বেশ কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ যেমন পিছিয়ে রয়েছে, আবার বেশ কিছু ক্ষেত্রে এ রাজ্যে যে কাজ হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। রাজ্যের তরফে স্কুলে নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি বজায় রাখতে প্রচুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা আমরা প্রায় সকলেই জানি। আর তার জন্য সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের সংখ্যা বেড়েছে সেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু তবুও যেমাত্রায় অর্থের প্রয়োজন হয় স্কুলগুলিতে, তা সঠিকভাবে সময়মতো পাঠানো যায়না লালফিতের ফাঁসের গেড়োয়।
খুশির খবর, কম্পোজিট গ্রান্ট খাতে কোটি কোটি টাকা দিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতর আবার প্রমাণ করল গড়িমসি না থাকলে অনেক আগেই শিক্ষা দফতরের থেকে টাকা স্কুলগুলির হাতে পৌঁছে দেওয়া যেত। বিকাশ ভবন সূত্রে জানা গেছে, ৩১শে মার্চের মধ্যে কয়েকশো কোটি টাকার অনুমোদন হয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগনাতেই ১৩ কোটি টাকার কম্পোজিট গ্রান্ট গিয়েছে। এই খরচের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট দিতে হবে এবছর জুলাই মাসের শেষে। ওই টাকা কোনোও নির্দিষ্ট খাতে খরচ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু কোনও কর্মীর টিএ, ডিএ বা টিফিন খরচের মত বিষয়ে ব্যয় করা যাবেনা বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বংগীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সম্পাদক স্বপন মন্ডল জানান, এই গ্রান্ট স্কুলগুলিতে আসা বহুদিন ধরেই প্রয়োজন ছিল। 'শিক্ষার অধিকার' আইনের বিধিনিষেধের কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সরকারি স্কুলগুলি পড়ুয়াদের কাছ থেকে কোনো রকম বেতন নিতে পারেনা। বেতন নিলেও তা সর্বোচ্চ ২৪০ টাকার বেশি হয়না। অথচ স্কুলের বিভিন্ন খরচ তো রয়েই যায়। সেগুলির কোনও সুরাহা করা যায়না এই গ্রান্টের টাকা না পেলে। স্কুলের বিদ্যুতের বিল, স্টেশনারি খরচ সহ বেশ কিছু অতিরিক্ত খরচ থাকে তা না করলেই নয়। অনেক স্কুলই এই খরচ সামাল দিতে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের থেকে অত্যধিক ফি বা বেতন নিতে বাধ্য হয়। আবার সেখানেও রয়েছে সরকারের কড়াকড়ি। তাও সব সময় সম্ভব হয়না। তাই প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত এই গ্রান্ট স্কুলগুলিকে প্রাণ দিল বলাই যায়।
এছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে আরো বিষয়ে নজির গড়ল পশ্চিমবঙ্গ। দেশের সব রাজ্যকে টেক্কা দিয়ে কেন্দ্রীয় সমীক্ষা পোর্টাল, অল ইন্ডিয়া সার্ভে ও হায়ার এডুকেশন পোর্টালে ১০০ শতাংশ তথ্য আপলোড করার নজির গড়ল আমাদের রাজ্য। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্ট্যান্ড আলোন প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য নির্ধারিত দিনের মধ্যেই আপলোড হয়ে গিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪৫টি। কলেজ রয়েছে ১৩৮৭টি। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২৩৪টি কলেজ তথ্য আপলোড করেনি। কিন্তু সময় বাড়িয়ে দেওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানগুলোও সময়মতো সব তথ্য আপলোড করে দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় সমীক্ষা পোর্টালে ১০০ শতাংশ তথ্য আপলোড করার নজির গড়ল।