বাংলার পঞ্চব্যঞ্জন রান্নার জন্য চাই হরেকরকম মশলা। তাই বাংলার প্রতিটি হেঁশেলেই অতিযত্নে সাজানো থাকে নানা মশলার সম্ভার। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দিনের পর দিন রান্নার এই মশলার মধ্যেই মিশিয়ে দিচ্ছেন নানা ক্ষতিকর সামগ্রী। যা খাওয়ার ফলে দিন দিন বিগড়োচ্ছে শরীর। বাজারে যেসব মশলা পাওয়া যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে মেশানো থাকে ইটের গুঁড়ো থেকে শুরু করে চকের গুঁড়ো, কাঠের গুঁড়ো, ভুসি প্রভৃতি। যার থেকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। চলুন আজ আমরা জেনে নিই, কিছু আসল মশলা চেনার উপায়।
১) দারুচিনি- বেশ কিছু ওষুধ এবং সুগন্ধি। আসল দারুচিনিতে থাকে মিষ্টি গন্ধ কিন্তু এর স্বাদ হয় ঝাঁঝালো। তাই দারুচিনি মুঠোর মধ্যে চেপে ধরে রাখুন কিছুক্ষন। তারপর হাত থেকে দারুচিনিটা রেখে হাত টা নাকের কাছে নিয়ে দেখুন দারুচিনির মিষ্টি গন্ধ পাচ্ছেন কিনা। যদি সুন্দর মিষ্টি গন্ধ পান তাহলে বুঝবেন দারুচিনিটি আসল। কিন্তু বর্তমানে, বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য গাছের ছাল নিয়ে তাতে দারুচিনির গন্ধ স্প্রে করে আসল দারুচিনি বলে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আপনার ঘরে থাকা দারুচিনি যদি নকল হয়ে থাকে তাহলে উপরোক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা করার পর আপনি হাতে খুব হালকা একটি গন্ধ পাবেন যা আসলের কাছে কিছুই নয়।
২)রান্নার অন্যতম একটি বিশেষ উপাদান হলো গরম মশলা। দারুচিনি ও এলাচের সাথে সহাবস্থানে থাকা লবঙ্গের উপর দিয়েও ঝড়ঝাপটা কম যায় না। লবঙ্গের নির্যাস দিয়ে যেহেতু অনেকরকম ওষুধ তৈরী করা যায় তাই অনেকসময় লবঙ্গ বাজারে আসার আগেই তার থেকে নির্যাস বের করে নেওয়া হয়। আপনার বাড়িতে থাকা লবঙ্গ কি আসল না নকল? কিভাবে বুঝবেন? প্রথমেই একটি লবঙ্গ হাতে দিয়ে নখের সাহায্যে চাপ দিন। যদি একটু খানি তেলও না বের হয় তাহলে বুঝতে হবে লবঙ্গ থেকে নির্যাস আগেই বের করে নেওয়া হয়েছে। আর জোর করে চাপ দিয়ে ভাঙার সময় যদি মট করে ভেঙে না যায় তাহলেও বুঝতে হবে লবঙ্গটি ভালো নয়।
৩)ছোট এবং বড় এলাচ- অনেকসময়ই এলাচের খোসা ছাড়ানোর পর দেখা যায় ভিতরের দানাগুলি শুকনো এবং খোসার সাথে একদম লেগে আছে। সেক্ষেত্রে বোঝা যায় এলাচের থেকে নির্যাস বের করে নেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো এলাচ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে দানাগুলি শুকনো লাগে কিন্তু নির্যাস বের করে নেওয়া হলে খোসার সাথেই আটকে থাকে।
৪) রান্নার কাজে গরম মশলা ছাড়া যে মশলাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তা হলো জিরে। আর এই জিরেতে ভেজালের পরিমান বেশি থাকে। রোদে শুকিয়ে এই জিরে বাজারে বিক্রি করা হয় তাই এর থেকে নির্যাস বের করে নেওয়া হয়েছে কিনা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু কয়েকটি জিরে মুখে নিয়ে চেবালে যদি ঝাঁঝালো গন্ধ ও তীব্র স্বাদ অনুভূত হয় তাহলেই বুঝবেন জিরেটি আসল।
৫) লঙ্কা গুঁড়ো- লঙ্কা গুঁড়োতে ইটের গুঁড়ো থেকে শুরু করে নানা ক্ষতিকর দ্রব্যাদি মিশ্রিত থাকে। আর ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত এই লঙ্কাগুঁড়ো খাবারের সাথে পেটে গেলে তৈরী হয় নানা শারীরিক সমস্যা। বাড়িতে থাকা লঙ্কার গুঁড়ো যদি ভেজা ভেজা প্রকৃতির হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সেই লঙ্কার গুঁড়ো আসলে ভেজালে পূর্ণ। আসল লংকার গুঁড়ো শুকনো ঝরঝরে হয়ে থাকে।
তাহলে আমরা সবাই আজ ভেজাল মশলা চেনার উপায় সম্পর্কে জানলাম। এরপর এই পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজেই ভেজাল ওষুধ চিহ্নিত করে নিতে পারবেন। তাই আসল মশলাযুক্ত খাবার খান আর সুস্থ থাকুন।