দেবাদিদেব মহাদেব অত্যন্ত অল্পেই তুষ্ট হয়ে যান। তিনি ভোলেবাবা, তাই সামান্য কৃচ্ছসাধনে তুষ্ট হয়ে তিনি ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিটি মহাশিবরাত্রি নামে পরিচিত। কিন্তু মহা শিবরাত্রির পাশাপাশি প্রতি মাসে মাসিক শিবরাত্রিও পালন হয়। প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে শিবরাত্রি ব্রত অনুষ্ঠিত হয়। এটিকে মাসিক শিবরাত্রি বলা হয়। কোন ভক্ত যদি এই দিন দেবাদিদেব মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে তার সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
তাহলে ২০২২-এর চলতি মাসে মাসিক শিবরাত্রি কবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে? এই মার্চ মাসের ১ তারিখে মাসিক শিবরাত্রি পালিত হবে। সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় যে, এই দিন যদি শিবের মাথায় জল ঢালা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির মোক্ষ প্রাপ্তি নিশ্চিত। এছাড়া আরও বলা হয় যে, এই দিন যদি কোন ভক্ত সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে উপবাস রাখেন, তাহলে দেবাদিদেবের কৃপায় তার সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। এছাড়া জীবনের যাবতীয় কষ্ট দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে ভক্তরা মাসিক শিবরাত্রি পালন করে থাকেন।
এই দিন শিবশক্তির অভিসার হিসেবে উদযাপন করা হয়। মাসিক শিবরাত্রিতে শিব ও শক্তির সংমিশ্রণ হয় বলে এই দিন উপোস রাখলে দেবাদিদেব মহাদেব ও দেবী পার্বতীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। তাই জীবনের শক্তি পেতে সকল দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ও সর্বোপরি মোক্ষ প্রাপ্তির জন্য সকল ভক্তরা দেবাদিদেবের আরাধনা করেন এই দিন। শাক্ত ও শৈব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বৈষ্ণবরাও এইদিন দেবাদিদেবের আরাধনা করে থাকেন। কারণ দেবাদিদেব মহাদেবকে বলা হয় পরম বৈষ্ণব, ভগবান শ্রী হরির শ্রেষ্ঠ ভক্ত তিনি। তিনি সর্বক্ষণ ধ্যানের মধ্য দিয়ে শ্রী হরির আরাধনা করে চলেন। তাই বৈষ্ণব ভক্তরা শুদ্ধ ভক্ত হওয়ার জন্য প্রকৃত বৈষ্ণব হওয়ার জন্য সর্বোপরি ভক্তি পথে অগ্রসর হওয়ার কামনা নিয়ে মাসিক শিবরাত্রির এই উপবাস করে থাকেন।
সনাতন শাস্ত্রে বলা হয় মাসিক শিবরাত্রির দিন মধ্যরাত্রিতে দেবাদিদেব মহাদেব লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন। এরপর থেকে প্রতি মাসেই চতুর্দশী তিথিটি শিবরাত্রি হিসেবে পালন হয়। এখন যে সকল ভক্তদের কোন কারণে মহাশিবরাত্রি পালনে কোনো রকম বাধা এসে উপস্থিত হয় তারা যদি মাসিক শিবরাত্রি পালন করে তাহলেও দেবাদিদেব মহাদেব এবং ভগবান শ্রী হরি উভয়ই প্রসন্ন হবেন।
কীভাবে পালন করবেন মাসের শিবরাত্রি?
মাসিক শিবরাত্রির দিন ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে শয্যা ত্যাগ করুন। তারপর স্নান করে পরিষ্কার কাপড় পরে পুজো দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন। মধ্যরাত্রে যদি শিবলিঙ্গ তৈরি করে দেবাদিদেবের অভিষেক করাতে পারেন তাহলে ভালো হয় যদি তা না পারেন তাহলে কাছেপিঠে মন্দির থাকলে সেখানে উপস্থিত হয়ে দই, মধু ,দুধ, জল, ঘি ইত্যাদি দিয়ে দেবাদিদেবের অভিষেক করুন। এরপর চন্দন বাটা দিয়ে তিলক করে বেল পাতা ও ধুতরা নিবেদন করুন দেবাদিদেবকে। দেবাদিদেবের প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণ করে প্রণাম করুন। দেবাদিদেবের আরতি করে পুজো শেষ করুন।
এইদিন মহাদেবের মাহাত্ম্য জনিত নানান রকম কথা পাঠ করুন ও আলোচনা করুন অন্যান্যদের সঙ্গে। এইদিন সম্পূর্ণভাবে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করে ও শুদ্ধ মানসিকতা নিয়ে দেবাদিদেবের আরাধনা করতে হবে। মাসিক শিবরাত্রি পালন করা কালীন কারোর অনিষ্ট চিন্তা করবেন না বা কারোর প্রতি অশুভ কথা বা হিংসাত্মক শব্দ ব্যবহার করবেন না। দেবাদিদেব মহাদেব অন্তরের শুদ্ধতা দেখেন, তাই মনের মধ্যে কোনরকম অসৎ চিন্তা আসতে দেবেন না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মার্চ মাসের ১ তারিখ ছাড়াও ৩০ শে মার্চ মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে। এছাড়া ২৯ শে এপ্রিল মাসিক শিবরাত্রি ও ২৮ শে মে মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে। বছর জুড়ে আর কবে কবে মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে এক নজরে দেখে নিন-
২৭ শে জুন মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে ।
২৬ শে জুলাই মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে ।
২৫ শে আগষ্ট মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ তারিখ ও অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখ মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে। এছাড়া নভেম্বরের ২২ তারিখ ও ডিসেম্বরের ২১ তারিখ মাসিক শিবরাত্রি রয়েছে।