কথায় আছে ‘পহেলে দর্শনধারী, ফির গুণবিচারী’। মানে চোখের দেখায় ভালো লাগলে, তবেই গুণ বিচার করার প্রশ্ন। কিন্তু কখনও কখনও অন্য রকমও হয়।
যেমন এই লইট্ট্যামাছ। মাছের বাজারে জল সাদা মাছটিকে দেখে অনেকেই পাশ কাটিয়ে চলে যান। কিন্তু স্বাদে আর গুণে যে কোনও ‘এলিট’ মাছকে পাল্লা দিতে পারে লইট্টা। আদরের নাম ‘বম্বে ডাক’। ব্রিটিশদের দেওয়া। ইংরেজ রাজত্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লইট্ট্যাশুটকি মালগাড়ি করে বোম্বাই শহরে আসত।
বৃটিশরা এই লইট্ট্যাশুটকির চালানকে বলতো ‘মেইল’ বা ‘ডাক’। সেই থেকে ‘বোম্বে ডাক’। অনেকে আবার ‘নিহারী’ মাছ বলেও ডাকে। দামে সস্তা লইট্ট্যামাছ হাড় ও চোখের জন্য খুবই উপকারী। লইট্ট্যামাছ আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্যে খুবই উপকারি। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। রক্ত অল্পতার রোগীদের পথ্য। এমনকি এই মাছের তেল এক ব্যথা নাশক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তবে লইট্ট্যামাছের স্বাদের সঙ্গে কোনও কিছুরই তুলনা হয়না।ওপার বাংলা- এপার বাংলা সর্বত্রই লইট্ট্যা মানে আলাদা নস্টালজিয়া!
গরম ভাতের সঙ্গে শেষ আঁচে রান্না করা লইট্টা- মানে রসনায় স্বর্গ সুখ!
আজ শিখে নিন লইট্ট্যামাছের রসা।
উপকরণ
১. লইট্ট্যা মাছ
২. পেঁয়াজ
৩. টম্যাটো
৪. ধনেপাতা
৫. কাঁচালঙ্কা
৬.কালো জিরে
৭. লঙ্কাগুঁড়ো
৮. হলুদগুঁড়ো
৯. নুন
১০. সরষের তেল
কীভাবে করবেন?
এই মাছে প্রচুর জল থাকে। তাই রান্নার বেশ খানিকটা আগে থেকেই মাছ ধুয়ে জল ঝরতে দিন। জল ঝরে গেলে নুন-হলুদ-লঙ্কাগুঁড়ো মাখিয়ে রাখুন। রান্না ঝাল-ঝাল হয়। কাঁচালঙ্কাও পড়ে। তাই লঙ্কাগুঁড়ো বুঝে ব্যবহার করবেন। সরষের তেল দেবেন ২ চামচের মতো।
এই রান্নায় তেল লাগে বেশ। কড়া গরম হলে তেল দিন, সঙ্গে কালো জিরে ফোড়ন। ফোড়ন রেডি হয়ে গেলে পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ নরম হতে শুরু করলে টমেটো আর কাঁচালঙ্কা। টমেটো গলতে শুরু করলে মাছ দিন কড়াইতে। উপর থেকে ধনেপাতা ছড়িয়ে কড়াই ঢেকে দিন। ওভেনের আঁচ একেবারে স্লো। গোটা রান্নাটাই হবে ঢিমে আঁচে। এই মাছ কড়াইতে দেওয়ার পরেই জল বের হয়। জল শুকতে সময় লাগে। আঁচ জোর থাকলে ধরে যাওয়ার চান্স থাকে। মাঝে মাঝে খেয়াল রাখবেন। খুব বেশি খুন্তি-চামচ দেওয়ার দরকার পড়ে না রান্নায়।জল পুরোটাই শুকনো হবে।
নরম হয়ে মাছ আলগা হতে শুরু করলে আর ধনেপাতা ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। লইট্ট্যা মাছের রসা ভাতের সঙ্গেই সবচেয়ে ভাল লাগে। রান্না করতে সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতো।