সালটা ১৯৭৬। জরুরি অবস্থা চলছে। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর ২০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দেশজুড়ে সেই কর্মসূচি সফল করতে ডাক পড়ল বলিউডের। কর্মসূচির সপক্ষে বক্তব্য রাখতে দূরদর্শন এবং আকাশবাণীতে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু রাজী হলেন না কিশোরকুমার। তিনি জানিয়ে দিলেন তিনি যাবেন না। এক জন গায়কের এ হেন স্পর্ধা মানতে নারাজ চেয়ারে আসীন ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা ভালো চোখে দেখলেন না।
জারি হল এক সরকারি নির্দেশ — আকাশবাণী বা দূরদর্শনে বাজবে না কিশোরকুমারের একটাও গান। জনপ্রিয় গায়কের গ্রামোফোন রেকর্ডের বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা।
কিচ্ছু বললেন না কিশোর। মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই আসে না। তবে একদিন রাতারাতি বদলে গেল ছবিটা। যেন ম্যাজিকেই। ফের কিশোরের গান শুনতে পেলেন শ্রোতারা। কিন্তু কীভাবে?
উত্তর জানে না কেউ। এমনকি গায়ক নিজেও বেশ ধাঁধায়। ধাঁধার উত্তর মেলাতে গিয়ে জানতে পারলেন গানের বাধা কাটাবার ম্যাজিশিয়ান আসলে রফিসাহাব। মহম্মদ রফি। তিনিই নেপথ্যে।
কিশোর কুমারের গান দিনের পর দিন বন্ধ হয়ে থাকবে এ তিনি মানতে পারেন নি। তাই নিজে ছুটে এসেছিলেন দিল্লি। দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। নিজের জন্য নয়, কিশোরের জন্য। তারপরেই সরে যায় নিষেধাজ্ঞার জাল।
এমন আকস্মিক ঘটনার কথা জানতে পেরে কিশোর কুমার দেখা করেন মহম্মদ রফির সঙ্গে। কিন্তু তিনি এ নিয়ে কারও সঙ্গে একটি কথাও বলতে মানা করেন কিশোরকে। কিশোর মেনে নেন অগ্রজের কথা। এ ঘটনা কখনও সামনে আসেনি।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসে রফি সাহেবের মৃত্যুর পর। শোক বিহ্বল কিশোর নিজেই ব্যক্ত করেন এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অজানা দিকের কথা।
কমল রাজস্থানী। উঠতি গীতিকার। রুপোলি দুনিয়ায় লড়াই করছেন পায়ের তলায় জমি খুঁজে পাওয়ার জন্য। চাকরির খুব দরকার। একবার এক প্রযোজকের কাছে গেলেন। প্রযোজক শর্ত দিলেন নিজের গান যদি মহম্মদ রফিকে দিয়ে গাওয়াতে পারেন তবেই সুযোগ মিলবে।
বোম্বাইয়ের মাটিতে উঠতি গায়ক, তার ওপর কোনও চেনাজানা নেই, রফির মত তারকা কেন তাকাবেন কমলের মতো ‘স্ট্রাগলার’-এর দিকে!
তবু একবার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কী! এই ভেবেই রফির সঙ্গে দেখা করলেন। সব বললেন তাঁকে। রফি রাজী হয়ে গেলেন গাইতে।
কমল ফিরলেন প্রযোজকের কাছে। অজানা অচেনা আনকোরা এক গীতিকারের গানে কণ্ঠ দিতে রাজি হয়েছেন রফি এ যেন এক আশ্চর্য ব্যাপার! তবে সত্যি।
গান তৈরি হয়ে যাওয়ার পর কমল দেখা করলেন রফির সঙ্গে। শিল্পীর পারিশ্রমিক যে বাকি!
এবারও চমক অপেক্ষা করছিল কমল রাজস্থানীর জন্য। মহম্মদ রফি ফিরিয়ে দিলেন টাকা। বললেন, ‘ টাকা দিয়ে কিছু ভালো জামাকাপড় আর জুতো কিনে নিতে। নাহলে কাজ মিলবে না। এটা বোম্বাই, এখানে কাজের আগেও ‘সুরত’ জরুরী’! উঠতি প্রতিভাকে তারকার পরামর্শ!