ইতিমধ্যেই দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে পুজো। শহরের রাস্তায় রাস্তায় গড়ে ওঠা প্যান্ডেল, মানুষের ভিড় সেই বার্তাই দিচ্ছে। হাতিবাগান-গড়িয়াহাট-এসপ্ল্যানেডে পুজোর বাজারের ভিড়ও সেই ছবি তুলে ধরছে। পুজোয় শহর সচল রাখা চিরকালই চ্যালেঞ্জ লালবাজারের কাছে। পুজোর দিনগুলিতে শহরের রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে প্রধানত চারটি এলাকার উপরেই বিশেষ দৃষ্টি রাখছে কলকাতা পুলিশ।
লালবাজার সূত্রে খবর, দ্বিতীয়ার দিন থেকেই রাসবিহারী অ্যাভিন্যু (কসবা-গড়িয়াহাট-দেশপ্রিয় পার্ক), চেতলা রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যু ও উল্টোডাঙ্গা এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশের একটি করে বিশেষ দল মোতায়েন থাকবে। এই চারটি রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে পারলেই শহর সচল থাকবে বলে দাবি করছে লালবাজার কর্তৃপক্ষ।
নতুন পরিকল্পনায় এই চারটি এলাকাকে আলাদা করে চিহ্নিত করে মাঠে নামতে চাইছে ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগ। উল্টোডাঙ্গার ক্ষেত্রে, ভিআইপি রোড ও লেকটাউনের ভিড় সামলাতে বিধাননগর পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখা হবে। প্রাথমিক আলোচনায় স্থির করা হয়েছে, উল্টোডাঙ্গা থেকে লেকটাউনের দিকে গাড়ি বা বাস ঢুকতে পারলেও প্যান্ডেল পরিদর্শনের জন্য যাত্রীদের সেখানে নামতে দেওয়া হবে না। তবে দমদম পার্ক থেকে বা দিকে ঘুড়ে প্যান্ডেল দর্শন করতে পারবেন তারা। বিমানবন্দর থেকে উল্টোডাঙ্গাগামী যানে আসলে কোনোভাবেই লেকটাউনে নামা যাবে না। বাস উল্টোডাঙ্গা-হাডকো দিয়ে ঘুরিয়ে ফের লেকটাউনের দিকে পাঠানো হবে। এই প্রকার পরিকল্পনা থাকলেও, চলতি সপ্তাহে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
কসবা-রাসবিহারী অ্যাভিন্যু’র ক্ষেত্রেও ভিড় সামলাবেন কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল। এস পি মুখার্জী রোড থেকে কসবা কানেক্টরের অন্তিম পর্যন্ত অন্তত ন’টি বড় মাপের পুজো হওয়ার ফলে স্বভাবতই ঐ এলাকায় ভিড় থাকে। ম্যাডক্স তো রয়েছেই, তাছাড়া গড়িয়াহাটের আশেপাশে যে সব পূজো আছে, সেগুলির ভিড়ও ঐ এলাকায় ঢুকে পড়ে। রাসবিহারী অ্যাভিন্যু দক্ষিণ কোলকাতার অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ রাস্তা হওয়ায় সেখানেও ভিড় সামলাতে প্রস্তুত থাকবে অতিরিক্ত দল।
গত বছর সবচেয়ে বেশী ভিড় হয়েছিল চেতলায়। তার উপর এ বছর বন্ধ থাকছে চেতলা লকগেট সেতু। ফলে ওই এলাকায় চূড়ান্ত যানজটের আশঙ্কা থাকছে। তাছাড়া চেতলায় এক হেভিওয়েট মন্ত্রীর পুজো থাকায় এবছর সেখানে অতিরিক্ত নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মধ্য ও উত্তর কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যু। মহম্মদ আলি পার্কের পুজোর স্থান পরিবর্তন হলেও গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি বড় মাপের পুজো হচ্ছে ঐ রাস্তায়। ফলে পাল্লা দিয়ে ভিড়ও বাড়ছে উত্তরোত্তর। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যু যানজট মুক্ত রাখতে পারলেই রাস্তা সচল রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে বলে মনে করছে পুলিশ।
গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকেই তৈরী হয়েছে এই নতুন পরিকল্পনা। গত বছর ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও যান চলাচলে পুলিশকে সবচেয়ে বেশি দুর্দশায় ফেলেছিল চেতলা সেন্ট্রাল রোড। ভিড় ও গাড়ির চাপ সামলাতে সাময়িকভাবে ঐ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। একইভাবে লেকটাউন-শ্রীভূমির পুজোর ভিড়ের ফলে কার্যত নাকাল অবস্থায় পরিণত হয়েছিল উল্টোডাঙ্গা চত্ত্বর। শহরের অন্যতম বড় রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিন্যু, ফলে ওই রাস্তা সচল রাখা জরুরী। রাসবিহারী অ্যাভিন্যু ও কসবা কানেক্টরে পূজোর ভিড় বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র দক্ষিণ কলকাতায় যানজটের সৃষ্টি হয়। চলতি মাসের গোড়ায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পান্ডে তাঁর বিভাগের এসি ও ওসিদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠক থেকেই উঠে আসে এই নতুন পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত।