বাংলার প্রাচীন সরস্বতী মন্দির গড়ে উঠেছিল হাওড়ার পঞ্চাননতলায়

হাওড়া বিশ্বকর্মার শহর। জাঁকজমক আর আড়ম্বরে নজর কাড়ে মা দুর্গা আর শক্তিময়ী কালিকা, কিন্তু শুনলে আশ্চর্য হতে হয় বাংলার অন্যতম প্রাচীন সরস্বতী মন্দিরটি গড়ে উঠেছিল হাওড়ার পঞ্চাননতলায় বঙ্কিমপার্ক সংলগ্ন উমেশচন্দ্র দাস লেনে।

প্রায় অজানা এই বাগদেবী মন্দির পঞ্চাননতলার দাস পরিবারের উদ্যোগ। বাংলা সাহিত্যের গবেষক ও পণ্ডিত অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত গ্রন্থে সেই ইতিহাসের সূত্র মেলে। তিনি উল্লেখ করেন, উমেশ চন্দ্র দাস রাজস্থানের জয়পুর থেকে শ্বেত পাথরের সরস্বতী মূর্তি এনে বাড়িতে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯২৩ সালের ২৮ জুন। উমেশচন্দ্র দাস ছিলেন হাওড়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ১৮৫৬ থেকে ১৮৮৭ পর্যন্ত আসীন ছিলেন প্রধান শিক্ষক পদে।

0af1f124-b459-47b7-8138-421e8e968b5c

সরস্বতী মন্দিরে বিগ্রহটি আনা হয় রাজস্থানের জয়পুর থেকে। তাঁর পুত্র রণেশ চন্দ্র দাস কর্মসূত্রে থাকতেন জয়পুরে। সেই সূত্রেই রাজস্থানে তৈরী প্রস্তর বিগ্রহ আসে হাওড়ায়। দেবী শ্বেতপাথরের। আয়তনে চার ফুট। হংসবাহনে দেবীর বাম হাতে বীণা। সরস্বতী পুজোর দিন তিনি সেজে ওঠেন বিশেষ সজ্জায়।

১০০ বছর ধরে পুজোর প্রথা ও রীতি রেওয়াজের কোনও পরিবর্তন হয়নি। বহু মানুষ আসেন পুজো দিতে। ১০৮টি মাটির খুরিতে বাতাসা ও ফল দিয়ে সরস্বতী পুজোর দিন পুজো করা হয় দেবীকে। সারা বছর নিত্যপুজো হলেও সরস্বতী পুজোর দিন ও জগন্নাথের স্নান যাত্রার দিন হয় বিশেষ পুজো।

উমেশচন্দ্র দাসের পূর্বপুরুষ ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা বাসিন্দা। বর্গি হানার ভয়ে হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় বসত করেন। পরে সেখান থেকে উঠে আসেন হাওড়ায়। তাঁর নামানুসারেই পঞ্চাননতলার রোডের রাস্তার নাম রাখা হয়েছে উমেশচন্দ্র দাস লেন।  

যদিও উমেশচন্দ্র দাস জীবদ্দশায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি, ১৯১৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর দশ বছর পর হয় মন্দির প্রতিষ্ঠা।  মৃত্যুর বছর দশেক পরে ১৯২৩ এর ২৮ জুন মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ মন্দির সংস্কার করা হয়।

১৯১৯ এর ২০ মার্চ মূর্তিটি জয়পুর থেকে আনার পরে বাড়িতেই তার পূজা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখনও মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়নি। 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...