সন্তান জন্মের পরে তার মুখ থেকে মা-বাবা ডাক শোনার জন্য মুখিয়ে থাকেন ছোট্ট শিশুটির মা ও বাবা। কিন্তু দিনের পর দিন চলে গেলেও সেই শিশু যখন 'মা' বলে ডেকে গলা জড়িয়ে ধরে না তখন স্বাভাবিকভাবেই মায়ের কপালে পড়ে চিন্তার ভাঁজ। চিকিৎসকের কাছে পৌঁছলে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর হয়তো জানা যায় শিশুটি অটিজম নামক একটি রোগে আক্রান্ত। অটিজম বা 'অটিজম স্পেকট্রাম ডিজিজ' হলো এমন একধরণের রোগ যেখানে সামাজিক কথোপকথন, ভাব বিনিময় সবটাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই রোগটির আবার নানা ভাগ রয়েছে। বিভিন্ন টাইপের অটিজম রোগ আজ সারা বিশ্বে তার শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এই রোগটি অনেকসময় বংশগত কারণে হয়ে থাকে আবার অনেকসময় পরিবেশগত কারণেও হয়ে থাকে। কিন্তু এই রোগ যখন কোনো শিশুকে আক্রমণ করে সেই শিশু অন্য পাঁচটি শিশুর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি শিশু হয়ে বেড়ে ওঠে। আশেপাশের মানুষজনের সাথে তার তেমন সখ্যতাপূর্ণ সম্পর্কও থাকে না। নিজের মতো একটি জগৎ তৈরী করে নিতে ভালোবাসে এই শিশুরা।
অনেকসময় দেরিতে কথা বলা বাচ্চাদের তাদের বাবা মা নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে। গেলে দেখা যায়, শিশুটি হয়তো অন্য কোনো কারণে কথা বলতে পারছে না। কিন্তু অটিজম এমন একটি খারাপ রোগ যাকে সব বাবা মায়েরাই ভয় পান এবং সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তার কারণে অল্প কিছু হলেই চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। আপনার সন্তান কি এই রোগে আক্রান্ত? বুঝতে পারছেন না? চলুন আজ আমরা আপনাকে সাহায্য করবো প্রাথমিকভাবে কিভাবে অটিস্টিক শিশু চিনবেন সেই উপায়।
কিছু শিশু এই রোগের নানারকম লক্ষণ খুব অল্প বয়স থেকে দেখতে শুরু করে যেমন, সরাসরি চোখের দিকে না তাকানো, নাম ধরে ডাকলে কোনোরকম অভিব্যক্তি প্রকাশ না করা প্রভৃতি। কিছু ক্ষেত্রে আবার শিশুটি হয়তো স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়ে উঠলো কিন্তু হঠাৎ সে তার আগের শেখা কিছু জিনিস ভুলতে শুরু করলো। না পড়াশোনার কথা বলা হচ্ছে না। যেমন ধরুন, তার নিজের নাম, তার বাবা মায়ের নাম এইসমস্ত সাধারণ জিনিস ও কিন্তু ভুলে যেতে শুরু করে। মোটামুটি ২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ পুরোপুরি প্রকাশ পায়। প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার এক একটি আলাদা এবং ইউনিক বিহেভিয়ার থাকে। এই রোগে আক্রান্ত কিছু বাচ্চা যেমন কিছু শেখার ক্ষেত্রে অসুবিধা অনুভব করে সেরকমই কিছু বাচ্চা আবার খুবই বুদ্ধিমান হয়। তাহলে বুঝবেন কিভাবে আপনার আদরের সন্তান এই রোগে আক্রান্ত কিনা?
এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের যেসব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলো হল-
১) নিজের নাম ঠিক মতো না শোনা বা শুনলেও তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো জবাব না দেওয়া,
২) অতিরিক্ত আদর বা জড়িয়ে ধরা তারা কোনোভাবে মেনে নিতে পারে না,
৩) নিজের একটি আলাদা জগৎ তৈরী করে নেওয়া, সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা না বলা প্রভৃতি,
৪) যেকোনো একটি জিনিষকে বারবার করা অর্থাৎ বারবার লাফানো, একটি কথাকে বারবার রিপিট করা,
৫) অযথা কামড়ানো বা মাথা ঠোকা,
৬) স্পেসিফিক রুটিন তৈরী করে নেওয়া, সবসময় ডিস্টার্ব থাকা প্রভৃতি।
এইসব লক্ষণগুলি মোটামুটি সব অটিস্টিক বাচ্চাই প্রকাশ করে থাকে। যেসব বাচ্চাদের ২ বছরের আগে ঠিক মতো ডেভেলপমেন্ট হয় না বা যেসব বাচ্চা ৬ মাস বয়সের পরেও হাসে না, ৯ মাস হয়ে যাওয়ার পরেও কোনো শব্দের অনুকরণ করে না এবং ২ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও দুই শব্দের কথা উচ্চারণ করতে পারে না তারা সত্যিই অটিজম স্পেকট্রাম ডিজিজে আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়।