গুরুদেব সুলভ গাম্ভীর্যের আড়ালে টলটল করত শিশুসুলভ রসিক মন। মজার মানুষ। তাঁর আশেপাশের মানুষরা মাঝে মাঝেই সেই মজার মানুষের খোঁজ পেতেন। এমন কী মহাত্মা গান্ধী বা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মত নামজাদা মানুষরাও বাদ পড়তেন না।
একবার গান্ধীজি এসেছেন শান্তিনিকেতনে। উদেশ্য রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সকালবেলা দু’জনে এক সঙ্গে বসে আছেন। জলখাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে। গান্ধীজীকে ওটস। রবীন্দ্রনাথকে গরম গরম লুচি। কবিকে লুচি খেতে দেখেই গান্ধীজি বলে উঠলেন, “গুরুদেব আপনি জানেন না যে আপনি বিষ খাচ্ছেন!” শুনে রবীন্দ্রনাথ অম্লানবদনে বললেন, “ বিষই হবে। তবে এর অ্যাকশন খুব ধীরে ধীরে। গত ষাট বছর যাবৎ এই বিষ খেয়েই বেঁচে আছি।”
দোল উৎসবের দিন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। কুশল বিনিময়ের পরেই হঠাৎ দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর পকেট থেকে আবির বের করে কবির কপালে লাগিয়ে দিলেন। আচমকা আবিরে রেগে গেলেন না কবি। দ্বিজেন্দ্রলালকে বললেন, “এত দিন জানতাম দ্বিজেনবাবু হাসির গান আর নাটক লিখে সকলের মনোরঞ্জন করে থাকেন। আজ দেখছি শুধু মনোরঞ্জন নয়, দেহরঞ্জনেও দ্বিজেন্দ্রলাল একজন ওস্তাদ।”
এক সভায় রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুল দুজনেই উপস্থিত। নজরুলকে দেখে রবীন্দ্রনাথ ছন্দে ছন্দে বলে উঠলেন, “কাজী নজরুল, করিয়াছে ভুল। দাড়ি না রাখিয়া রাখিয়াছে চুল...”
নজরুলও রসিক মানুষ। কবিকে উত্তর ফিরিয়ে দিলেন, “মুখ ভরা জঙ্গল, না রাখাই মঙ্গল।”
রবীন্দ্রনাথের চোখে একবার সমস্যা হয়েছে। সময় মত ওষুধ দেবার ভার পড়েছে রানী চন্দের ওপর। রানী চন্দ চোখের ড্রপ আনতেই কবি চেয়ারের ওপর মাথা হেলাতে হেলাতে বললেন, “এসেছ তুমি আমার অশ্রুপাত করাতে। আমার চোখে জল ফেলিয়ে তুমি কী সুখ পাও বলো দেখি!”
চোখে ওষুধের ফোঁটা পড়তেই অস্থির কবি। তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে বললেন, “চমক লাগিয়ে দেয় গো, চমক লাগিয়ে দেয়...”
বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে রাণী চন্দের দিকে তাকিয়ে বললেন, “রূপে নয়, ওষুধের জ্বালায়!”