গাছ। ঠিক যেন প্রতিশ্রুতি। আঁচল ভরে অক্সিজেন বিলোচ্ছে আমাদের। প্রকৃতির সব বিষ শুষে নিচ্ছে। যেন ভালবাসা ছড়িয়ে যন্ত্রণা শুষে নিচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'বলাই' গল্পের কথা মনে আছে? কিশোর বলাইয়ের সঙ্গে শিমুল গাছের স্নেহের সম্পর্ক। বাড়ি ছেড়ে গেলেও ভুলতে পারে না সে গাছের কথা। গাছই যেন তার পরম আত্মীয়।
সমস্ত সম্পর্ককে ছাপিয়ে যায় একটা মানুষ আর গাছের সম্পর্ক।
বাস্তবের এমনই এক গাছ-শহর হায়দ্রাবাদ। কয়েকদিন আগেই আর্বর ডে ফাউন্ডেশন এবং ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন মিলিতভাবে হায়দ্রাবাদকে বিশ্বের অন্যতম গাছ-শহর অর্থাৎ ট্রি-সিটির আখ্যা দিয়েছে।
সারা পৃথিবীর মোট তেইশটি শহরকে এই আখ্যা দেয়া হয়েছে। ভারতে হায়দ্রাবাদই প্রথম শহর যে এই বিরল সম্মান পেয়েছে।
কী এই ট্রি সিটি? যে শহরে বনাঞ্চল সঠিকভাবে প্রতিপালন করা হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের পৃথিবীর দীর্ঘদিনের সমস্যা। সেক্ষেত্রে ভারসাম্যেরও অভাব রয়েছে। মানুষের বাসস্থান নির্দিষ্ট করতে আমরা নির্বিচারে আঘাত করি গাছেদের।
ফলে শহরাঞ্চলগুলোতে বেশ কয়েক বছর ধরেই গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। গাছ বাঁচানোকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যেই ফুড এন্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের তরফ থেকে ট্রি-সিটির মত সম্মান দেওয়ার এই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
এই বছরের জানুয়ারির ৩১ তারিখের মধ্যে হায়দ্রাবাদ পৌরসভা একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছিল। তারা কিভাবে গাছ লালন পালন করছে বিস্তারিত বলা ছিল সেখানে।
এই শহরের প্রত্যেকটি মানুষকে পাঁচটি শর্ত মানতে দেওয়া হয়েছিল। গাছকে সম্পদের মত ব্যবহার করা, তাকে সন্তানের মত লালন করা, তার ক্ষতি না করা, নিয়ম মেনে গাছের পরিচর্যা করা আর তাকে নিজের নিয়মে বেড়ে উঠতে দেওয়া কি কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে।
হায়দ্রাবাদ শহরের যে সমস্ত জায়গায় গাছ লাগানো হয়েছিল, তারা সঠিকভাবে বড় হয়েছে। ঝড়ঝাপটা সহ্য করেও তারা বেড়ে উঠতে পেরেছে মানুষের সহযোগিতায়। এক টুকরো জীবনের মত।
মানুষের স্নেহছায়ায় গাছের এইভাবে বেড়ে ওঠা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বের পরিবেশবিদদের।
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ব্যাপারে হায়দ্রাবাদ শহর এখন সমগ্র মানবজাতিকে পথ দেখাচ্ছে।