দুর্গা পুজো খুব একটা দূরে নেই। শপিং-ও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার মাঝেই মনখারাপ। পছন্দের টপ, ওয়ান-পিস বা শর্টসটা ইচ্ছে হলেও কেনা যাচ্ছে না। চোখ চলে যাছে পেট, কোমরের জমে থাকা মেদে। মন থেকে সরিয়ে ফেলতে হচ্ছে পছন্দের পোশাক থেকে। কিন্তু অবাঞ্চিত মেদকে তো বশে আনাই যায়। হাতে যে কটা দিন সময় আছে তার মধ্যেই। শুধু দরকার নিজেকে একটু সময় দেওয়া। কাজটা সহজ নয়। পেটের মেদকে বশে আনতে জিমে যাওয়া থেকে শুরু করে ডায়েট মেন্টেন, সবটাই চলে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু তাও যেন স্ট্রেস কমে না। অনেক সময়ের অভাবে বাধা পড়ে জিমের শিডিউলে। কিন্তু বাড়িতে বা অফিসের চেয়ারে বসেই সম্ভব মেদ কমানোর কসরত।
কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? আসুন জেনে নেওয়া যাক......
এই নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা। তারা জানাচ্ছেন, পেটের মেদকে বশে আনা সহজ কাজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের। সারাদিনের কর্মব্যস্ত দিনের মধ্যেই নানা শারীরিক কসরত চালিয়ে যেতে হয়। এর ফলে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে পেটের মেদ। এরজন্য বিশেষ কিছু ব্যায়াম এর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১) প্রথমেই শবাসনের ভঙ্গিতে শুয়ে হাত দুটি দুই দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এবার পা দুটি এক সঙ্গে জোড়া করে তাকে একসাথেই উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করতে হবে। পা দুটি উপরের দিকে তোলার সময় খেয়াল রাখতে হবে হাঁটু যেন কোনোভাবে ভাঁজ হয়ে না যায়। নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যেস থাকলে তবে পা একেবারে অনেকটা উঠে যাবে। কিন্তু শরীরচর্চা যদি একেবারেই না করা হয় তাহলে সোজা পা তুলতে সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিখুঁত ভাবে করা যায় এই ব্যায়াম। তারা জানাচ্ছেন, এই ব্যায়ামের ফলে পেটের উপরে চাপ পড়ার ফলে পেট থেকে মেদ খুব সহজেই কমতে শুরু করে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই ব্যায়াম দিনে পাঁচবার অভ্যেস করার ফলে মেদজনিত কারণে হওয়া রোগেরও অবসান ঘটে থাকে। চিকিৎসকেরা প্রতিদিন এই ব্যায়াম তিনটি সেটে প্র্যাকটিস করার পরামর্শ দিয়েছেন।
২) প্রথম ব্যায়ামটি করার পর যে ব্যায়ামটি করতে হবে সেটি হলো, সোজা হয়ে শুয়ে হাত দুটি মাথার পিছনে নিন।এরপর ধীরে ধীরে মাথা সামনের দিকে ঝোঁকানোর চেষ্টা করুন।একই সঙ্গে পা দুটি ভাঁজ করে বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন।মনে মনে ১০ পর্যন্ত গুনুন। এরপর মাথা ঝোঁকানো অবস্থাতেই পা সোজা করুন।আবার ভাঁজ করে বুকের কাছে আনুন। পা ভাঁজ করা থেকে খোলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে একটি সেট হিসেবে ধরা হয়। প্রতিদিন দুটি করে সেট অভ্যেস করলে পেটের মেদ অনেকটাই বশে আসবে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই জাতীয় ব্যায়ামের ফলেও পেটে যথেষ্ট চাপ পড়ে ফলে পেটের মেদ দ্রুত কমতে শুরু করে।
৩) পেটের মেদ ঝরানোর জন্য অনেক বেশি কার্যকরী একটি ব্যায়াম হলো প্লাঙ্ক এবং সাইড প্লাঙ্ক। প্লাঙ্কের জন্য উপুড় হয়ে শুয়ে সম্পূর্ণ শরীরের ওজন দিয়ে দিতে হবে হাতের তালু ও পায়ের পাতার উপর। এবার এইভাবেই আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। বুকের উপর বা পেটের উপর কোনোভাবে বল প্রয়োগ করা যাবে না। হাতের তালু ও পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে সম্পূর্ণ শরীরটাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে রাখতে হবে। এইভাবে পেটকে ভিতরের দিকে টেনে রাখুন কিছুক্ষন। এইভাবে থেকে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনুন। তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ব্যায়ামের সময় পেট অনেকক্ষণ ভিতরের দিকে থাকার ফলে পেটের মেদ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। প্রতি প্ল্যাঙ্ক-এ একটি করে সেট হয়। দিনে তিনটি করে সেট অভ্যেস করুন।
৪) প্ল্যাঙ্কের থেকে অনেকটাই কঠিন হলো সাইড প্ল্যাঙ্ক। কিন্তু কোমর ও পেটের মেদ ঝরানোর জন্য এর থেকে কার্যকরী উপায় আর হয় না। প্রথমেই পাশ ফিরে শুয়ে পড়ুন।এরপর একটি হাতের তালুর এবং একটি পায়ের পাতার উপরে ভর দিয়ে সম্পূর্ণ শরীরকে তোলার চেষ্টা করুন।এইভাবে এক থেকে দশ গুনুন তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।এই ব্যায়াম তিনবার করে করলে তবেই তাকে এক সেট হিসেবে ধরা হয়। প্রতিদিন তিনটি করে সেট প্র্যাকটিস করতে পারলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রাকটিস না থাকার দরুন প্রথমেই এই ব্যায়াম করতে স্বাভাবিকভাবেই সফল হওয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মত, শুরুর দিকে দুটি করে সেট অভ্যেস করা ভালো।
৫) পেটের মেদ দূর করতে আরেকটি কার্যকরী ব্যায়াম হলো লেগ কিক। এই ব্যায়ামটির সঙ্গে অনেকেই বেশ পরিচিত।এর জন্য যা করতে হবে তা হলো উপুড় হয়ে শুয়ে পা দুটিকে পিছনের দিক থেকে ভাঁজ করে কোমর পর্যন্ত আনুন। এরপর হাতদুটি পিছনের দিকে নিয়ে ভাঁজ করে থাকা পা দুটি ধরার চেষ্টা করুন। শরীরচর্চার অভ্যেস না থাকলে এই ব্যায়াম করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই ব্যায়ামের সময় খেয়াল রাখতে হয় যাতে বুক কিংবা মাথা কোনোটিই ম্যাটের সঙ্গে লেগে না থাকে। স্কুলে থাকাকালীন এই ব্যায়াম আমাদের অনেককেই করতে হয়েছে। বাংলায় ধনুরাসন হিসেবে পরিচিত এই আসনটি পেটের মেদ কমাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় গ্রহণ করে থাকে।চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পেটের মেদ কমানোর পাশাপাশি শিরদাঁড়ার সমস্যা দূর করতেও সিদ্ধহস্ত এই ব্যায়াম। এই আসন প্রতিদিন অভ্যেস করার ফলে হজমের সমস্যাও দূর হয়।
এইসব গেলো কিছু ব্যায়ামের কথা। কিন্তু কোনোদিন যদি ব্যায়াম করার সুযোগ না পান সেইদিন সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে হালকা একটি ব্যায়াম অভ্যেস করতে পারেন। ফ্রি টাইমে চেষ্টা করুন পেটকে ভিতরের দিকে টেনে রাখার। এবার নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করে আবার আগের অবস্থায় ফিরুন। পেটের পেশিতে টান পড়ার ফলে পেটের মেদ সহজেই দূরীভূত হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পেটের মেদ কমানো একটু কষ্টসাধ্য হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। এর জন্য রোজ জিমে যাওয়ারও দরকার নেই আবার খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু নিয়ম মেনে এইসব ব্যায়াম অভ্যেস করলেই দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব।