ডিম খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। বিশ্বের প্রায় সমস্ত মানুষই ডিম খেতে পছন্দ করে থাকেন। সস্তায় পুষ্টির অফুরন্ত সম্ভার এই ডিমকে যদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সংযোজন করা যায় তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। অনেকেই আছেন যাঁরা মাছ বা মাংস খেতে পছন্দ করেন না তাঁরা ডিমের উপর ভরসা করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকে যাচ্ছে, তা হলো একদিনে ক'টি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী?
ওজন নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের যোগান দেওয়া সবটাই ডিমের বামহাতের খেল। তাই ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের ডিম খাওয়ানোর অভ্যেস করানো ভালো। ডিমে উপস্থিত থাকে ভিটামিন বি৬ থেকে শুরু করে ভিটামিন বি১২। তাই শরীরে ভিটামিনের অভাবও পূরণ করতে সাহায্য করে ডিম। এছাড়াও ডিমে উপস্থিত থাকে ফলিক অ্যাসিড, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি। এছাড়া রয়েছে সোডিয়াম, থায়ামিন, জিংক, আয়রন প্রভৃতিও। অনেকসময় বলা হয়, ডিমের কুসুমে উপস্থিত রয়েছে কোলেস্টেরল যা হার্টের রোগীদের জন্য সঠিক নয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডিমের কুসুমে মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল উপস্থিত থাকে। কোলেস্টেরল শুধু শরীরের ক্ষতি সাধন করে তা কিন্তু নয়। শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্যও প্রয়োজন কোলেস্টেরল। ডিমের মধ্যে উপস্থিত কোলেস্টেরল শরীরের উপকার সাধনে কাজে লাগে। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডিমের সাদা অংশে কোলেস্টেরল উপস্থিতই থাকে না।
ডিমে উপস্থিত স্যাচুরেটেড অ্যাসিডের কারণে অনেকসময় হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষদের ডিম খেতে দেননা চিকিৎসকেরা।চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শরীরে কোলেস্টেরলের বাড়বাড়ন্ত থাকলে কুসুম এড়িয়ে চলাই ভালো। এবার আসা যাক সেই প্রশ্নে। দিনে কতগুলি ডিম খাওয়া ভালো? পুষ্টিবিদদের মতে, ওজন বেশি হোক বা কম, সপ্তাহে তিন থেকে চারটির বেশি ডিম না খাওয়াই ভালো। কারণ ডিমে উপস্থিত অ্যাভিডিন নামক একধরণের গ্লাইকোপ্রোটিন আমাদের শরীরের মধ্যে বায়োটিন শোষণে বাধা দিয়ে থাকে। বায়োটিন একধরণের ভিটামিন যা আমাদের চুল ও নখ গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষকদের মতে, শরীরে বায়োটিনের অভাব বেশি হলে তার প্রভাব ব্রেনের উপরেও পড়ে। এই বায়োটিন ওয়াটার সল্যুবল হওয়ার কারণে শরীর থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে যায়। আর ডিমের সাদা অংশ এই ভিটামিনের শোষণে বাধা দেয়। তাই ডিমের পরিমান সীমার মধ্যে রাখাই ভালো।
পুষ্টিবিদদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ সারাদিনে একটি ডিম খেতে পারেন তবে সপ্তাহে চারটির বেশি ডিম না খাওয়াই ভালো। প্রোটিন ডায়েটে থাকা মানুষদের জন্যও এই রুটিন মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। তাদের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় ডিমের পরিবর্তে মাছ, মাংস এবং সয়াবিনের পরিমান বাড়িয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরাও।