এক একটি নারী যদি এক একটি ছবি হয় তাহলে তার চুল অবশ্যই সেই ছবির ফ্রেম| ফ্রেম ভালো না হলে যেমন ছবির মূল্য থাকে না তেমনই চুল যদি সুন্দর না হয় তাহলে নারীর সৌন্দর্যেও তার কিছুটা ছাপ পড়ে বৈকি|
বাঙালি নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম একটি দিক হল একঢাল কালো চুল| লাল পাড় সাদা শাড়ি, কপালে সিঁদুরের টিপ ও খোলা চুলে দেবতার আরাধনা করতে আজও দেখা যায় বাঙালি সধবা নারীদের| কিন্তু যুগ বদলাচ্ছে| লম্বা চুল রাখার থেকে বর্তমান কালের মেয়েরা চুল ছোট করে কাটাকেই বেশি সাপোর্ট করছে| বর্তমানের পারিপার্শিক দূষণ, ধুলিকণা থেকে খুব বেশি বড় চুলকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে|এছাড়াও রয়েছে বর্তমান যুগের নানা স্টাইল| কেউ চায় চুলকে সোজা করতে তো কেউ চায় কার্লি চুল| আর সেই পাল্লায় পড়েই চুলের হয় দফারফা| বাজারে প্রাপ্ত নানা কমার্শিয়াল সামগ্রী চুলের উপকার করতে ব্যর্থ হয়| উপকারের থেকে অবশ্য অপকারটাই বেশি হয়|
ছোটবেলায় একটি টাং টুইষ্টার আমরা সবাই বলতাম| সেটি হল, 'জলে চুন তাজা তেলে চুল তাজা'| কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের নারীরা একদমই চুলে তেল দেওয়া পছন্দ করে না| সপ্তাহে একদিন কোনরকমে একটু তেল দিয়ে শ্যাম্পু করে নিতে পারলেই বাঁচেন সবাই| তাই দিনের পর দিন চুল তার খাদ্য থেকে বঞ্চিত থাকে আর তার ফলাফল হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় চুলের জটকে| আর তার পরিনাম হয় একরাশ চুল ঝরে যাওয়া| চুল ছোট হোক কি বড়, চুলে জট পড়লে সমস্যায় সবাইকেই পড়তে হয়| তাই আজ আমরা কিভাবে চুলের সামান্য ক্ষতি না করেও জটমুক্ত করতে পারব, জেনে নেব তারই কিছু পদ্ধতি|
চুলে অস্বাভাবিক জট পড়লে প্রথমেই সমগ্র চুলকে বেশ কযেকটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে| চুল জটমুক্ত করার নানা সামগ্রী বাজারে পাওয়া যায় যা তৎক্ষণাৎ জট ছাড়াতে সাহায্য করে| সেরকম একটি প্রোডাক্ট হাতের কাছে সবসময় রাখা উচিত| চুল ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে নিয়ে তাতে জট ছাড়ানোর সিরাম যা বাজারে ডিট্যান্গ্লার নাম পরিচিত তা অল্প অল্প করে লাগিয়ে নিতে হবে| ধীরে ধীরে নিচের দিক থেকে জট ছাড়ানো শুরু করতে হবে| এক একটি ভাগ ছাড়ানো হয়ে গেলে তা হালকা হাতে খোঁপা করে রাখতে হবে| ছাড়ানোর সময় বেশি টানাটানি না করাই ভালো| এর ফলে চুল ঝরার আশঙ্কা থাকে|
চুলে জট পড়ে গেলে আর কিছু করার থাকেনা| ধৈর্য্য ধরে ছাড়ানো ছাড়া উপায় নেই| কিন্তু চুলে জট যদি পড়তেই না পারে তাহলে তো এত সমস্যা হওয়ারই কথা নয়| চলুন আজ আমরা জেনে নিই চুলে জট পড়া থেকে আমরা কিভাবে বাঁচতে পারি| তার জন্য কিছু স্টেপ ফলো করা উচিত| যেমন, প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর চুলে কনডিশনার ব্যবহার করা উচিত| বিশেষ করে চুলের শেষ প্রান্তে বেশি করে লাগানো উচিত কারণ এই জায়গাটিই বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে| এছাড়া প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে ও রাতে চুল আঁচড়ানো উচিত| যে সমস্ত হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টে রাসায়নিকের পরিমান বেশি থাকে তা অবিলম্বে এড়ানো উচিত| চুলকে জটমুক্ত করার জন্য দুই ধরনের চিরুনি কাছে রাখা উচিত| একটি মোটা দাঁড়ের চিরুনি ও অপরটি সরু দাঁড়ের| প্রথমে মোটা দাঁড়ের চিরুনি দিয়ে চুল ছাড়িয়ে নেওয়ার পর সরু দাঁড়ের চিরুনি ব্যবহার করা উচিত| প্রতি তিনমাস অন্তর চুলের শেষভাগ ট্রিম করে নেওয়া উচিত|
সবসময় মনে রাখা উচিত, জট তখনই পড়ে যখন চুল প্রচন্ড শুষ্ক হয়ে যায়| এমনকি চুলের শেষভাগ যদি বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে তখনও চুলে বেশি জট পড়ে থাকে| তাই চুলে তেল দেওয়া অবশ্যই উচিত| এছাড়া রাতে শুতে যাওয়ার আগে চুলে বিনুনি বেঁধে নিলে চুলের সাথে বালিশের সংঘর্ষ কম হয় ফলে চুলে জটও কম পড়ে|