ইস্টবেঙ্গলে কেমন হতে চলেছে ‘স্টিফেন জমানা’?

ইস্টবেঙ্গলে কেমন হতে চলেছে ‘স্টিফেন জমানা’?

অনেক দিন ধরে চলা জল্পনার শেষে স্টিফেন যে ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচ হতে চলেছেন, জুলাই মাসের শেষেই তা আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়। সূত্রের খবর বলছিল, চুক্তিপত্র পাঠানো হয়ছে স্টিভনের কাছে। এই বিষয়ে অবশ্য ক্লাব ও কর্তৃপক্ষ গোপনীয়তা বজায়ের চেষ্টা করেছিলেন। চুক্তিপত্র স্টিফেন সরে করে পাঠানর পরই তাঁর নাম কোচ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

ইমামির বিবৃতি অনুযায়ী, আপাতত ২০২২-২৩ মরসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে ভারতের প্রাক্তন কোচকে। ফলে আগামী আইএসএল-এ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচ স্টিফেন কনস্টানটাইন। এই প্রথম ভারতের কোনও ক্লাবে কোচিং করাচ্ছেন তিনি। তাঁর সহকারী কেরলকে সন্তোষ ট্রফি এনে দেওয়া কোচ বিনো জর্জ।

লাল-হলুদের কোচ হয়ে আসায় ভারতে তাঁর তৃতীয় ইনিংস শুরু করে দিলেন ইস্টবেঙ্গলের নতুন ব্রিটিশ কোচ স্টিফেন কনস্টানটাইন। এর আগে দু'দফায় ভারতের জাতীয় দলকে কোচিং করিয়েছেন কনস্টানটাইন। প্রথম বার কোচ হয়ে আসেন ২০০২ সালে। ২০০৫ পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। সে সময় তাঁর অধীনে ভারতীয় দল খুব একটা সাফল্যের মুখ দেখেনি। শুধু এলজি কাপ জিতেছিল তারা। ভারত ছেড়ে তিনি ইংল্যান্ডের ক্লাব মিলওয়ালের কোচ। এর পর মালাওয়ি, সুদানের মতো দেশের কোচ এবং গ্রিসের দু'একটি ক্লাবে কোচিং করান। ২০১৫ সালে ফের ভারতে প্রত্যাবর্তন।

দ্বিতীয়বার অবশ্য তাঁর কোচিং অনেক সাফল্যে ভরা। তাঁর অধীনে সাফ কাপ জেতে ভারত। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জেতে এবং এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করে। অল্পের জন্য এশিয়ান কাপের গ্রুপ পর্ব পেরোতে পারেনি ভারত। এই পর্বে অনেক বেশি তরুণ ফুটবলারদের সুযোগ দেন কনস্টানটাইন। পাশাপাশি দল অনেক আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে। ২০১৮-র ডিসেম্বরে ভারত ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশোর মধ্যে চলে আসে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় আসেন স্টিফেন। লাল-হলুদ গ্যালারির আবেগ, ভালবাসা দেখে মুগ্ধ সাহেব কোচ জানিয়ে দিলেন যে তিনি হারতে আসেননি। যদিও দল এখনও পুরো প্রস্তুত নয়। তবে শোনা যাচ্ছে ডুরান্ড কাপের আগেই বিদেশি কোটা পূরণ করা হবে। ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ নিজেই বিদেশি বেছে নিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। তাই হয়তো মরসুম শুরু হওয়ার আগে তাই বিপক্ষ দলগুলোর দিকে সাহেব কোচের হুঙ্কার, "ইউ আর নট গোয়িং টু ওয়ান্ট টু প্লে এগেইন্সট ইস্টবেঙ্গল"। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে চাইবে না কোনও প্রতিপক্ষ"।

ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে অনেক ক্লাব। সে দিক থেকে বিচার করলে ইস্টবেঙ্গলের শুরুটা হল খানিক দেরিতেই। হাতে সময় খুব বেশি নেই, বাছাবাছি করার সময়ও খুব একটা নেই। সেটা ধরা পড়ল বাস্তববাদী কোচের গলায়। শুভাশিস রায়চৌধুরী, সার্থক গোলুই-সহ প্রায় জনা তিরিশেক ফুটবলারকে নিয়ে অনুশীলনে নেমে সাহেব কোচ বলছেন, "হাতে সময় কম। বাছবিচার করার সময় বিশেষ নেই আমাদের হাতে"। সীমিত সময়ের মধ্যেই দলটাকে তৈরি করে নিতে চাইছেন হাতের তালুর মতো ভারতীয় ফুটবলকে জানা কোচ।

গত সোমবার ডুরান্ড কাপে নামা লাল হলুদ কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন প্রচন্ড সাবধানী হয়ে রয়েছেন। কারণ তিনি বুঝে গিয়েছেন ডুরান্ড কাপে কোনও প্রতিপক্ষকেই হালকা করে নেওয়ার জায়গা নেই। বাকি দুই প্রধানের তুলনায় ইমামি ইস্টবেঙ্গল দল গড়েছে অনেক দেরিতে। তবে আশার কথা, দলের ঘোষিত বিদেশি ফুটবলাররা প্রত্যেকেই শহরে চলে এসেছেন। সাইপ্রাসের কারালাম্বোস কিরিয়াকু সবার আগে আসেন। তার পর আসেন অ্যালেক্স লিমা এবং ইভান গঞ্জালেজ। রবিবার সকালে এলেন এলিয়ান্দ্রো এবং ক্লেটন সিলভা। ষষ্ঠ বিদেশি ফুটবলার হিসেবে ইস্টবেঙ্গলে আসছেন স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান মিডফিল্ডার জর্ডন লুইস ও'দোহার্তি। সোমবার ম্যাচের পর লাল-হলুদের কোচ স্টিফেন কনস্টানটাইন বলেন, ও আমাদের এশিয়ান কোটার ফুটবলার। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার ২৪ বছর বয়সের ফুটবলার মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার।

১৮৮৮ থেকে শুরু হওয়া ডুরান্ড কাপের ফলাফলে লাল হলুদ ও সবুজ মেরুন দুজনেই ১৬ বার করে ট্রফি তুলেছে। এবছরের ডুরান্ড কাপের প্রথম দুই ম্যাচে জিতেছে মহমেডান। অপ্রত্যাশিত ভাবে হেরেছে এটিকে মোহনবাগান। সোমবার ভারতীয় নৌবাহিনির বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামা ইমামি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম দলে কোনও বিদেশি ফুটবলার রাখেননি স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন। শেষ অব্দি সুযোগ নষ্টের খেসারত দিয়ে নেভির বিরুদ্ধে ড্র দিয়ে ডুরান্ড শুরু ইস্টবেঙ্গল।

৭৫ মিনিটে গোল করার সহজ সুযোগ মিস করলেন সেই সুমিত। সামনে একা গোলরক্ষককে পেয়েও গায়ে মেরে বসলেন। তবে লাল হলুদ জার্সিতে প্রথম দিন মহম্মদ রকিপের খেলা চোখে লাগল। সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন সুহের। লিমা নিজের পূর্ণ ফিটনেস ফিরে পাননি। তাকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই কারণ সবেমাত্র ভারতে এসেছেন তিনি। আশা করা যায় এরপর অন্তত দুজন বিদেশি ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে মাঠে নামলে এই দলের খেলা অনেক খুলে যাবে। তবে এটা বলতেও দ্বিধা নেই আজ দু তিনটে সুযোগের অন্তত একটি কাজে লাগাতে পারলেও পুরো তিনটি পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত ইমামি ইস্টবেঙ্গল।

২৫ তারিখ রাজস্থানের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে লাল-হলুদ। ২৮-এ ডার্বি। প্রথম ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও জিততে ব্যর্থ এটিকে মোহনবাগান। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ড্র করে পয়েন্ট তালিকায় চতুর্থ স্থানে তারা। কলকাতা ডার্বির পরিসংখ্যান দেখলে জানা যায় মোহনবাগান যেখানে ১০৩ বার ম্যাচ জিতেছে সেখানে ১০৯ বার ম্যাচ পকেটে পুড়েছে ইস্টবেঙ্গল। ২০১৪ সাল থেকে হওয়া সাম্প্রতিক ফলাফলে চোখ দিলে দুই দলের মধ্যে ২৩ টি ম্যাচ খেলা হয়েছে যেখানে, মোহনবাগান জিতেছে ১২ টি ম্যাচ এবং ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ৬ টি ম্যাচ ( ২০১৬ সিএফএল ওয়াকওভার সহ )। ৭ ম্যাচ ড্র হয়েছে।

২০১৯-এর জানুয়ারি মাসে আই-লিগের ম্যাচে শেষবার ডার্বি যেতে লাল-হলুদ। ২০২০ থেকে এখনও পর্যন্ত ছ'বার মুখোমুখি হয়েছে দুই শিবির। পাঁচ বার জয় ছিনিয়ে নিয়েছে সবুজ-মেরুন। তার মধ্যে আছে আইএসএলে খেলা চার ম্যাচও। ২০২১-এ আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান অন্তর্ভুক্ত হবার পর শেষ দুই মরসুমে ১১ দলের মধ্যে লাল-হলুদের স্থান ছিলো যথাক্রমে ৯ এবং ১১।

স্টিফেন আসার পর রবিবার হতে চলেছে প্রথম ডার্বি। অনেকগুলো প্রশ্ন এখন নতুন কোচের সামনে। ইস্টবেঙ্গল কি পারবে তাদের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে ব্যবধান বাড়াতে নাকি মোহনবাগান আরো কমাবে তাদের ব্যবধান? আই-লিগের একবারও না যেতা ইস্টবেঙ্গল আইএসএলের শেষ দুবারের ফলাফল মুছে উঠে আসবে ভারত সেরা দল হিসাবে? ডুরান্ড কাপে জিতে কি আবার সবুজ মেরুন শিবিরকে টেক্কা দেবে লাল-হলুদ? এরমধ্যে কতগুলো সফলতা আনতে পারবেন প্রাক্তন ভারত কোচ সেটাই এখন দেখার।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...