কোলেস্টেরল কমান প্রাকৃতিক ভাবে

শরীরে স্বাভাবিক নিয়মেই তৈরী হয় কোলেস্টেরল। কোলেস্টেরল হলো একধরণের ফ্যাট যা রক্তের একটি স্বল্প উপাদান হিসেবে থাকে। শরীরের স্বাভাবিক কাজের জন্য কোলেস্টেরলের উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন। আর শরীরে এই কোলেস্টেরলের যোগান দেয় লিভার বা যকৃৎ।এছাড়াও নানা ধরণের খাবার থেকেও শরীরে কোলেস্টেরল পরিমান বাড়তে পারে। কোলেস্টেরল যতক্ষণ পরিমিত পরিমানে থাকে ততক্ষন শরীর ঠিক থাকে। যেই এর পরিমানের মধ্যে তফাৎ হয় তখনই নানা সমস্যা এসে শরীরে বাসা বাঁধে। প্রথমেই চলুন জেনে নেওয়া যাক শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হতে পারে..................

 

১) শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য কোলেস্টেরলের উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু শরীরে এর পরিমান বেড়ে গেলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় তা আগেই বলা হয়েছে। কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে গেলে হার্টের সমস্যা হতে পারে। কোলেস্টেরলের পরিমান অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে গেলে এটি রক্তের মধ্যে একধরণের ফ্যাটি ডিপোজিটের সৃষ্টি করে থাকে। এই ডিপোজিট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রক্তপ্রবাহের মাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এর ফলে হার্টে সঠিক পরিমানে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এর ফলস্বরূপ হার্টের সমস্যা হতে শুরু করে। 

 

২) হাই কোলেস্টেরলের সমস্যা বংশগত কারণেও হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা বলে থাকেন, অনিয়মিত জীবনযাপন অনেকক্ষেত্রেই দায়ী কোলেস্টেরল বৃদ্ধির জন্য। বংশগতভাবে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সমস্যা হলে তার চিকিৎসা পদ্ধতি আলাদা হয়ে থাকে কিন্তু অনিয়মিত জীবনযাপনের ফলে যদি কোলেস্টেরল বেড়ে থাকে তাহলে স্বাস্থ্যকর খাবার, সঠিক ব্যায়াম এবং রেগুলার এক্সারসাইজ কোলেস্টেরলের পরিমান অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

 

৩) রক্তের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমান কোলেস্টেরলের উপস্থিতি ধীরে ধীরে আর্টারির দেওয়ালে জমা হতে থাকে। এর ফলে আর্টারির মধ্যে রক্তপ্রবাহ কমতে থাকে। এর মধ্যে যে আর্টারিগুলি রক্ত হার্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকে সেগুলির মধ্যে ক্লট তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ক্লট রক্তপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে হার্টে পৌঁছলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা তৈরী হতে পারে।

 

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তে কোলেস্টেরল সঠিক পরিমান হওয়া উচিত প্রতি ডেসিলিটার-এ ২০০ মিলিগ্রাম (এমজি/ডিএল)-এর কম।কোলেস্টেরলের পরিমান ২০০ থেকে ২৩৯ এর মধ্যে থাকলে তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় 'বর্ডারলাইন হাই' বলে ধরা হয়। ২৪০ এর উপরে রিডিং গেলে তাকে মডারেটলি হাই বলে ধরা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদেরই একমাত্র কোলেস্টেরলের সমস্যা হয় তা কিন্তু নয়। শিশু বয়সেও অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তে কোলেস্টেরলের লেভেল ১৭০ এমজি/ডিএল হওয়া উচিত। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান কমানোর জন্য ওষুধ খাওয়ার প্রচলন তো রয়েছেই। চিকিৎসকরা রোগের ট্রিটমেন্ট হিসেবে ওষুধের ব্যবহার করেই থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু প্রাকৃতিক সামগ্রী রয়েছে যা স্বভাবিক নিয়মেই রক্ত থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দিতে সাহায্য করে থাকে। যেমন-

 

১) কুল ন্যাসপাতি বা আভাকাডো- প্রতিদিন যদি একটি করে আভাকাডো খাওয়া যায় তাহলে লেডিএল-এর পরিমান কমাতে সাহায্য করে।এর ফলে প্রচুর পরিমানে মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইবার উপস্থিত থাকে। আভাকাডোর এই দুটি ধর্ম ডিএলডি আর্থাৎ লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনের পরিমান কমিয়ে রক্তে এইচডিএলের পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

 

২) রাজমা- প্রতিদিন হাফ কাপ করে রাজমা খেতে পারলে কোলেস্টেরল লেভেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। রাজমায় থাকা ফাইবার, মিনারেল এবং উদ্ভিজ্য প্রোটিন এলডিএলের পরিমান কমাতে সাহায্য করে। 

 

৩) ফ্যাটি মাছ- টুনা, স্যালমনজাতীয় মাছ কোলেস্টেরলের পরিমান কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এইসব ম্যাচে উপস্থিত থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

 

৪) ওটস এবং বার্লি- রিফাইন্ড গ্রেন শরীরের পক্ষে ভালো নয়। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়তে সাহায্য করে থাকে। তাই ময়দা দিয়ে তৈরী ব্রেড না খেয়ে সকালের প্রাতঃরাশে ওটস বা বার্লি খেলে কমে কোলেস্টেরলের পরিমান। 

 

৫) রসুন- বহুযুগ আগে থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রে রয়েছে রসুনের নাম। রসুন শরীরের যেকোনো জায়গার ইনফ্লেমেশন কমাতে সাহায্য করে থাকে।রসুন একদিকে যেমন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে সেরকম কোলেস্টেরলের লেভেল কমাতে পারে।



এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...