গণেশ দেবকে বলা হয় বিঘ্নহর্তা। তিনি সকলের বিঘ্ন হরণ করেন। তাই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য ভক্তগণ পার্বতীনন্দন গণেশজিকেই স্মরণ করেন। আবার সনাতন হিন্দু ধর্মে সকল দেবতার আগে গণপতি দেবের পুজো করা হয়, তাই তিনি হলেন প্রথম পূজ্য দেবতা। তাই তার পুজো না করলে কোন দেবতাই পুজো গ্রহণ করেন না। গনেশজির আরাধনা করলে সকল কাজে সফলতা পাওয়া যায়। গনেশ দেবের আশীর্বাদে সংসার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে।
২০২১ সালে ১০ সেপ্টেম্বর হলো গণেশ চতুর্থী। সিদ্ধিদাতা গণেশের জন্ম উৎসব রূপে পালিত হয় গণেশ চতুর্থী। গণেশ চতুর্থীতে সব জায়গায় দুদিন ধরে উৎসব পালন হলেও মহারাষ্ট্রে ১০ দিন ধরে গণেশ চতুর্থী পালন হয়। ১০ দিন ধরে গনেশজির আরাধনা করার পর ১১ তম দিনে গণেশমূর্তির ভাসান হয়। কথিত আছে, গণেশ চতুর্থীর দিন গণপতি দেব অল্পেই তুষ্ট হয়ে তার ভক্তদের অভিষ্ঠ ফল দান করেন। কিন্তু গণেশজিকে প্রসন্ন করবেন কীভাবে? এই গণেশ চতুর্থীর দিন কী উপায়ে গণেশজিকে সন্তুষ্ট করবেন তাই আজকে বলবো।
* গণপতিদেবকে প্রসন্ন করার উপায়ঃ
১। গণেশ চতুর্থীর দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে শুদ্ধ পোশাক পরুন।
২। গণেশজি মোদক খেতে খুব ভালোবাসেন, তাই গণেশ চতুর্থীর দিন নিজে হাতে মোদক বানিয়ে
গণপতি দেবকে নিবেদন করতে চেষ্টা করুন।
৩। গণেশ চতুর্থীর দিন “ওম গণ গণপতায় নমঃ” মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন।
৪। গণেশ চতুর্থীর আগেই যারা বাড়িতে গণেশজির মূর্তি আনছেন, তারা নির্দিষ্ট দিনের আগে অবধি নতুন কাপড়ে বিগ্রহের মুখ ঢেকে রাখুন। পুজোর দিন মূর্তি স্থাপনের আগে অবধি মুখ খুলবেন না।
৫। গণপতি দেবকে মাতৃভক্ত সন্তান বলা হয়। কথিত আছে, যারা মাকে ভালোবাসেন, তারা এমনি গণপতি দেবের কৃপা লাভ করেন। তাই গণপতিজিকে প্রসন্ন করতে চাইলে গণেশ চতুর্থীর দিন মাকে খুশী রাখবার চেষ্টা করুন। গণেশ চতুর্থীর দিন মায়ের সেবা করুন। এইদিন ভুলেও মায়ের মনে কষ্ট দেবেন না।
৬। গণেশ চতুর্থীর আগের দিন পুরো ঘর অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখবেন।
৭। গণেশ মূর্তির সামনে নারকেল ভাঙুন, এতে সমস্ত নেতিবাচক শক্তি সংসার থেকে দূরে চলে যাবে।
৮। আপনার বাড়ির গণেশ চতুর্থীর প্রসাদ যেমন নিজে ভক্তিভরে গ্রহণ করবেন তেমনি খুশিমনে এই প্রসাদ দীন-দুঃখী, অসহায় গরীব মানুষদের খেতে দিন।
৯। গণেশ চতুর্থীর দিন পারলে তিনটি অথবা পাঁচটি অথবা সাতটি বালককে মিষ্টি খাওয়ান।
১০। গণেশজির আরেক নাম বিনায়ক, তাই গণেশ চতুর্থীর দিন নিজের ব্যবহারে যেন বিনয়ের প্রকাশ ঘটে সেদিকে নজর রাখুন। এইদিন কারোর ওপর রাগ করবেন না। কারোর সাথে রূঢ় আচরণ করবেন না।
১১। গণেশ পুজোয় ভুলেও তুলসী পাতার ব্যবহার করবেন না, কারণ গণপতিদেব তুলসী মহারানীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তার পুজোয় কখনোই তুলসীপত্রের ব্যবহার হবে না।
১২। গণেশজিকে প্রসন্ন করতে এইদিন পুজোয় লাল ফুলের ব্যবহার করুন। গণেশ চতুর্থী সময় বিগ্রহের সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিনে অন্তত তিনবার গণেশজির আরতি করুন।
** এছাড়া সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করতে গণেশ চতুর্থীর দিন এই বিশেষ কাজগুলি করতে পারেন:
ক। গণেশ চতুর্থীর দিন হাতিকে সবুজ ঘাস খাওয়ালে আগামী দিনে আগত সকল সংকট কেটে যায়।
খ। গণেশ চতুর্থীর দিন ২১ টি গুড়ের টুকরো ও দুর্বা গণেশজিকে অর্পণ করলে বিয়ের পথে আগত সকল বাধা দূর হয় ও অবিবাহিতদের বিবাহের যোগের সৃষ্টি হয়।
গ। ব্যবসাক্ষেত্রে বা চাকরি ক্ষেত্রে উন্নতিলাভের আশায় গণেশ চতুর্থীর দিন হলুদ রঙের গণেশের বিগ্রহ বাড়িতে নিয়ে আসুন।
ঘ। আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে যে সকল ব্যক্তি যাচ্ছেন তারা যদি শুদ্ধ ঘি ও গুড়ের ভোগ করে গণেশজিকে নিবেদন করেন ও পরে সেই প্রসাদ গোমাতাকে খাইয়ে দেন তাহলে অর্থকষ্ট অচিরেই দূর হবে।
গণেশ চতুর্থীর দিন যা কিছুই করবেন সবটা সরল মনে করবেন, তবেই গণপতিদেব কৃপা করে সমস্যার সমাধান করে দেবেন। মনে রাখবেন গণেশজিকে প্রসন্ন করতে গেলে সবার আগে নিজেকে প্রসন্ন হতে হবে আর অপরের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অথবা অপরের অনিষ্ট কামনা করে কখনো দেবতার আরাধনা করা যায় না। তাই গণেশ চতুর্থীর দিন মনে কোনরকম নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। শুদ্ধ মনে গণেশ চতুর্থীর দিন করা যে কোনো কাজেই গণপতিদেব প্রসন্ন হন এবং ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করেন।