পাকা চুলের সমস্যার সমাধান

আজকাল চুল পেকে যাওয়া আর বয়স বাড়ার লক্ষণ নয়। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে যেকোনো কারণেই চুলে পাক ধরতে পারে। দূষণ থেকে শুরু করে চুলের নানা স্টাইল সবকিছুরই কিছু না কিছু ভূমিকা রয়েছে চুল পাকানোর পিছনে। তাছাড়া রয়েছে আবার চুলে কালার করার স্টাইল। চুলের পার্মানেন্ট ক্ষতি করতে কালারের জুড়ি মেলা ভার। কালার যেমন চুলের ক্ষতি করে সেরকম বাজারে আরও নানা প্রোডাক্ট রয়েছে যারা চুলের ক্ষতি করতে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তাই অল্প বয়সে পাকা চুলের সমস্যা ফেস করা আজকালকার দিনে দাঁড়িয়ে খুব একটা ইম্পসিবল নয়। আর একবার চুল সাদা হতে শুরু করলে তাকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর। একবার সাদা হয়ে যাওয়া চুল আবার কালো করার জন্য নির্ভর করতে হয় সেই রাসায়নিকযুক্ত বাজারচলতি কলপ কিংবা কালারের উপর। আর তাতে চুলের স্বাস্থ্যের হয় দফারফা। তাহলে উপায়? আছে কি এমন কোনো প্রাকৃতিক উপাদান যা দিয়ে রুপোলি হয়ে যাওয়া চুল আবারও কালো হবে? নিশ্চই রয়েছে। চলুন আজ চুল রং করার কিছু প্রাকৃতিক উপায় জেনে নেওয়া যাক...........

 

বাজারচলতি রাসায়নিকযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারের থেকে প্রাকৃতিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে চুলে যেমন রঙের ছোঁয়া লাগবে সেরকমই চুলে ফিরে আসবে তার প্রাণ। এর জন্য যেসব উপাদান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো হেনা, কারিপাতা, কফি, আমলা প্রভৃতি। চলুন আজ এই উপাদানগুলি দিয়ে কিভাবে চুলে রং করা যায় জেনে নিই....

 

১) হেনা 

চুলে হেনার উপকারিতার কথা আর নতুন করে বলতে হবে না। আমরা সকলেই জানি হেনার উপকারিতার কথা। একদিকে চুল রং করতে ও অন্যদিকে চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হেনার জুড়ি নেই।যেদিন চুলে হেনা করবেন তার আগেরদিন একটি বড় পাত্রে হেনা ভিজিয়ে রাখবেন। যদি চুলে লালচে বা বার্গেন্ডি কালার আনতে চান তাহলে একটি লোহার বাটিতে হেনা ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। ব্র্যান্ডেড হেনা ব্যবহার করাই শ্রেয়, কারণ বাজারচলতি কমদামি প্রোডাক্টে হেনার সাথে মেহেন্দি মেশানো থাকে। মেহেন্দিও চুলের জন্য উপকারী। তবে হেনার থেকে মেহেন্দি ব্যবহারে চুলে বেশি গাঢ় রং আসে। তাই মেহেন্দি ব্যবহার না করতে চাইলে দামি হেনা পাউডার ব্যবহার করাই ভালো। হেনা খুব ভালো কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। যদি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে হেনার ব্যবহার করতে চান তাহলে যেকোন পাত্রেই হেনা ভেজাতে পারেন।পরের দিন অর্থাৎ যেদিন হেনা লাগাবেন চুলে সেদিন আলাদা করে চায়ের লিকার বানান। তবে এই লিকার ফুটিয়ে তৈরী করার প্রয়োজন নেই। চাপাতা জল দিয়ে ভিজিয়ে নিলেই চলবে। তবে খেয়াল রাখবেন বেশিক্ষন যাতে ভেজানো না থাকে। যদি খুশকির সমস্যা থাকে তাহলে হেনায় লেবুর রসের ব্যবহার করতে পারেন। সব সামগ্রী একসাথে মিশিয়ে তৈরী করুন হেনা পেস্ট। খেয়াল রাখবেন পেস্ট যেন খুব বেশি তরল না হয়ে যায়। হেনা লাগানোর সময় হেয়ারলাইন বরাবর চাইলে নারকেল তেল বা তৈলাক্ত কোনো প্রোডাক্ট লাগিয়ে নিতে পারেন তাহলে হেনার মিশ্রণ গড়িয়ে নেমে আসলে কপালে দাগ পড়বে না। ব্রাশ দিয়ে সারা মাথায় লাগিয়ে নিন এই হেনা পেস্ট। এক ঘন্টা রেখে ভালো করে প্রথমে জল দিয়ে ধুয়ে তারপর হারবাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রতিমাসে একবার করে এই পদ্ধতিতে হেনা করলে কয়েক মাসের মধ্যে নিজেই তফাৎ লক্ষ্য করতে পারবেন। একটা কথা মাথায় রাখবেন হেনা যেন স্ক্যাল্পে না লাগে। 

 

২) কারিপাতা 

রান্নায় ফোড়ন দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত কারিপাতা যে চুলের উপকারেও কাজ এলাগে তা হয়তো অনেকেরই জানা ছিল না। কারিপাতায় উপস্থিত ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, কপার এবং তামা কম বয়সে চুলে পাক ধরার সমস্যা রোধ করে।এর জন্য পরিমান মতো নারকেল তেলে কারিপাতা মিশিয়ে ফোটান।তেলে হালকা কালো রং এলে বুঝতে হবে সেই তেল আর গরম করতে হবে না। স্ক্যাল্পে যতটা গরম সহ্য করতে পারবেন ততটা গরম অবস্থায় তেল মাথায় মালিশ করুন। কিছুক্ষন রেখে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই তেল ব্যবহার করতে পারলে পাকা চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

 

৩) কফি 

চুলে রং করতে চাইলে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কফির কথা মাথায় রাখতে পারেন। জল দিয়ে কফি পাউডার গুলে নিন।দেখবেন যেন মিশ্রণ বেশি তরল না হয়ে যায়। সেই মিশ্রণ চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে নিন। এক্ষেত্রে কালো কফি ব্যবহার করা গেলে ফল ভালো পাওয়া যায়। এই মিশ্রণ ২০ মিনিট মতো চুলে রেখে দিন। তারপর শ্যাম্পুও করে নিন। হারবাল শ্যাম্পু ব্যবহার করা গেলে ভালো। নাহলে শ্যাম্পু কেনার সময় খেয়াল রাখবেন শ্যাম্পুতে যাতে সালফার না থাকে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই পদ্ধতিটির ব্যবহার করলে চুলে বাদামি আভাস খুব সহজে চলে আসবে। 

 

৪) আমলা 

চুলে আমলা বা আমলকির ব্যবহার বহুযুগ আগে থেকেই চলে আসছে। নারকেল তেলের সাথে আমলা গুঁড়ো মিশিয়ে নিয়ে সেই তেল মাথায় লাগাতে পারেন সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন। সারারাত এই তেল মাথায় রাখা গেলে খুব ভালো হয়। সারারাত এই তেল মাথায় থাকার ফলে চুলের গোড়ায় তেল প্রবেশ করে এবং চুলকে স্ট্রং করে তোলে। সকালে উঠে ঈষদুষ্ণ জল দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।

 

চুলে পাক যেকোনো কারণেই ধরতে পারে। বাইরের নানা ক্ষতিকর প্রোডাক্ট ট্রাই না করে প্রাকৃতিক উপাদান ট্রাই করার চেষ্টা করুন। লিভারের সমস্যা থেকেও অনেকসময় চুলে পাক ধরে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। চুল পেকে যাওয়ার সাথে সাথে যদি অন্যান্য শরীরিক সমস্যাও খেয়াল করেন যা দেখে মনে হতে পারে লিভারের সমস্যা বর্তমান তাহলে চিকিৎসকের সাথে কনসাল্ট করে নেওয়া দরকার।          

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...