী প্রচার করে থাকে।

এ বছর ৩১শে জানুয়ারি হায়দ্রাবাদের শিল্পারামাম-এর বিপরীতে রেফ্রিজারেটর বসিয়ে প্রথমবারের জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। অ্যাপেল হোমস্- এর প্রতিষ্ঠাতা  ডঃ নীলিমা আর্য এ বিষয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, “ আলাদা করে কোনো নির্দিষ্ট খাবার রাখার ব্যাপারে এখানে কোনও পূর্বশর্ত ছিল না। জলের বোতল থেকে শুরু করে কলা, বিস্কুটের প্যাকেট সহ যে কোনো ধরণের খাবার এখানে আপনারা রাখতে পারেন, যেগুলি অন্যদের সাহায্য করবে বেঁচে থাকতে। সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত আমাদের একজন স্বেচ্ছাসেবক সেখানে উপস্থিত থাকেন এবং পুরো বিষয়টির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। নিয়মিত ভাবে চলে খাবারের গুণগত মান নজরে রাখার প্রক্রিয়া। আর এখনও পর্যন্ত একটিও বাসী বা পচা খাবার আমরা খুঁজে পাইনি।“

“ একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে আমরা এই প্রকল্পটির খবর পাই। প্রকল্পটির উদ্দ্যেশ্য ও ফলাফল খুবই প্রশংসনীয়।“, বলছেন এডিপি এম ডি চয়ননাথ কে মাইসোর (mysore), যিনি ঐ প্রকল্পে ১১তম রেফ্রিজারেটরটি বসাতে সাহায্য করেছেন।

এর ফলে একাধারে যেমন খাদ্য অপচয় কমিয়ে আনা যাচ্ছে, তেমনই ক্ষুধার্তদের কাছে সঠিক সময় পৌঁছে যাচ্ছে সেইসব খাবার।

এ বিষয়ে নীলিমা আর্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আমাদের উদ্দ্যেশ্য হল দরিদ্র, বেকার, অটো ও ক্যাবচালক, যাঁরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করেন তাঁদের এবং ভ্রমণকারী পথিকদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য পৌঁছে দেওয়া। যাই হোক, এটা শুধুমাত্র তাদের জন্যই  এমনটা নয়, যে কোনও ব্যাক্তিই তাঁর প্রয়োজনে এই ফ্রিজ থেকে নিতে পারেন জলের বোতল, ফল অথবা যা কিছু দরকার।“

মূলত ইংরেজির অধ্যাপক ডঃ নীলিমা, পূর্ণ মাত্রায় অ্যাপেল হোমস্ – এর কাজে মনোনিবেশ করার জন্য, ২০১৮তে একটি সংবাদ মাধ্যমের সিইও’র পদ থেকে ইস্তফা দেন। কারণ, এটাই তিনি চেয়েছিলেন সবসময়।

সংস্থার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রথমদিকে কোনও সহায়তাই পাননি তিনি। উপরন্তু বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। বিদ্যুৎ পরিসেবা ও অন্যান্য বিষয়গুলি সহ তাঁর বস্তুগত চাহিদাগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে সাধারণ বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এগিয়ে আসে নি কোনও সাহায্যের হাত।

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে এগিয়ে আসে জিএমএইচসি। এ বছরের ১০ই জানুয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে জিএমএইচসি’র তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন গৃহীত হয়। স্থির হয় বাসবরতা (basavaratha) হাসপাতাল, ইএসআইসি হাসপাতাল ও ছন্দনগর মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চল সহ ১০০টি ভিন্ন জায়গায় এই রেফ্রিজারেটর বসানো পরিকল্পনা চলছে।  

    

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...