লো ব্লাড প্রেসার

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নাম হলো হাইপোটেনশন। শুনেই মনে কিরকম অদ্ভুত এক শান্তি আসে। মনে হয় হয়তো তার জীবনে কোনো টেনশনই নেই। শুধু আনন্দ আর আনন্দ। কিন্তু সত্যিই কি তাই? হাইপোটেনশনের চলতি নাম যেই জানা যায় তখনই এই চিন্তাধারায় আমূল পরিবর্তন এসে যায়। উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় হাইপার টেনশন। সেই সূত্রেই লো ব্লাড প্রেসারকে বলা হয় হাইপো টেনশন। হৃদয়ের দুর্বলতার কারণেই সাধারণত রক্তচাপের ওঠানামা হতে থাকে।

ব্লাড প্রেসারের পরিবর্তনের পিছনে নানা কারণ থাকে। কখনো বা কোনো কারণই থাকে না। মূলত যেইসব কারণে রক্তচাপের ওঠানামা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো,

১) বিশেষ কোনো রোগ থেকে রক্তচাপের হেরফের হতে পারে।

২) খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম থেকে রক্তচাপের পরিবর্তন ঘটতে পারে।

৩) হার্টের প্রব্লেম থাকলে প্রেসারের হেরফের সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ঘটতে থাকে। এই ক্ষেত্রে বারবার প্রেসারের মাপের পরিবর্তন ঘটতে থাকে।

৪) ডিহাইড্রেশন, প্রেগন্যান্সি, সিভিয়ার ইনফেকশন, কোনো ইনজুরি থেকে রক্তচাপের তারতম্য ঘটে থাকে।

৫) কোনো কারণে শরীর থেকে অধিক রক্তপাত ঘটলে তার রক্তচাপের হঠাৎ পতন ঘটতে পারে।

কি কি লক্ষণ দেখে লো ব্লাড প্রেসার চিহ্নিত করা যায় ?

শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরা দিয়ে যখন পর্যাপ্ত পরিমান রক্তের পরিবহন হয় না সেই সময় সেই ব্যক্তির প্রেসার লো বলা হয়।

লো ব্লাড প্রেসারের ধরণ অনুযায়ী একে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। অবস্থার উপর নির্ভর করে লো ব্লাড প্রেসারের লক্ষণগুলি হলো,

১) অর্থস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন- বসে থাকা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর যদি হঠাৎ করে মাথা ঘুরে যায় এবং চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করে, তাহলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় সেই মানুষ অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনে ভুগছেন।

২) পোস্টপ্রন্ডিয়াল হাইপোটেনশন- খাবার খেয়ে ওঠার পর যদি মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা এইসব সমস্যা দেখা যায় এবং এরপর প্রেসার মাপলে যদি দেখা যায় সেই মানুষ লো ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসারের এই পতনকে পোস্টপ্রন্ডিয়াল হাইপোটেনশন বলা হয়ে থাকে।

৩) নিউরালি মেডিয়েটেড হাইপোটেনশন- বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ফলে যদি চোখে অন্ধকার দেখেন সেই ক্ষেত্রে প্রেসার পরীক্ষায় নির্ঘাত প্রেসারের পতন পরিলক্ষিত হয়। এই অবস্থাকে  নিউরালি মেডিয়েটেড হাইপোটেনশন বলা হয়। এই অবস্থা সাধারণত ইয়ং অ্যাডাল্ট এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

৪) মাল্টিপল সিস্টেম এট্রোফি উইথ অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন- এই বিভাগটিকে বলা হয় সাই-ডেঞ্জার সিনড্রোম। এই ধরণের সমস্যার ফলে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।

লো ব্লাড প্রেসারের ট্রিটমেন্ট-

অনেক মানুষের ক্ষেত্রে বাড়িতে বসে কয়েকদিন ভালোমন্দ খাওয়া দাওয়া করলে এই সমস্যার থেকে মুক্তি মিলতে পারে। জীবন যাত্রায় পরিবর্তন লো ব্লাড প্রেসারকে সবথেকে তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে পারে। এছাড়াও উপশম হিসেবে যেসব স্টেপ ফল করা যেতে পারে তা হলো,

১) খাবারে নুনের পরিমান সামান্য বৃদ্ধি করা।

২) সারাদিনে প্রচুর পরিমানে অ্যালকোহোলবিহীন তরল পান করা উচিত।

৩) অ্যালকোহোল পান করা একদমই বন্ধ করে দিন।

৪) ভালো ব্লাড ফ্লো এর জন্য রেগুলার এক্সারসাইজ করুন।

৫) শুয়ে থাকা থেকে উঠেই সঙ্গে সঙ্গে হাঁটবেন না। খাটেই কিছুক্ষন বসে তারপর খাট থেকে নামুন।

৬) বিছানায় শোওয়ার সময় মাথা শরীরের থেকে উপরে রাখুন। সেই মতো মাথার নিচে দুটি বালিশ নিয়ে নিন।

৭) বেশি ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকুন।

৮) একই জায়গায় অধিক সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না। আশেপাশে হেঁটে আসুন বা অল্প সময়ের জন্য কোথাও বসে পড়ুন।

৯) খাওয়ার পরে মাথা ঘোরার সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অল্প অল্প করে খাবার বারবার খাওয়ার অভ্যেস করুন। একেবারে খালি পেটে খেতে যাবেন না।

১০) অতিরিক্ত গরম জলের কাছে বেশিক্ষন বসে থাকবেন না। বাথটবে স্নান করার সময় বা শীতকালে গরম জলে স্নান করার সময় জল যতক্ষণ না হালকা ঠান্ডা হচ্ছে ততক্ষন সেই জল ঠান্ডা করুন।

হাই ব্লাড প্রেসারের রোগীরা মনে করেন লো ব্লাড প্রেসার হওয়া ভালো। কিন্তু লো ব্লাড প্রেসারের কত সমস্যা তা এই সমস্যার সম্মুখীন যারা হয়েছেন তারাই বুঝতে পারেন। লো ব্লাড প্রেসারের কারণে কখনো যদি প্রাত্যহিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...