ব্যালকনি বা ছাদবাগানে ফোটান অপরূপ জারবেরা ফুল

জারবেরা অসাধারণ সুন্দর একটি ফুল। নানান রঙের ভ্যারাইটি রয়েছে এই ফুলের। এর অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে অন্য কারও তুলনাই হয় না। গাছে যখন এই ফুল থাকে তখন সে যেমন সমস্ত বাগান আলো করে রাখে, তেমনি এই ফুল গোছাভরে ফুলদানিতে রাখলে পুরো ঘর যেন একেবারে আলোকময় হয়ে ওঠে। সেজন্যই বাজারে এই ফুলের দামও খুব। সাধের ব্যালকনি বা ছাদবাগান সাজাতে তাই এই ফুলের চাষ সব শখের বাগানিই করতে চান। শীতের রোদ পাঁচ থেকে ছ’ঘন্টা যদি আপনার ছাদ বা ব্যালকনিবাগানে আসে, তাহলে এই ফুলের চাষ আপনি অনায়াসেই করতে পারেন। এ-ফুল শীতের নরম রোদ খুব ভালোবাসে।

জারবেরা শীতের ফুল হলেও গ্রীষ্ম-শুরুর সময় অব্দি শেডে রেখে এই গাছ থেকে ফুল পাওয়া যায়। কোন কোন ভ্যারাইটি শীতের পর পুরোপুরি কখনই ফুল দেওয়া বন্ধ করে না। সব ঋতুতেই অল্প অল্প ফুল দেয়। অবশ্য এ-সময় ফুলের আকার ছোট ছোট হয়। সব থেকে বড় কথা, এই গাছ একবার ফুল দিয়েই মরে যায় না। শীতের চন্দ্রমল্লিকার মতো গ্রীষ্ম ও বর্ষায় শেডে রেখে যত্ন করলে এই গাছও বেশ কয়েক বছর বাঁচে, ফি শীতে ফুলে ভরিয়ে দেয়।

জারবেরা দু’ভাবে চাষ করা যায়ঃ এক, বীজের চারা দিয়ে; দুই, গাছের পাশ থেকে ওঠা চারা দিয়ে। বীজের চারায় সবসময় মাদারপ্ল্যান্টের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। জারবেরার একটা ভালো দিক হল, একটা গাছের পাশ থেকে নতুন নতুন গাছ তৈরি হয়ে ঝাড় কাটে রজনীগন্ধার মতো। এই ঝাড়ের গাছ আলাদা করে রোপণ করলেই সেটি আলাদা একটি গাছ হয়ে যায়। সহজে আপনি একটা গাছ থেকেই এভাবে অনেকগুলো জারবেরা গাছের মালিক হতে পারবেন। সব চেয়ে বড় কথা, এভাবে তৈরি হওয়া গাছে মাদার-প্ল্যান্টের সব বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে।

 

Gerbera1

 

সারা পৃথিবীতে জারবেরার প্রায় চল্লিশ রকমের প্রজাতি রয়েছে। তবে এই প্রজাতিগুলোকে দুটি সিম্পল ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন আমাদের এখানকার নার্সারিওয়ালারা। তা হলঃ দিশি জারবেরা ও হাইব্রিড জারবেরা। দিশিগুলোর স্টিক ছোট, ফুল ছোট, কিন্তু পাঁপড়ি বেশি। হাইব্রিড জাতের জারবেরার স্টিক লম্বা, ফুল বড়, দিশির তুলনায় তাতে পাঁপড়ি কম, কিন্তু ফুলগুলো থাকে অনেকদিন। দিশি খুব সাধারণভাবে চাষ করলেই হল, ফুল দেবে। চারা বসিয়ে দিলেই মাটি ধরে নেয় তাড়াতাড়ি। কিন্তু হাইব্রিডের সামান্য বায়নাক্কা আছে। খাবারের দিকে একটু নজর দিতে হয় আর যত্নআত্তিও খানিক করতে হয়। তবেই সে আনন্দে ফুল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার উৎসাহ পায়। এবার আপনার যেটা পছন্দ, তেমন চারা এনে এখনই আপনার সাধের ছাদ বা ব্যালকনি বাগানে লাগিয়ে ফেলুন।

জারবেরার শেকড় খুব গভীরে যায় না, কিন্তু গাছটি ঝাড় কাটে। চারা তাই ছয় বা আট ইঞ্চির টবেই লাগানো ভালো। বেশি ঝাড় হলে এবং ঝাড়ের সমস্ত গাছে ফুল ফুটলে বেশ বোকের মতো সুন্দর লাগে।

বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ ঝুরঝুরে হলে সেটা জারবেরা গাছ খুব পছন্দ করে। তাই এঁটেল মাটি দেড় ভাগ, মোটা বালি দেড় ভাগ নিয়ে তার সঙ্গে মেশান পাতাপচা সার বা ভার্মি কম্পোস্ট এক ভাগ; তিনটে উপাদান খুব ভালোভাবে ঝুরঝরে করে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে জারবেরার পছন্দের মাটি। আসলে, জারবেরা জৈবসারের মধ্যে কম্পোস্ট বা পাতাপচা সার সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে। এগুলো না-পেলে কমপক্ষে এক বছরের পুরনো গোবর সার ব্যবহার নির্দ্বিধায় করা যাবে।

তৈরি করা মাটি জলনিকাশি ব্যবস্থা ঠিক রেখে টবের আশিভাগ ভর্তি করে ফেলুন। তারপর মধ্যিখানে ছোট্ট গর্ত করে তাতে এক চুটকি ছত্রাকনাশক দিয়ে চারাটি বসিয়ে দিন। তারপর ভালো করে জল দিয়ে চারাশুদ্ধ টব তিনদিন শেডে রেখে দিন। চতুর্থ দিন থেকে মুক্তস্থানে তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিন।

জারবেরা গাছ ছত্রাকজনিত সমস্যায় খুব ভোগে। তাই চারা রোপণের সময় যেমন ছত্রাকনাশক মাটিতে দিতে হয়, তেমনি দশদিন অন্তর নিয়ম করে ছত্রাকনাশক জলে গুলে টবের মাটি ও গাছে স্প্রে করতে হবে। এই গাছ যেমন শীতের রোদ ভালোবাসে, তেমনি জলও ভালোবাসে খুব। কিন্তু জলের ওপর জল নিত্যদিন দেওয়া যাবে না। ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য এই সতর্কতা খুবই জরুরি। মাটি শুকিয়ে এলে তবেই জল দেবেন। যখন জল দেবেন যথেষ্ট পরিমাণে দেবেন।

 

Gerbera2

 

জারবেরার খাবার দেওয়ার কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। নানাভাবে একে খাবার দেওয়া যায়। কয়েকটা পদ্ধতি আপনাকে বলছি, তার মধ্যে যেটা আপনার পছন্দ সেটা অ্যাপ্লাই করতে পারেনঃ

এক, সপ্তাহে একবার করে খোলপচা জল দিন পাতলা করে। পনেরো দিন অন্তর টব প্রতি গাছের গোড়া থেকে দূরে ছয় থেকে সাত দানা ডিএপি দিয়ে যাবেন। মাসে একবার টব প্রতি মুঠো দুই জৈব সার দেবেন।

দুই, সপ্তাহে একবার খোলপচা জল দেবেন পাতলা করে। সমপরিমাণ হাড়গুঁড়ো, শিংকুচি, নিমখোল ও ভার্মি কম্পোস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতি পনেরো দিন অন্তর টব প্রতি এক চামচ করে দিয়ে যাবেন।

তিন, পনেরো দিন অন্তর অলটার করে রেডিমেড দশঃছাব্বিশঃছাব্বিশ এক চা-চামচ ও ডিএপি ছ’সাত দানা প্রতি টবে দিতে হবে গোড়া থেকে দূরে।

চার, একেবারে বিকেলে আধ চা-চামচ তেরোঃশূন্য শূন্যঃপঁয়তাল্লিশ এনপিকে জলে গুলে পনেরো দিন অন্তর গাছে স্প্রে করতে হবে।

পাঁচ, সপ্তাহে একবার করে এনপিকে সার তেরোঃশূন্য শূন্যঃপঁয়তাল্লিশ ও কুড়ি দিন অন্তর কুড়িঃকুড়িঃকুড়ি আধ চা-চামচ এক লিটার জলে গুলে স্প্রে করবেন বিকেলে।

ছাদ বা ব্যালকনি বাগানে তেমন পোকার উৎপাত না-হলেও বেশ মাকড়ের উৎপাত হয়। এদের রুখতে দশদিন অন্তর মাকড়নাশক স্প্রে করবেন। বাজারে অনেক রকমের মাকড়নাশক পাওয়া যায়। তার মধ্যে কোন একটা ব্যবহার করলেই হবে।

ব্যস, এভাবেই জারবেরার চাষ করতে থাকুন, আর আপনার সাধের বাগান ভরিয়ে তুলুন তার অপরূপ সৌন্দর্যে, এ বারই, এই শীতে…

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...