কমান নার্ভাসনেস

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো অধ্যায়ের আগে নার্ভাস হওয়া প্রায় সব মানুষের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে নার্ভাস হওয়া এক ধরণের রোগ হয়ে যায়। জীবনের সব ক্ষেত্রেই যাদের নার্ভাস লাগে তারা একধরণের অ্যাঞ্জাইটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। এইসব মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমান নার্ভাসনেস লক্ষ্য করা যায়। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই নার্ভাসনেস এতটাই বেশি হয়ে যায় যে তাদের আবার প্যানিক অ্যাটাক হয়ে যায়। প্যানিক অ্যাটাক হলে হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ঘাম হওয়া এবং অকারণে কম্পন অনুভূত হতে থাকে। আমরা জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এই সমস্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। নার্ভাস আমরা সকলেই হয়ে থাকি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা তা সামলে নিতে পারি আর কিছু ক্ষেত্রে আমাদের আবার অন্যের সাহায্য লাগে।

উদ্বেগ কাটানোর জন্য এক একজন এক একধরণের পদ্ধতি ফলো করে থাকেন। প্রতি মানুষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি আলাদা হয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে নানা ধরণের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অনেকসময় টেনশন বা নার্ভাসনেস কমাতে প্রভুত সাহায্য করে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে আবার চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন নার্ভাসনেস দূর করার জন্য কিছু পদ্ধতি............... 

১) বর্তমানে বাঁচুন- অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ এই তিনটির সংমিশ্রনেই আমাদের জীবন। অতীতের কথা ভেবে আমরা কিছু ক্ষেত্রে কষ্ট পাই আবার ভবিষ্যতের কথা ভেবেও অনেকসময়ই কষ্ট পেয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমানের কথা ভাবিই না। ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে সেই ভেবে কেঁপে ওঠে আমাদের মন। যা ভেবে আমরা ভয় পাই সেই ঘটনা ভবিষ্যতে হয়তো নাও ঘটতে পারে। কিন্তু তাও আমরা এই ঘটনার কথা আগে থেকে ভেবে টেনশন করতে থাকি। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অতীত ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় না রেখে বর্তমান নিয়ে খুশি থাকা উচিত

২) প্যানিক অ্যাটাক টেম্পোরারি- যদি আপনার বারবার প্যানিক অ্যাটাক হয়ে থাকে অর্থাৎ আপনি যদি প্যানিক অ্যাটাকে অভ্যস্থ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি জানেন এই সময় ব্ল্যাক আউট হয়ে যায় অর্থাৎ চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে যায়। এছাড়াও এই সময় এমন মনে হয় যেন আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে চলেছে। কিন্তু যেহেতু এর আগেও আপনি প্যানিক অ্যাটাক সহ্য করেছেন তাই আপনি কিন্তু জানেন প্যানিক অ্যাটাক হার্মলেস হয়ে থাকে। কিছুক্ষনের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করলেও তা শরীরের উপর বিশেষ কোনো প্রভাব ফেলে না। কিছু সময়ের পরে তা নিজেই ঠিক হয়ে যায়। তাই প্যানিক অ্যাটাক হলে নার্ভাস হয়ে পড়বেন না। প্যানিক অ্যাটাক এলে মনে করবেন এটি খুবই ক্ষণস্থায়ী। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিটি মৃত্যুর ঠিক বিপরীত। মৃত্যুর সমস্যা সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ ধীরে ধীরে নিজেদের কাজ বন্ধ করে দিতে থাকে কিন্তু প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ বিশেষভাবে কাজ করা শুরু করে।

৩) যখনই মনে হবে খুব টেনশন হচ্ছে বা নার্ভাস লাগছে সেইসময় একবার শ্বাস নিন ও একবার নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এইভাবে কয়েকবার করতে থাকলেই নার্ভাসনেস অনেকটা দূর হয়ে যাবে। গভীর নিঃশ্বাস রিলাক্সেশনে সাহায্য করে থাকে। অনেকধরণের ব্রিদিং এক্সারসাইজ রয়েছে সেগুলি ট্রাই করতে পারেন। যদি সেরকম কোনো এক্সারসাইজ জানা না থাকে তাহলেও অসুবিধা নেই। শুধু শ্বাস নেওয়া এবং নিঃশ্বাস ছাড়া যাতে সমানভাবে হয় সেইদিকে খেয়াল রাখুন। সংখ্যা গুণে গুণেও এই এক্সারসাইজটি করতে পারেন।

৪) নার্ভাসনেসকে রোধ করার জন্য ফলো করুন ৩-৩-৩ রুল। এই রুলটি হলো যেই মুহূর্তে মনে হবে নার্ভাসনেস আপনাকে বশে নিয়ে ফেলছে ঠিক সময়ে ঘরের চারদিকে তাকান। প্রথম যে তিনটি জিনিস দেখতে পাবেন তার নাম করুন। এর ঠিক পরেই যে তিনটি শব্দ শুনতে পাবেন তাদের নাম করুন এবং সবশেষে শরীরের তিনটি অংশকে মুভ করান যেমন ধরুন গোড়ালি, হাতের আঙ্গুল এবং হাত। যেই মুহূর্তে মনে হবে ব্রেন অতিরিক্ত পরিমান সচল হয়ে উঠেছে সেই মুহূর্তে ব্রেনকে বশে আনার এর থেকে ভালো কৌশল আর হয় না। 

নার্ভাসনেস সবার জীবনেই কোনো না কোনো পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দাগ কেটে যেতে পারে। পরীক্ষার আগের দিন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিন নার্ভাসনেস সকলের ক্ষেত্রেই আসে। কেউ তা কন্ট্রোল করতে পারেন আর কেউ পারেন না। যারা নার্ভাসনেস কন্ট্রোল করতে পারেন না তাদের জন্য রইলো এই টিপসগুলি।    

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...