৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সকে জীবনের অন্যতম একটি 'ট্রান্সিশন' সময় বলে ধরা হয়। এই সময় মানুষ জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে চলে আসেন।এই সময় এলে অনেক মানুষের ক্ষেত্রেই দেখা যায় জীবন থেকে কৌতূহল বা উন্মাদনা কমে যেতে শুরু করে। সাংসারিক কাজ থেকেও ধীরে ধীরে বিমুখ হতে শুরু করেন এই ব্যক্তি। একদিকে বয়সের ভার, অন্যদিকে মৃত্যুর আগমনী বার্তা সেই মানুষকে ধীরে ধীরে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে তোলে। এই বিশেষ সময়টিকেই বলা হয় মিড লাইফ ক্রাইসিস। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এই বিশেষ সময়টির মুখোমুখি হয়ে থাকেন যখন তাদের বলতে শোনা যায়, "এই তো আর কদিন আছি"..............
জীবনের ফেলে আসা দিনগুলির স্মৃতি, কিছু চাওয়া কিছু পাওয়া এইসময় ভিড় করে আসে ৪০ এর কোঠা পেরোনো সেই এই ব্যক্তির মনে। জীবনের বিশেষ কিছু না পাওয়া স্মৃতিও এই সময়েই আবারও মনকে উদ্বেল করে তোলে। এইসময় এই জাতীয় মানসিক পরিস্থিতি মানুষকে ডিপ্রেশনে পাঠিয়ে দিতে পারে। আমাদের সকলের বাড়িতেই বাবা মা রয়েছেন যারা এই মুহূর্তে এই ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।তাদেরকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনার জন্য আমরা অনেক সময় অনেক চেষ্টাই করে থাকি কিন্তু সবক্ষেত্রে আমরা সফল হতে পারি না। দিনের শেষে কোথাও না কোথাও সেই একাই হয়ে যান আমাদের বাবামায়েরা। দুশ্চিন্তার চাপে পড়ে ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে ব্লাড প্রেসার ও ব্লাড সুগারের মতো রোগ।চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক কিভাবে সমাধান করা যাবে এই মিডলাইফ ক্রাইসিসের.......
Read Also : ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম সুনীল ছেত্রী
১) প্রথমেই মনে রাখা উচিত এই সমস্যা যে শুধু আপনার একার হচ্ছে তা কিন্তু নয়। আপনার বয়সী সকল মানুষ সেই সময় দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতি ফেস করছেন।তাই এই কথা ভেবে অস্থির হবেন না। কোনো মানুষই জীবনে সবকিছু পান না। সেইমতো আপনিও হয়তো অনেক।কিছুই পাননি। হয়তো অন্যদের থেকে আপনার অপ্রাপ্তির ঝুলিটা একটু বেশিই পূর্ণ। কিন্তু এই কথা মনে করে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বেন না। এতে আপনারই ক্ষতি।মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে।আর তা না হলেই বিপত্তি। শরীরে এসে বাসা বাঁধতে পারে সুগার ও প্রেসারের মতো রোগ। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ৪০ এর পরে যারা হাই প্রেসার বা হাই সুগারে ভোগেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ডিপ্রেশনের শিকার হয়ে থাকেন। তাই এই সময়ে দুশ্চিন্তা যত কম করবেন শরীর তত ভালো থাকবে।
২) বাস্তব পরিস্থিতিকে মেনে নিতে হবে। হয়তো সেই মুহূর্তে আপনার সন্তানরা আপনার পাশে নেই কিন্তু সেই সন্তান হয়তো আপনারই মুখ উজ্বল করার জন্য বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছে। তাই যে পাশে নেই তার কথা মনে করে দুঃখ না পেয়ে হতাশ না হয়ে যারা সেই মুহূর্তে পাশে রয়েছে তাদের নিয়েই সুখী থাকার চেষ্টা করুন।হয়তো আপনার চারপাশে ঘিরে থাকা মানুষগুলো আপনার মুখের হাসিটি দেখার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। তাই নিজের হতাশাকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে না দিয়ে অন্যদের খুশিকে নিজের জীবনে প্রবেশ করতে দিন।
৩) অনেকসময়ই কাঁচা বয়সে আমরা কিছু ভুল করে ফেলি যার জন্য বৃদ্ধ বয়সে আমাদের পস্তাতে হয়। কিন্তু মধ্যবয়সে পৌঁছে সেই ভুলের কথা ভেবে কষ্ট না পেয়ে যদি সেই ভুল শোধরানোর কোনো পথ বের করা যায় সেটিই হয় মঙ্গলজনক। কারণ অপরিণত বয়সে মানুষের করে ফেলা কিছু ভুল হয়তো সারাজীবন শোধরানো যায় না। কিন্তু কিছু ভুল এমনও থাকে যেগুলি শুধরে নেওয়া যায়। যেমন ধরুন, কোনো বিশেষ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আপনি আপনার বাবামায়ের সাথে সম্পর্ক তুলে দিতে সেই মুহূর্তে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আর নেই। সেই ক্ষেত্রে অতীতে করা এই ভুল যদি শুধরে নেওয়া যায় তাহলে কি সত্যিই খুব ভুল হবে?
৪) দায়িত্ব পালন করতে করতে অনেক সময়েই মনে হতে পারে "আর ভালো লাগছে না"। কিন্তু এই কথা বললে বা ভাবলে কি সত্যিই চলবে? আপনার চারপাশে যেসব মানুষজন রয়েছেন হয়তো তারা আপনার উপরেই নির্ভরশীল।সেই মানুষগুলির কথা ভেবে দায়িত্ব থেকে পিছপা হবেন না।
৫) সারাদিন হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া যেই কাজটি ভালো লাগে সেই কাজই করুন। মনের মধ্যে হতাশাকে কখনোই বাসা বাঁধতে দেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজন পড়লে সঙ্গীকে সাথে নিয়ে একদিন শপিংয়ে চলে যান। দেখবেন মন খারাপ উধাও।
এতো গেলো যারা মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন তাদের কি করণীয় সেই কথা। কিন্তু সন্তান হিসেবে প্রতিটি মানুষেরই কর্তব্য তাদের বাবামায়ের দায়িত্ব নেওয়া। সেই ক্ষেত্রে সন্তানের কি করা উচিত বাবা মাকে মিডলাইফ ক্রাইসিস থেকে বের করে আনার জন্য চলুন জানা যাক................
এইসময় যতটা সম্ভব পারেন বাবা মায়ের কাছে থাকার চেষ্টা করুন। চাকরি, সংসার সামলে যে সময়টুকু হাতে বেঁচে থাকবে সেই সময়টুকু বাবামায়ের জন্যই রাখুন। ছোটবেলায় ফেলে আসা দিনগুলি হয়তো আমাদের মনে পড়ে না কিন্তু আমাদের বাবামায়ের সেই দিনগুলির কথা হয়তো খুবই মনে পড়ে। তাই আমরা যদি পাশে থাকে এই বয়সে এসে আমাদের বাবামায়েরা ভরসা পান। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবলে বাবামাকেও সেই প্ল্যানে ইনক্লুড করুন।এই সময় মানুষের মনের উপর দিয়ে যেহেতু ঝড় বইতে থাকে তাই এইসময় তাদের ছোটোখাটো কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করুন। বাবামায়ের পাশে থাকুন, তাদের একটু সময় দিন তাহলেই দেখবেন সমস্যার সমাধান অনেকাংশে করা সম্ভব হয়েছে।