বৃন্দাবনের বিস্ময় রাধাবল্লভ মন্দির

দেশের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম হল উত্তরপ্রদেশে, কৃষ্ণভূমি বৃন্দাবনের রাধাবল্লভ মন্দির। ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ আর মা লক্ষ্মীর অবতার রাধার পুজো করা হয় এই মন্দিরে। প্রায় পাঁচশো বছরেরও বেশি প্রাচীন এই মন্দিরের অপর নাম হিথ মন্দির। ১৫৮৫ সালে রাধাবল্লভ সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হিথ হরিবংশ মহাপ্রভুর পুত্র শ্রী বনচন্দ্রজীর শিষ্য সুন্দরদাস ভাটনগর এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মহাপ্রভু হিথ হরিবংশের নাম থেকেই এই মন্দিরের নাম হিথ দেওয়া হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের নগরী রূপে পরিচিত বৃন্দাবনে এই মন্দির অবস্থিত। মোঘল আমলে রাজপ্রাসাদ ও দূর্গ নির্মাণ করা হতো লাল পাথর দিয়ে। আর সেই লাল পাথর দিয়েই মন্দির নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সুন্দরদাস ভাটনাগর।

radhaballav

মোঘল সম্রাট আকবরের রাজসভার প্রধান পারিষদ আব্দুল রহিম খানখানার অধঃস্থন এবং প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর মাধ্যমেই সম্রাটের কাছে অনুমতির আবেদন পেশ করেন। বিষয়টা মোটেই সহজ ছিল না। আকবর মন্দির তৈরীর অনুমতি তো দিয়েই ছিলেন, আবার মন্দির নির্মাণে আর্থিক অনুদানও দিয়েছিলেন। এই মন্দির তৈরির সব নথি আজও সংরক্ষিত রয়েছে সুন্দরদাস ভাটনাগরের বংশধরদের কাছে। 'রাধাবল্লভ সম্প্রদায়'-এর কাছে এই মন্দিরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কথিত আছে রাজা মান সিং প্রথমে এই মন্দিরটি নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। কিন্তু তিনি শুনেছিলেন যে এই মন্দিরটি যে নির্মাণ করবে তার এক বছরের মধ্যেই মৃত্যু হবে। তাই তিনি এই মন্দির তৈরি করেননি। যদিও শেষে এই কথা সত্যি হয়েছিল। কারণ মন্দিরটি তৈরি হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল সুন্দরদাস ভাটনাগরের।

Krishna-Base

প্রাচীন এই মন্দিরটি অবস্থিত বৃন্দাবনের গৌতম নগরীর কাছে একটি পাহাড়ের উপর। এই মন্দির থেকে জনপ্রিয় 'বাঁকে বিহারী মন্দির'টি দূরত্ব বেশি না। বৃন্দাবনের সাতটি ঠাকুর মন্দিরের মধ্যে অন্যতম হল রাধাবল্লভ মন্দির।প্রাচীন এই মন্দিরটিতে হিন্দু ও ইসলামিক স্থাপত্যের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। এক সময় মন্দিরটির প্রবেশদ্বারের উপর একটি শিলালিপি দেখা যেত। কিন্তু এখন আর এই শিলালিপি নেই। এছাড়াও মন্দিরের প্রাচীরগুলির উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট।

প্রত্যেক বছর রাধারাণীর জন্মদিন 'রাধাষ্টমী' উৎসব পালন করা হয়ে এই মন্দিরে। এই উৎসব নয় দিন পর্যন্ত চলে। 'হিতোৎসব' পালন করা টানা এগারো দিন ধরে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার বিয়ের উপলক্ষে ভ্যাহলু উৎসব পালন করা হয় , এছাড়াও জন্মাষ্টমী, হোলি, দিওয়ালি, ঝুলন উৎসব উপলক্ষে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায় এই মন্দির চত্বরে। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও ভক্তদের আগমন হয়ে এখানে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...