পুরনো হায়দ্রাবাদের অলি-গলিতে নবাবি খাবারের খুশবু। উৎসাহ প্রবল হয় জাফরানের গন্ধে। নিহারির মাংসের টুকরো আর হালিমের লোভনীয় টানে। টার্কিশ এবং আরবী প্রভাব সরাসরি সমৃদ্ধ করেছে হায়দ্রাবাদের নিজস্ব সিন্ধ্রি খাদ্য সংস্কৃতিকে।
যে শহরের ‘সিগনেচার’ হীরে, মুক্তো আর চারমিনার সে শহর অবশ্য অন্য মাত্রায় ধরা দেয় খাদ্য প্রেমিদের কাছে। তাদের কাছে এই শহর আদ্যন্ত খানা খাজান।
আর সেই পরিচয় এবার আরও উজ্জ্বল হল ইউনেস্কোর নবতম স্বীকৃতিতে। ইউনেস্কোর ‘মোস্ট ক্রিয়েটিভ সিটি অফ গ্যাস্ট্রোনমি’ বিভাগে সেরার শিরোপা পেল ‘নিজাম সিটি’।
বিরিয়ানির ঐতিহ্যই হায়দ্রাবাদকে ইউনেস্কোর সেরার তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে দিয়েছে। হায়দ্রাবাদের অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার এম এ ফারুক এই খবর প্রকাশ করেছেন|
এশিয়ার ৬৬ টি শহরের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হয়েছে হায়দ্রাবাদ।
ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদানের ক্ষেত্রে যে কোনও বিভাগে মনোনিত শহরে শিল্প-বাণিজ্যের দিকটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে ভারতের হায়দ্রাবাদেই সর্বাধিক মাংস বিক্রিত হয়। এই শহরের ১২ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও ভাবে বিরিয়ানিশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
ইউনেস্কোর নতুন সম্মান হায়দ্রাবাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রসার ঘটাতে সাহায্য করবে বলে আশাবাদী প্রশাসনিক এবং শিল্পমহল।
ডেক্কানের সুবেদার প্রথম আসাফ জাঁহ এর আমলে প্রথম হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির উদ্ভব হয়। মোঘলাই এবং তেলেগু বিরিয়ানির রন্ধন কৌশলের সঙ্গে অপূর্ব মিশ্রণে জন্ম হয় হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানির। প্রায় ৪৯ ধরনের বিরিয়ানির সন্ধান মেলে হায়দ্রাবাদে। তার মধ্যে ১৫ ধরনের বিরিয়ানি জনপ্রিয়তম।
খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে যারা কাজ করেন সেই সব গবেষক এবং দেশ- বিদেশের রন্ধন বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু মাত্র পদের বৈচিত্রের কারণেই যে হায়দ্রাবাদ এই সম্মান পেল তা নয়, রান্নার উপকরণ এবং রন্ধন কৌশলও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
বিরিয়ানি, হালিমের মতো পদে যে সমস্ত উপকরণ দেওয়া হয় তাতে মশলার ব্যবহার থাকলেও তা একেবারেই আঞ্চলিক বিশেষত্বকে বহন করে।
হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানিতে এমন মশলা ব্যবহার করা হয়, যা ভারতের অন্যত্র দুর্লভ ছিল একসময়।
এখানকার বিরিয়ানিতে ‘পটলি কা মশালা’র ব্যবহার একেবারেই নিজস্ব অভিজাত বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে।
চন্দনকাঠের গুঁড়ো, শুকনো গোলাপের পাপড়ি, পান পাতার শিকড়, কালপাসি’র মতো কুড়ি রকমের উপাদান একটি মসলিন কাপড়ের রুমালে বেঁধে বিরিয়ানি রান্নার সময়ে ব্যবহার করা হয়।
ইউনেস্কোর অন্যান্য বিভাগে ‘মোস্ট ক্রিয়েটিভ সিটি অফ ফিল্ম’ এর সম্মান পেয়েছে মুম্বই।