মস্তিষ্কের সচলতায় ডায়েট

 

শরীর আর মস্তিষ্কই হল একজন মানুষের জীবন সচল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই শরীর ও মন এই দুইকেই সুস্থ রাখা আবশ্যক। শরীরের খেয়াল রাখার জন্য আমরা সারাদিন অনেক কিছুই করে থাকি কিন্তু মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য সত্যিই কি কিছু করি আমরা? আমরা নানা প্রসাধনী ব্যবহার করে ত্বকের পর্যাপ্ত যত্ন নিই, চুলের পরিচর্যা করি কিন্তু মস্তিষ্ক যার জন্য আমরা জীবনপথে চলতে এবং নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারি তার যত্ন কি নিই আমরা? হয়তো না। কারণ ত্বক খারাপ হয়ে গেলে আমরা আয়নায় দাঁড়ালেই তা প্রত্যক্ষ করতে পারি, শরীর খারাপ হলেও নানা উপসর্গ দেখা দিতে থাকে কিন্তু মস্তিষ্ক অসুস্থ হলে কিন্তু প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গই দেখা যায় না। জীবনকে মসৃনভাবে চলমান করে রাখতে আমাদের উচিত মাইন্ড ডায়েট ফলো করা।

মাইন্ড ডায়েট কি? মাইন্ড ডায়েট হলো এমন একধরণের ডায়েট যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হওয়া মস্তিষ্কজনিত রোগকে মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখে। এটি এক বিশেষ ধরণের ডায়েট যা বিশেষ করে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপরেই ফোকাস করে থাকে। মাইন্ড ডায়েট কথাটি শুনে মনের ডায়েট মনে হলেও মাইন্ড ডায়েটের আসল অর্থ হলো, মেডিটেরেনিয়ান এবং ড্যাশ ডায়েটের একটি সংমিশ্রণ। এক্ষেত্রে মাইন্ড কথাটির অর্থ হলো, মেডিটেরেনিয়ান- ড্যাশ ইন্টারভেনশন ফর নিউরোডিজেনেরেটিভ ডিলে। এই বিশেষ প্রকৃতির ডায়েটের কাজ হলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে আসা নানা মস্তিষ্কজনিত সমস্যাকে কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া। ডিমেনশিয়া, অ্যালঝাইমার্স এর মতো রোগ প্রতিহত করার জন্যই তৈরী এই বিশেষ ডায়েট। কিন্তু কি এই ডায়েট চলুন জানা যাক।

এই ডায়েটের অন্তর্গত খাদ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো,

১) সবুজ শাকসব্জি- প্রতি সপ্তাহে মোট ৬ বার বা তার বেশি বার যদি খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক বা কলমি শাক জাতীয় কোনো শাকপাতা, স্যালাড বা সেদ্ধ করে নেওয়া কোনো সবুজ সবজি রাখা যায় তাহলে উপকার মেলে। এর সাথে সাথেই যদি স্টার্চ বিহীন সবজি সারাদিনে একবার খাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই।

 

২) বেরিজাতীয় ফল- সপ্তাহে দুইদিন খাদ্যতালিকায় ফল রাখুন। ফল বলতে বেরি জাতীয় ফল অর্থাৎ স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরি প্রভৃতি। এই বেরিজাতীয় ফলে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে তাই মস্তিষ্কের পাশাপাশি শরীরেরও প্রভূত উপকার সাধন করে এই ফল।

 

৩) বাদাম- বাদাম শরীরের জন্য কত উপকারী তা সকলেরই জানা। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে যদি যদি পাঁচবার বাদাম খাওয়া যায় তাহলে মস্তিষ্কের সঠিক যত্ন নেওয়া হয়। কিন্তু কোন ধরণের বাদাম মস্তিষ্কের পক্ষে বেশি ভালো তা অবশ্য এই ডায়েট চার্টে উল্লেখ করা নেই। সব প্রজাতির বাদামেই আলাদা আলাদা প্রোটিন থাকে তাই পুষ্টিবিদদের মত, সবরকমের বাদামই ট্রাই করা ভালো।

 

৪) অলিভ তেল- অলিভ তেলের উপকারিতা নিয়েও বলার কিছুই নেই। সকলেই কমবেশি এই ব্যাপারে অবগত। তাই চিকিৎসক থেকে শুরু করে পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, রান্নার সময়েও যদি অলিভ তেল ব্যবহার করা যায় তাহলে সেই তেলের সম্পূর্ণ উপকার পাওয়া যায়।

 

৫) মাছ- বাঙালির সাথে মাছের সম্পর্ক খুব গভীর। কিন্তু শুধু সম্পর্ক গভীর হলেই তো চলবে না জানতে হবে তার কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। শুধু বাঙালি নয় সব মানুষের উচিত সপ্তাহে একদিন অন্তত মাছ খাওয়া। কিছু কিছু মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এইসব খাবার ঠিক মতো খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলে মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে শরীরও সুস্থ থাকবে। শরীরের সচলভাবে চলার জন্য অনেকাংশে দায়ী হলো মস্তিষ্কের নানা কার্যকলাপ। তাই শরীর সুস্থ রাখার তাগিদেই যত্ন নিতে হবে মস্তিষ্কের।   

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...