সামনেই পুজো। আর পুজো শেষ হলেই স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষা। সারাবছর ধরে ইউনিট টেস্টের চাপ থাকলেও বার্ষিক পরীক্ষার আগেই বড় ম্যাচের টেনশন আসল। পরীক্ষা যত কাছে আসতে থাকে বুক ততই ঢিপঢিপ করতে শুরু করে। সে ক্লাস ওয়ান হোক বা ক্লাস নাইন, টেনশন সবারই। কেউ কেউ আবার টেনশনে অসুস্থও হয়ে পড়ে। সন্তানের এই পরীক্ষা ভীতি নিয়ে অনেকসময়ই বেশ নাজেহাল হতে দেখা যায় তাদের অভিভাবকদের। কিভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব পরীক্ষার ভয় থেকে? চাপ মুক্ত হয়ে পরীক্ষায় বসা তা কী বাস্তবে আদৌ সম্ভব?
পরীক্ষা যত কাছে আসতে থাকে, সন্তানের সঙ্গে সঙ্গে টেনশন শুরু হয়ে যায় বাবা-মাদেরও। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, এই সময় সন্তানের সঙ্গে অভিভাবকদেরও মাথা ঠান্ডা রাখা উচিৎ। টেনশনের ফলে অনেকসময় সন্তানের মন বুঝতে অসুবিধা হয় । নিজে টেনশন না করে সেই সময় সন্তানকে বো+ঝানো উচিৎ যাতে সে টেনশন করে নিজের শরীর না খারাপ কে ফেলে। কারণ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেকসময় শিশুরা পরীক্ষার আগে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে টেনশনে ভোগে। সেসময় অভিভাবকদের উচিৎ তাদের মানসিক সান্তনা দেওয়া। কারণ অভিভাবকরাই জানে তাদের সন্তান পরীক্ষার আগে ঠিক কতটা রেডি।
এতো গেলো একদম পরীক্ষার দিন বা তার আগের দিনের কথা। কিন্তু পরীক্ষার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই যদি নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা যায় তাহলে টেনশনের পারদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
চিকিৎসকেদের মতে, অযথা উদ্বেগ প্রকাশ না করাই ভালো। বিশেষ করে সন্তানের সামনে তো একেবারেই নয়। অনেকে ছাত্র ছাত্রী আছে যারা পরীক্ষার একমাস আগে পড়তে শুরু করে, কিন্তু পরীক্ষায় বেশ ভালো রেজাল্টই করে থাকে। আপনার সন্তান যদি আগেও এরকম কম টাইমে পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে থাকে তাহলে অযথা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
অনেকসময় সন্তানের থেকে তাদের মায়ের সন্তানের পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা অনেক বেশি হয়। এর প্রভাব পড়ে সন্তানের মনের উপর।সন্তান যদি ছোট হয় তাহলে তার মনের উপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। তাই মনোবিদরা জানাচ্ছেন, অযথা উদ্বেগ যেমন মায়ের জন্য খারাপ সেরকমই সন্তানের জন্যেও খারাপ। তাই প্রথমে নিজের মনকে বোঝান তারপর সন্তানকেও বোঝান যাতে সে টেনশন না করে।
পরীক্ষার ভীতি দূর করার জন্য শুরুএই একটা রুটিন তৈরি করে নিন। স্নান খাওয়া থেকে শুরু করে কোন সাবজেক্ট কতটা সময়ে পড়বে, সব কিছুই থাকবে সেই লিস্টে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এইভাবে রুটিন ফিক্সড করে দেওয়ার ফলে সন্তানের অনেকটাই সুবিধা হয়ে থাকে। এতে সন্তান মনের জোর পায়। তবে রুটিন বানানোর সময় এটাও মনে রাখতে হবে যাতে পর্যাপ্ত ঘুমের সময় কোনোভাবে কমে না যায়। ঘুম ঠিকমতো না হলে পড়াশোনাতেও মন দিতে অসুবিধা হবে।
শুধু শিশুরাই এইসময় টেনশনে ভোগে তা কিন্তু নয়।বয়স বাড়লেও পরীক্ষার আগে টেনশনে ভাতা মোটেও পড়ে না। বরং শিশুকাল থেকে পরীক্ষার আগে ভয় পাওয়ার অভ্যেস থাকে তাহলে বড় হওয়ার পরেও সেই ভয় মনের মধ্যে থেকেই যায়।তাই সন্তান ছোট থাকার সময় থেকেই যে কোনও পরীক্ষাকে সহজভাবে নিতে শেখান।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সন্তান কিভাবে পড়বে পারলে সেই প্ল্যান আউট টাও আপনিই ঠিক করে দিন। তাকে বোঝান যে সমস্ত বিষয় ভাল করে পড়তে হবে। কিন্তু দুর্বল বিষয়গুলোতে একটু বেশি জোর দেওয়া দরকার।
পড়ার সময় আপনার ভূমিকাও সন্তানের ভয় কাটাতে অনেকটাই সাহায্য করবে। তাই পারলে সন্তানের সঙ্গে তার পরীক্ষার কোনো একটি বিষয় নিয়ে অল্প অল্প আলোচনা করুন। পারলে কুইজের মতো গেম ও খেলতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এইসময় দিনে দুই থেকে তিনটি বিষয় একদিনে পড়ার অভ্যেস করতে। বেশি বিষয় একসঙ্গে পড়তে গেলে গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এই সময় উত্তেজক পরিস্থিতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিৎ। বাড়িতে ঝগড়া বা অশান্তি হওয়ার ফলে সেই প্রভাব পরীক্ষার্থীর মনের উপর পড়ে। ফলে সে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি অস্থির হলে তার মানসিক পরিস্থিতি টলে যেতে পারে। অভিভাবকদের মানসিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে পরীক্ষার্থীর উপর। এরকম কোনো সমস্যা বাড়িতে সৃষ্টি হলে সন্তানকে বলুন পড়তে বসার আগে মেডিটেশন করে নিতে। একাগ্রতা বাড়াতে যোগাসনের কোনো তুলনা নেই।
কোনো কারণে সন্তানের পরীক্ষার ফল খারাপ হলে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে না নিয়ে সন্তানের পাশে থাকার চেষ্টা করুন। এতে সন্তানের মনের জোর বাড়বে, মত মনোবিদদের।
সন্তান যদি কখনো বলে সেই সময় তার পড়তে ভালো লাগছে না, তাহলে সেই মুহূর্তের জন্য একটু ব্রেক দিন। সে নিজেকে একটু ফ্রেশ করে নিক তারপর আবার না হয় শুরু করা যাবে ।
তবে শিশু বয়স থেকেই সন্তান ছুটি চাইলেই যদি ছুটি দিয়ে দেন তাহলে আবার বিপদ………………