ঋতু পরিবর্তনের কারণে এখন প্রায় সব বাড়িতেই জ্বর সর্দি কাশির উপদ্রব বেড়েছে। ছোট থেকে বড় ছাড় পাচ্ছে না কেউই। সকলেই প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার শিকার। সকালের দিকে অত্যধিক গরম এবং রাতের দিকে হালকা ঠান্ডা এই নিয়েই এখন চলতে হচ্ছে মানুষকে। ক্যালেন্ডারে বর্ষাকাল প্রায় শেষ হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই এই মুহূর্তে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। অতএব, আবারও পরিবর্তিত হতে চলেছে আবহাওয়া। বৃষ্টির ফলে জেগে উঠতে চলেছে নানা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া। আসতে চলেছে নানা রোগজীবাণু। এমত পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিভাবে বাঁচবেন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের হাত থেকে?
চিকিৎসকদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ফলে আক্রান্ত হয় মূলত ফুসফুস। প্রথমে খুব সাধারণ জ্বরের মতো সিম্পটম দেখালেও ধীরে ধীরে এই ভাইরাস ব্রেনে গিয়ে অ্যাটাক করে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগের ফলে হার্ট এবং ব্রেনের টিস্যুতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা মূলত সেইসব মানুষদের বেশি হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম। তাই বিশেষ করে ৫ বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক এই রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে-
১) এই রোগের প্রধান লক্ষণ হলো ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপর জ্বর।
২) পেশিতে অস্বাভাবিক ব্যথা।
৩) চিলস অ্যান্ড সোয়েট অর্থাৎ এই মুহূর্তে ঠান্ডায় কাঁপুনি দিচ্ছে তো পরমুহূর্তেই ঘাম বেরোচ্ছে।
৪) মাথা যন্ত্রনা।
৫) দুর্বল এবং ক্লান্ত অনুভব করা।
৬) দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা শুকনো কাশি।
এছাড়াও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গলা ব্যথার সমস্যাও এই সময় লক্ষ্য করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগের চিকিৎসা বাড়িতেই করানো যায়। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হলে যেমন বুকে সর্দি বসে গেলে বা শ্বাসকষ্টের পরিমান বেড়ে গেলে তখন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে পারে।
এই ভাইরাস মূলত বাতাসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে থাকে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস পরিবেশে নিঃসৃত হয়ে তা বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হতে থাকে এরপর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাযুক্ত মানুষের কাছে পৌঁছালে এই ভাইরাস প্রবেশ করে সেই মানুষের মধ্যে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত নানা সামগ্রী থেকেও এই ভাইরাস ওপর ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই ক্ষেত্রে গবেষকরা জানাচ্ছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতি মুহূর্তে নিজেদের চরিত্র পরিবর্তন করতে থাকে। একবার শরীরে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস হানা দিলে তার বিরুদ্ধে শরীরের স্বাভাবিক নিয়মে একটি অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে যায়। তাই পরবর্তীকালে ওই একই ভাইরাস আর একই ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে যেসব রিস্ক ফ্যাক্টরগুলি কাজ করে সেগুলি হলো-
১) বয়স- ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের অ্যাটাক বয়সের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে খুব কম বয়সীরা এবং একটু বেশি বয়সের মানুষ এই রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কারণ খুব কম বয়সী শিশুদের যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে সেরকমই বয়স বাড়ার সাথে সাথে একজন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তাই শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষদের ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়।
২) কর্মক্ষেত্র- যেহেতু এই ভাইরাস বাতাসের মধ্য দিয়ে পরিবাহিত হয় সেই জন্য এই রোগে আক্রান্ত রোগীর আশেপাশে থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করে তাহলে তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় বহুগুন বেড়ে যায়।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- আগেই বলা হয়েছে শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। কিন্তু কিছু কিছু রোগের সাইড এফেক্ট হিসেবেও অনেক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যেমন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য মানুষদের তুলনায় অনেক কম থাকে।
৪) ক্রনিক ইলনেস- অনেক ধরণের রোগের আফটার এফেক্ট হিসেবে হতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জা। কারণ শরীরে কোনো বড় রোগ বাসা বাঁধলে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শরীর অন্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার প্রবেশের জন্য অনুকূল হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা হানা দিতে পারে। সেরকম কিছু রোগ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে তা হলো অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি।
এছাড়াও প্রেগন্যান্সি, ওবেসিটি প্রভৃতিও ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণ হতে পারে। এই রোগের ট্রিটমেন্ট করার জন্য চিকিৎসকেরা মূলত অ্যান্টি-বায়োটিক কিংবা অ্যান্টি-ভাইরাল মেডিসিন রেকমেন্ড করে থাকেন। অত্যধিক বাড়াবাড়ি হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হতে পারে। সেখানে অক্সিজেন এবং স্যালাইনের সাহায্য লাগতে পারে। এতো গেলো কারণ, রোগের চিকিৎসা প্রভৃতির কথা। কিন্তু রোগটি শরীরে যদি বাসাই না বাঁধতে পারে তাহলে তো এইসবের কোনো প্রয়োজনই নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই রোগ থেকে বাঁচার কিছু পদ্ধতি-
১) এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
২) হাঁচি এবং কাশির সময় রুমাল ব্যবহার করুন। নিজের ব্যবহার করা রুমাল যেমন অন্য কারোর সাথে শেয়ার করবেন না সেরকমই অন্য কারোর রুমাল বা টাওয়েল নিজে ব্যবহার করবেন না।
৩) এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য বেশি করে জল খান এবং কাঁচা শাকসবজি যতটা সম্ভব বেশি করে খান।
৪) রাস্তায় বেরোলে মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। মাস্ক ব্যবহার করতে অসুবিধা হলে রুমালের ব্যবহার করতে পারেন।
৫) হাঁচি কাশির মধ্যে দিয়ে যেহেতু এই রোগ ছড়ায় তাই কোনো ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে সেই ব্যক্তি সুস্থ না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।