কোনির একজন খিদদা ছিলেন। কিন্তু রেবতীর ভাগ্যে সেটাও জোটেনি। ওর খিদদা ও নিজেই। দৌড়, শুধু দৌড়। দারিদ্রকে হারিয়ে জীবনের ট্র্যাকে জিতে যাওয়ার দৌড়। এমনভাবেই অলিম্পিক ট্র্যাকে এসে পৌঁছে গিয়েছে তামিলনাড়ুর মেয়েটি। দৌড়বে ভারতের ২৬ অ্যাথলিট-দলে।
মাত্র ৭ বছর বয়স তখন। রেবতী পিতৃহারা হয়। মাথার ছাদ বলতে ছিল বাবাই। আচমকা সরে যাওয়ায় মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছিল। নিজেকেই হয়তো বলতে শুরু করেছিল 'ফাইট রেবতী ফাইট'। কী করবে? ওর তো একটা খিদদাও জোটেনি।
কষ্টের শুরু ছিল ওটা। বছর ঘুরল না মা'ও ছেড়ে চলে যায় মেয়েটিকে। রেবতী এবং তার ছোট বোনের দায়িত্ব নেন দিদা। দিদার আরাম্মলের সংসার চলে মাদুরাইয়ে, সাক্ষীমঙ্গলম গ্রামে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। মেয়েদের দেখার কেউ নেই। তাই সরকারি স্কুলের হোস্টেলে থেকে দুজনকে পড়াশোনা করতে হয়। কিন্তু ওই দিদাই ভরসা।
কলেজে পড়াশোনা করার সময়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত একজন খিদদাকে পায় দক্ষিণী কোনি। খালি পা। কী জোর দৌড়চ্ছে মেয়েটা! ২০১৫ সালের ওই রেস নজর কাড়ে কান্নান স্যারের। তিনি চাইছেন মেয়ে দৌড়াক বড় ট্র্যাকে। বলেছিলেন জুতো কিনে দেবেন। থাকতে হবে সাইয়ে। দৈনিক খরচ ৪০ টাকা। কে দেবে? সেই ক্ষমতা ওর ছিল না। কান্নানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল রেবতী।
ছাড়ার পাত্র ছিলেন না কান্নান। দিদা আরাম্মলের কাছে যান। বলেন কলেজে পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নেবেন। রাজি হন দিদা। স্বপ্নের জাল বোনা শুরু ঠিক এখান থেকেই।১০০, ২০০, ৪০০ মিটারের রিলে একের পর এক জয়। ২০১৮-তে ফেডারেশন কাপের ২০০ মিটার দৌড়ে রূপো জিতে নেয় রেবতী। ডাক আসে পাতিয়ালার জাতীয় ক্যাম্প থেকে। ভারতীয় দলের কোচ গালিনা বুখারিনার হাতে পড়ে আরও উন্নতি করতে শুরু করে। এশিয়ার চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ এবং দোহার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ১৬০০ মিটার রিলে অংশ নেয়। অলিম্পিক যাত্রা সুগম করে ইন্ডিয়ান গ্র্যান্ড প্রিক্স জয়। ৫৩.৫৫ সেকেন্ডে ৪০০ মিটার দৌড়ে টোকিও গেমসের টিকিট নিশ্চিত করে সে।
এবার সে দৌড়বে 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'-এর ট্র্যাকে। ঝলমলে আলোয় হারিয়ে যাবে নাকি আরও নতুন দৌড় শুরু হবে? উত্তর দেবে সময়।