প্রতিটি শিশুই যখন প্রথম স্কুলে যায় অনেকসময় সেখান থেকেই তৈরী হয় নানারকম মিথ্যে বলার অভ্যেস। সেই অভ্যেস ছাড়ানো বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়ায় তার অভিভাবকদের কাছে। স্কুল থেকে বারবার রিপোর্ট আসতে থাকে। শিশুর মিথ্যে বলার অভ্যেসের জন্য সেই শিশুর অভিভাবকদেরও অনেকসময় সম্মানহানির শিকার হতে হয়। শিশুদের মিথ্যে বলার অভ্যেস কমানোর জন্য নানা ‘স্টেপ’ নিয়ে থাকেন তার অভিভাবকেরা। জেনে নেব কিভাবে সন্তানকে মিথ্যে বলার অভ্যেস থেকে দূরে সরিয়ে আনা সম্ভব হবে-
সব অভিভাবকদেরই খেয়াল রাখা উচিৎ শিশুদের জগৎ প্রাপ্তবয়স্কদের জগৎ থেকে অনেকটা আলাদা। শিশুদের কাছে মিথ্যে কথা বলাটা কোনো গর্হিত অপরাধই নয়। অনেকসময় শিশুরা হয়তো শাস্তির হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্যই মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে থাকে, কিন্তু সেই মিথ্যের ফলাফল কী হতে পারে, তা ভেবেই দেখেনা তারা। স্বাভাবিক ভাবেই শিশুদের মন তখনও পরিণত না হওয়ার কারণে তাদের ‘ভালো-খারাপ’ আলাদা করার মানসিকতাই থাকে না।
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, শিশুদের কখনোই কড়া শাসনের মধ্যে রাখা উচিৎ নয়। শিশুদের মন কোমল হওয়ার কারণে কড়া শাসন শিশুমনে অন্য প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুদের মিথ্যে বলার অভ্যেস আসলে তাদের ‘বিহেভিওরাল প্রবলেম’। এই ক্ষেত্রে শিশুটি কতটা ম্যাচিওর তার প্রসঙ্গ জড়িয়ে থাকে। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় কিছু না পাওয়া থেকে মিথ্যে বলার অভ্যেস তৈরী হয় শিশুদের মধ্যে। কিছুক্ষেত্রে মিথ্যে বলার অভ্যেস তৈরী হয় শিশুমনের কল্পনা থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিভাবকের শাসন থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়েই মিথ্যে বলে থাকে শিশুরা। সেক্ষেত্রে শিশুদের কড়া ভাষায় শাসন না করে তাকে ভালোভাবে বোঝান। তাকে বলুন যে মিথ্যে কথা বললে সবাই তাকে খারাপ বলবে, বা এরকম বলতে পারেন সে যদি মিথ্যে কথা বলে তাহলে আপনি কষ্ট পাবেন। এইভাবে শিশুকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। অনেকসময় বাবা মা কষ্ট পাবে শুনলে শিশুদের মনে অন্য এফেক্ট করে। তখন তারা মিথ্যে বলার অভ্যেসে পরিবর্তন আনলেও আনতে পারে।
অনেকসময় শিশুদের সামনে বড়দেরকেও কিছু মিথ্যে বলতে হয়। ভালোর জন্য যে মিথ্যে বলা হয় তাকে ‘হোয়াইট লাই’ বলা হয়ে থাকে। আপনি হয়তো ভালোর জন্যই কোনো মিথ্যে বলছেন কিন্তু আপনার সন্তান পরিণতমনস্ক না হওয়ার কারণে সে স্বাভাবিকভাবে বুঝতেই পারেনা বড়রা কেন মিথ্যে বলছে। সে হয়তো ভাবতে পারে বড়রা যখন মিথ্যে কথা বলছে তখন আমি বললেও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে শিশুকে বোঝানোর চেষ্টা করাটা বৃথা। চেষ্টা করুন এই ধরণের কথা শিশুর সামনে যত কম বলা যায়। সন্তানের সামনে নিজের আচরণ নিয়ে সতর্ক হন।
সন্তানকে প্রথম থেকেই ‘সরি’ বলার অভ্যেস করান। কোনোক্ষেত্রে যদি দেখেন সন্তান কোনো দোষ করে এসে আপনার কাছে ভুল শিকার করছে তাহলে তাকে বকার বদলে পুরস্কৃত করুন যাতে সেই শিশুটি বুঝতে শেখে যে দোষ স্বীকার করা খারাপ নয়।
মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এইসব ভুল শুধরানোর বয়স কিন্তু খুব কম সময় পর্যন্ত চলে, কারণ শিশুটি একবার কৈশোরে পা দিলে তাদের এইসব ভুল শুধরানো অভিভাবকদের পক্ষে সমস্যার হয়ে পড়ে। শিশু বয়সে মিথ্যে বলার অভ্যেস যদি আপনাকে লজ্জায় ফেলে থাকে তাহলে বড় হওয়ার পরে বলা মিথ্যে সেই মানুষটিকে স্বয়ং লজ্জায় ফেলে থাকে।