জাদু-জগতের রহস্যময় মাটি-বৃত্তান্ত

‘দুনিয়াময় টহলদারী করে বেড়াতে বেড়াতে কী আর বয়সের হিসেব রাখার সময় পেয়েছি..?’

 

প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ঘনশ্যামদা ওরফে ঘনাদার কথা। আমাদের হিসেবি জগতের বাইরে কল্পবিজ্ঞানের বাসিন্দা ইনি।

যুক্তি, বোধ আর বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে সত্যের আলো যাচাই করতেন। মানুষের কল্যাণকারী শক্তির আরাধনা করতেন।

সেই ঘনাদা যদি জানতে পারতেন জাপানের হায়াবুসা-২ মহাকাশযানের কথা?

 নিশ্চয়ই তাতে চড়ে পাড়ি দিতেন মহাকাশ নামের ওই আশ্চর্য জগতে!

কাল্পনিক নয়, বাস্তবের ঘনাদারা প্রথমবার কোন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছিলেন গ্রহাণুর উদ্দেশে। অভিযান সফল হয়েছে।

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মানবসভ্যতা এক নতুন উচ্চতা ছুঁয়েছে। এই প্রথমবার পৃথিবী থেকে কোন মহাকাশযান অ্যাস্টেরয়েড অর্থাৎ গ্রহাণু থেকে মাটি নিয়ে এসেছে।

payel-1

এখন সেই মাটি নিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কোন চমৎকার জগৎ লুকিয়ে আছে গ্রহাণুতে? গবেষকরা নিরন্তর করে চলেছেন  তারই খোঁজ।

প্রায় পাঁচ দশক আগে চাঁদের মাটি প্রথমবার পৃথিবীতে এসেছিল। তারপর আর এমন কোনও অভিযান হয়নি।

এই ঘটনার একান্ন বছর পর অ্যাস্টেরয়েডে পাড়ি দিল বিজ্ঞান।

মঙ্গল আর বৃহস্পতির মাঝখানে থাকে গ্রহাণু রিউগু। তার উদ্দেশেই 'জাপান স্পেস এজেন্সি' পাঠিয়েছিলো মহাকাশযান হায়াবুসা-২।

কয়েক মাস আগেই এই মহাকাশযান গ্রহাণু রিউগুর মাটি নিয়ে নেমেছে অস্ট্রেলিয়াতে।

নাসাও এরকম একটি পরীক্ষামূলক অভিযান করেছে যার সম্ভাব্য ফলাফল জানা যাবে ২০২৩-এর

শুরুতে।

পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ গভীর সংকটে। অপব্যবহারের ফলে ফুরিয়ে যাচ্ছে এদের উৎসদের অস্তিত্ব।

তাই দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছিলেন কোন বিকল্প খনিজসম্পদের উৎসের জন্য। তাঁরা বেছে নিয়েছেন গ্রহাণু। তাই বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা খোঁজ চালাচ্ছেন গ্রহাণুগুলোতে। বেশ কয়েকটি মহাকাশযানের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

জাপানের হায়াবুসা-২ মহাকাশযান এই বিষয়ে প্রথমবার সফল হল।

payel-2

গ্রহাণুতে উৎক্ষেপণ খুব কঠিন কাজ।  তার কারণ গ্রহাণুর ভূমিপিঠ অসমান। এবড়ো-খেবড়ো। দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থেও বেশ ছোট।

আর শুধু পৌঁছলেই হল না, সেখান থেকে মাটি নিয়ে আসতে হবে, যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। কারণ, গ্রহাণুর আশেপাশেই থাকে পাহাড়। তাতে ধাক্কা লেগে নিমেষে ভেঙে যেতে পারে মহাকাশযান। সঙ্গে ভেঙে যেতে পারে বিজ্ঞানের স্বপ্ন, সভ্যতার প্রয়োজন।

তবে এবার এমনটা হয়নি। হায়াবুসা-২ নিরাপদে তার কাজ সম্পন্ন করে মানব সভ্যতার কাছে নতুন আলোর সম্ভাবনা দেখিয়েছে।

এখন বিজ্ঞানীরা অপেক্ষায় রয়েছেন সেই আশ্চর্য জগতের, যা হয়তো লুকিয়ে রয়েছে গ্রহাণু রিউগুর মাটিতে, যেখান থেকে সভ্যতার সকল অভাব মিটতে পারে।

তেমনই এক আশ্চর্য সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় রয়েছে সমগ্র মানবসভ্যতা।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...