খাবার ঠান্ডা হোক বা গরম, মুখে দিলেই দফারফা। না, এই হাল আপনার একার নয়। পৃথিবীতে বহু মানুষ আছেন যাদের অত্যধিক ঠান্ডা বা গরম খাবার থেকে দাঁতে শিরশিরানি অনুভূত হয়। বাজারে এই সমস্যার জন্য নানা পেস্ট উপলব্ধ হলেও কাজ খুব একটা দেয় না বললেই চলে। তাই বাধ্য হয়ে গরম কফি, ঠান্ডা আইসক্রিমের মতো জিনিসকে জীবন থেকে দূর করে দিতে হয়।দাঁতের এই সমস্যা প্রথমদিকে খুব একটা আমল দেননা কেউই। কিন্তু যেই সমস্যাটি জাঁকিয়ে বসে তখনই ঘটে বিপদ। চিকিৎসক থেকে শুরু করে নানা পেস্ট ওষুধ বিফলে যায় সব। ধীরে ধীরে দাঁত ক্ষয়ের সম্মুখীন হতে থাকে। কিভাবে এড়াবেন এই বিপদ বুঝতে পারছেন না? চলুন আজ এই নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
দাঁতে শিরশিরানি কেন অনুভূত হয় জানা আছে কি? হ্যাঁ, আমরা সকলেই জানি যে দাঁতের মধ্যেও প্রচুর পরিমানে নার্ভ থাকে। আর মাড়ির ক্ষয়ের কারণে সেইসব নার্ভের খোলা প্রান্ত যখন উন্মুক্ত হয়ে যায় তখনই ঠান্ডা বা গরমের ফলে তারা বেশি উত্তেজিত হয়ে যায় আর সেই সময়েই দাঁতের শিরশিরানি অনুভূত হয়। গরমের ক্ষেত্রে একটু কম হলেও ঠান্ডার ক্ষেত্রে খুব বেশি অসুবিধা হয়ে থাকে সকলেরই।অনেকসময় শিশুদের দাঁতে পোকার সমস্যা থাকে যা আসলে দাঁতের ক্ষয়েরই আরেকটি রূপ। এই সময় সঠিক চিকিৎসা না করানো হলে ভবিষ্যতে গিয়ে এই সমস্যা দাঁতের শিরশিরানি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আবার পড়ে গিয়ে বা যেকোনো আঘাত লেগে যদি দাঁতের প্রান্ত ভেঙে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রেও দাঁতে শিরশিরানি অনুভূত হতে পারে।
এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সাধারণত ঠান্ডা খাবার বা পানীয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই সমস্যার সম্মুখীন হওয়া মানুষদের নরম ব্রাশ ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে।কিন্তু সবসময় তো আমরা ডাক্তারের কাছে যাই না। প্রথমেই যদি কিছু ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যায় তাহলে ক্ষতি কি বলুন? কি কি ঘরোয়া উপায়ে দাঁতের শিরশিরানি কমানো যায় চলুন জেনে নেওয়া যাক...........
১) এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ মধু এবং তাতে সামান্য পরিমান নুন মিশিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার পর ভালো করে মুখ ধুয়ে তারপর এই জল দিয়ে কুলকুচি করে নিন। দাঁতের মধ্যে হালকা গরম ভাপ লাগতে দেবেন।
২) মধুর ব্যবহার যদি না করতে চান তাহলে শুধু নুন দিয়েই কাজ চালানো যাবে। নুন জল দাঁতের জন্য উপকারী। তাই আপনি মধু বাদ দিতে চাইলে শুধু নুন দিয়ে ওই একই পদ্ধতিতে কুলকুচি করতে পারেন।
৩) আপনি যদি ঝাল খেতে অভ্যস্ত হন তাহলে ক্যাপসাইসিনযুক্ত যেকোনো মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। ক্যাপসাইসিন হল লঙ্কার মূল উপাদান। যা লঙ্কায় কতটা ঝাল হবে তা নির্ধারণ করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই ক্যাপসাইসিন প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেও অধিক কার্যকরী। তাই ঝালে অসুবিধা না থাকলে এই পদ্ধতি ট্রাই করে দেখতে পারেন।
৪) আজকাল গ্রিন টি প্রায় সব বাড়িতেই পাওয়া যায়। গ্রিন টি দিয়ে চা বানিয়ে সেই চা দিয়ে কুলকুচি করলেও দাঁতের শিরশিরানি থেকে উপকার মেলে।
৫) দাঁতের ব্যাথা থেকে শুরু করে দাঁতের শিরশিরানি সবকিছুতেই উপকার দেয় ক্লোভ অয়েল অর্থাৎ লবঙ্গ তেল। একটি তুলোর মধ্যে একটুখানি লবঙ্গ তেল নিয়ে তা দাঁতের প্রান্তে কিছুক্ষন চেপে ধরে থাকলে উপকার মেলে প্রায় তৎক্ষণাৎ।
এগুলি সবকটিই হল হোম রেমিডি বা ঘরোয়া টোটকা। সমস্যার শুরুতে এইসব টোটকা ব্যবহার করে আপনি দেখতেই পারেন কিন্তু সমস্যা বাড়ছে বলে মনে হলে ঘরোয়া টোটকার উপর ভরসা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। কারণ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন এই দাঁতের শিরশিরানি সমস্যার ট্রিটমেন্ট না করলে ভবিষ্যতে গিয়ে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে|