আপনারে আপনি চিনি নে

আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা প্রায় সকলেই সব কিছু পেতে চাই। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমরা ক্রমেই ডুবে যেতে বসেছি ডিপ্রেশনের ঘেরাটোপে। বাড়ি-অফিস-সমাজ-বন্ধুমহল সব দিক বজায় রাখতে গিয়ে আমরা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বটুকুও ধরে রাখতে পারছিনা। সব জায়গাতেই নিজেরাই জিততে চাইছি। কারো জন্য জায়গা রাখতে বা জায়গা ছাড়তে আমরা তৈরী নই। কিছুকাল আগেও কিন্তু ঠিক এমনটা ছিলনা আমাদের জীবন। অনেকটা সহজ সরলভাবে জীবন কাটাতে পারতাম আমরা। বর্তমানের সম্পর্কগুলোও যেন জটিল ধাঁধায় আবদ্ধ। সেখানেও দায়বদ্ধতার বড়োই অভাব। আমরা আজকে একটু বিশ্লেষণ করি, কোথায় কোথায় আমাদের খামতি থেকে যাচ্ছে।

   আসলে ছোট থেকে নিজেদের চিন্তা-ভাবনা আমরা তৈরিই করতে পারছিনা। পরিবারের সকলের কথা মাথায় রাখতে গিয়ে আমরা নিজেদের অস্তিত্ব তৈরিই হতে দিচ্ছিনা। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে। নিজের জীবনের স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে যেন অন্য কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, তার জন্য নিজেকে তৈরী করতে হবে। যে কাজই আমরা করি না কেন, তাতে যেন প্যাশন থাকে। শুধুমাত্র করার জন্য কোনো কাজ না করে সেই কাজটি ভালোবেসে করতে হবে। যদি কোনো কাজে একঘেয়েমি এসে যায়, সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনটা আমার। তাই তাকে চালনা করার অধিকার শুধু আমার আছে। আর কারো নেই। যে কাজই আমরা করব, তার প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে।

    জীবনে টাকার প্রয়োজন। কিন্তু কখনোই অতিরিক্ত টাকা, টাকা করবনা আমরা, এই টাকার পেছনে ছুটে মানুষের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যাবার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের দিনে। রোজগার বাড়াবো, কিন্তু সেখানে যেন শুধুই টাকার চাহিদা না থাকে। পাশাপাশি যেন আমাদের কাজ করার উচ্চাশা থাকে। সেই কাজ করার মানসিকতাই আমাদের মনুষ্যত্ব ধরে রাখবে। কিন্তু যখনই আমরা শুধু টাকার পেছনে ছুটব, তখন যেন তেন প্রকারেণ আমার প্রতিদ্বন্দীকে হঠকারিতা করে ওপরে ওঠার মানসিকতা কাজ করবে। সেই ভাবে আমি হয়ত রোজগার বাড়াবো ঠিকই কিন্তু আমার বিবেক কে কিন্তু ফাঁকি দিতে পারবো না। ফলে কিছুকাল পরে বিবেকের দংশন হবেই। এবং সেখান থেকেই আসবে হতাশা বা ডিপ্রেশন।

    নিজের সম্পর্ককে নিয়ে কিছুতেই ছেলেখেলা করব না। যেভাবে হোক, যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে, তার কে মাথার দিব্যি দিয়েছে? যে সম্পর্কে উভয়ের দায়বদ্ধতা নেই, সেখান থেকে বেরিয়ে আসব। নিজেকে বোঝাব, আমি নিজেকে আগে ভালোবাসি, তারপর অন্য কাউকে। সম্পর্ক বজায় রাখার দায় উভয়ের। সেই দায় যদি আর একজন উপলব্ধি করতে না পারে, তাহলে আমার কোনো দায় নেই। পাশাপাশি এমন কোনো সম্পর্ক যেখানে মনের মিল রয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র ইগোর কারনে আমরা যেন নিজেদের বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ফেলি। তাহলে আবার বিবেকের দংশন একদিন হবেই হবে। তখনই  আসবে ডিপ্রেশন।

   জীবনে কোনটা ঠিক এবং কোনটা ভুল, তা নিজে যাচাই করার ক্ষমতা যেন থাকে। তার জন্য কিছুটা সময় হলেও নিজেকে সৃষ্টিশীল কাজের মধ্যে জড়িয়ে রাখুন। মানুষের সৃষ্টিই কিন্তু পারে মনকে আনন্দ দিতে। আর সেই কাজের মাধ্যমেই আপনি নিজেকে জানতে পারবেন। আমরা যেন নিজের কাছে সৎ থাকতে পারি। এমন কোনো কাজ জ্ঞানত করব না, যাতে কেউ আঘাত পায় বা কারোর কোনো ক্ষতি হয়। এভাবেই যদি আমরা চলতে পারি, তাহলে পৃথিবীর যে কেউ আমাদের দিকে আঙ্গুল তুললেও আমরা মাথা উঁচু করে জীবন কাটাতে পারব। কোনো রকম হতাশা আমাদের গ্রাস করতে পারবেনা।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...