খুশি রাখুন নিজেকে

অপরের দেখ-ভাল করতে করতে, অপরের সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা, খারাপলাগাকে নিয়ে পথ চলতে চলতে মানুষ কখন যেন নিজের জীবন থেকেই হাসি আনন্দকে দূর করে ফেলে। বিশেষ করে মা-বাবারা। সন্তানের জীবনের পথ যাতে মসৃন হয় তার জন্য সারাজীবন স্যাক্রিফাইস করে চলেন। নিজেদের জীবনের হাসি বা আনন্দ কোথায় যে হারিয়ে গেছে তার খোঁজও অনেকে করেন না। কিন্তু এতেই ঘটছে বিপদ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিজেকে সবসময় খুশিতে রাখতে হয় আর তা না হলে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা কঠিন রোগ। দীর্ঘদিন এইভাবে থাকার ফলে মনের গভীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে ডিপ্রেশন

কিভাবে কাছের মানুষটিকে খুশিতে রাখা যায় চেষ্টা করলে সেটা বোঝা কঠিন নয় । কোন কাজটা করলে সে খুশি হবে কিংবা কি এনে দিলে সে খুশি হবে। অনেকসময় অপরকে খুশি করার মধ্যে দিয়েই নিজেকে খুশি চায় মানুষ। কিন্তু সত্যিই কি তাই? অপরকে ভালো রাখলেই কি নিজের মন সব সময় খুশী হয়? তার নিজের কোনও চাওয়া নেই?

বিশেষজ্ঞদের মতামত কিন্তু অন্য। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অপরকে ভালো রাখার মধ্যে দিয়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা করা খারাপ নয়। অনেকেই আছেন যাঁরা রান্না করতে ভালবাসেন। বাড়িতে লোকজন, বন্ধুবান্ধব, কাছের মানুষদের নিমন্ত্রণ করে এনে খাওয়াতে খুব ভালোবাসেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। তারা কি সত্যিই খুব খুশি? নিজের জন্য নিজেকে ভালোবাসাটা জরুরী। মনোবিদরাও তেমনটাই বলছেন। নিজেকে নিজে ‘রিলিফ’ দিতে বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন তাঁরা।

মনোবিদরা জানাচ্ছেন, ‘অপরাধবোধ’ মানুষকে ডিপ্রেশনের মধ্যে ঠেলে নিয়ে যায়। কখনো যদি মনে হয় আপনার কারণে কেউ কষ্ট পেয়েছে কিংবা কোনও অপ্রীতিকর ঘটা ঘটে গিয়েছে, তাহলে সময় নষ্ট না করে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিন। মনোবিদদের মতে, অন্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগে উচিৎ নিজেকে নিজে ক্ষমা করা। আপনি হয়তো সেই মানুষটির কাছ থেকে ক্ষমা পেয়ে গেলেন কিন্তু আপনি নিজেকে যদি ক্ষমা না করতে পারেন তাহলে মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মনোবিদরা বলছেন, পরবর্তীকালে এইজাতীয় ভুল যাতে আর না হয় সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে আপনাকেই। নিজেকে যদি ক্ষমা করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার থেকে সুখী মানুষ আর কেউ নেই।

নিজেকে ‘অপূর্ণ’ ভাবা উচিৎ নয়। মনোবিদরা জানাচ্ছেন, নিজেকে জীবনের কোনো পর্যায়তেই অপূর্ণ ভাবা উচিৎ নয়। নিজেকে অপূর্ণ ভাবার অর্থ এমন একটি বিশেষ মানুষের অপেক্ষা যে আসার ফলে নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হবে। কিন্তু এইধরণের চিন্তাভাবনা শরীর ও মন উভয়ের পক্ষেই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। তারা জানাচ্ছেন, এই ধরণের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। নিজের জীবনের সমস্ত খুশি অন্যের হাতে তুলে দেওয়া উচিৎ নয়।

আমরা অনেকেই আছি যারা নিজেদেরই সঠিকভাবে চিনে উঠতে পারি না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সবার আগে মানুষের উচিৎ নিজেকে চেনা। নিজের কোন কাজটা করতে ভালো লাগে, নিজেকে কোন পোশাকে সবচেয়ে বেশি মানায় এইজাতীয় প্রশ্নগুলি আগে ভাবা উচিৎ।এতে কনফিডেন্স বিল্ড-আপ হয়। সারাদিনে কতবার আয়না দেখা হয়? অগুন্তিবার তো? কিন্তু গভীরভাবে কখনও দেখা হয়? নিজেকে কখনো কোনো প্রশ্ন করা হয় কি? না তো? মনোবিদরা জানাচ্ছেন, নিজেকে খুশি রাখতে গেলে এই অভ্যেসগুলি শীঘ্রই করে নেওয়া উচিৎ। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখা উচিৎ নিজের সাথে কথা বলার সময় প্রশ্ন এবং উত্তর দুইই যেন পজিটিভ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের কোনো অপূর্ণতাকে কখনোই হাইলাইট করা উচিৎ নয়। অপরের কাছে তো নয়ই, নিজের কাছেও নয়

 

জীবনে চলার পথ সবসময় মসৃন হয় না। সেই সময় ভেঙে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তার মধ্যেও নিজেকে ভালোবাসাটা জরুরি। নিজের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে ক্ষতি নিজেরই। দোলাচলে পড়লে সবসময় একটা কথাই মাথায় রাখবেন তা হলো ‘জব উই মেট’ সিনেমায় করিনা কাপুরের মুখে শোনা সেই ডায়লগ ‘ম্যায় আপনি ফেভারিট হুঁ’

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...