কোন অভিশাপে সমুদ্র অতলে হারিয়ে গিয়েছিল কৃষ্ণের শহর দ্বারকা নগরী

একসময় এই শহরকে বলা হত ‘স্বর্ণ নগরী’। এই নগরের অধিপতি ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।কালের অভিশাপে সেই নগরী তলিয়ে যায় সমুদ্রের গভীরে। এদেশের পবিত্র ধর্মক্ষেত্রগুলির অন্যতম হল গুজরাটের দ্বারকা। আরব সাগরের সন্নিকটস্থ এই এলাকা জামনগর জেলার অন্তর্গত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারধাম নামে পরিচিত চার প্রধান তীর্থস্থানের একটি হল দ্বারকা। সপ্তপুরী নামে পরিচিত ভারতের সাতটি প্রাচীনতম শহরের অন্যতম হল দ্বারকা। দ্বারকা শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘প্রবেশদ্বার’

মনে করা হয়, এটিই ছিল গুজরাতের প্রথম রাজধানী। কৃষ্ণের অপর নাম দ্বারকাধীশ বা দ্বারকেশ্বর। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ বা সপ্তম শতাব্দীতে দ্বারকানগরীতে দ্বারকাধীশ মন্দির নির্মিত হয়। ভাগবত পুরাণে কৃষ্ণের প্রাচীন রাজ্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

দ্বারকাকে "মোক্ষপুরী", "দ্বারকামতি" এবং "দ্বারকাবতী" নামেও উল্লেখ করা হয়েছে। মহাভারতের প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক মহাকাব্যে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। দ্বারকা তৈরি করার জন্য কৃষ্ণ সমুদ্র থেকে ১২ যোজন বা ৯৬ বর্গ কিলোমিটার অন্যার্থে ৩৭ বর্গ মাইল জমি পুনরুদ্ধার করেছিলেন বলেও বলা হয়।

a8621df3-faae-4f60-b257-00f47157e659

পুরাণ কাহিনি অনুযায়ী, মথুরায় কংসবধের পর তাঁর শ্বশুর মগধরাজ জরাসন্ধ কৃষ্ণ ও যাদব বংশকে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা করেন। মথুরায় বারংবার আক্রমণ চালান জরাসন্ধ। তাই কৃষ্ণ মথুরা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্বকর্মাকে দ্বারকাপুরী স্থাপনের নির্দেশ দেন। এক রাতের মধ্যে রাতারাতি দ্বারকা নগরী পত্তন করেন দেবশিল্পী। যাদব কুলকে নিয়ে নতুন নগরীতে বাস শুরু করেন কৃষ্ণ। দ্বারকাকে শাস্ত্রে কুশস্থলী বলা হয়। এর পশ্চাতেও আছে এক কাহিনি

সৎযুগে মহারাজা রৈবত সমুদ্রের মধ্যে ভূমিতে কুশ বিছিয়ে যজ্ঞ করেছিলেন। সেখানে কুশ নামে দৈত্যের উপদ্রব ছিল। ত্রিবিক্রম ভগবান তাকে ভূমিতে পুঁতে দিয়ে, তার ওপর কুশেরই আরাধ্য দেবে কুশেশ্বরের লিঙ্গ মূর্তি স্থাপন করেন। দৈত্য দ্বারা প্রার্থনা কররা পর ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ দেন যে, দ্বারকা আসার পর যে ব্যক্তি কুশেশ্বরের দর্শন করবেন না, তাঁর অর্ধেক পুণ্য সেই দৈত্য লাভ করবে। এ ভাবেই দ্বারকা নগরী গড়ে ওঠে।

কীভাবে সমুদ্রে নিমজ্জিত হল দ্বারকা 

মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরব বংশ নাশ হয়। গান্ধারীর শতপুত্রের প্রাণ যায়। যুদ্ধ শেষে শ্রীকৃষ্ণ গান্ধারীর সঙ্গে দেখা করতে যান। পুত্রশোকে মুহ্যমান গান্ধারী তাঁকে বলেন, চাইলেও তো তিনি এই যুদ্ধ রোধ কর তে পারতেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু ক্রুদ্ধা গান্ধারী কে তিনি সেদিন তাঁকে অভিশাপ দেন কৌরব বংশের মতোই ধ্বংস হবে যদু বংশ। তারই ফলশ্রুতি একদিন সমুদ্রে নিমজ্জিত হয় দ্বারকা। কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের বৈকুণ্ঠ গমনের পর আরব সাগরে তলিয়ে যায় গোটা দ্বারকা নগরী। যদিও অক্ষত থাকে দ্বারকাধীশের মন্দির।   

শ্রী দ্বারকাধীশ মন্দির

গুজরাটের গোমতি নদীর তীরে গড়ে ওঠে পরিচিতি দ্বারকাধীশ মন্দির। কথিত আছে , শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন । অনুমান করা হয়, মূল মন্দিরটি ২,৫০০ বছরের পুরানো। বর্তমানের মন্দিরটি ষোড়শ শতকে রাজা জগৎ সিং রাঠোর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। তাই একে জগৎ মন্দিরও বলা হয়। শ্রীকৃষ্ণের শ্যামবর্ণ চতুর্ভুজ মূর্তি পূজিত হন এখানে। তাঁর হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম। 'রণছোড়' হিসেবেও এখানে পূজিত হন পার্থসারথি।

মন্দিরের মূল গম্বুজের উচ্চতা ১৫৬ ফুট। সাত তলার সমান উঁচু। চুনাপাথরে তৈরি। দু'টি প্রবেশদ্বার রয়েছে। দক্ষিণদিকের দরজার নাম স্বর্গদ্বার। অন্যদিক মোক্ষদ্বার হিসেবে পরিচিত উত্তর দিকের দরজা।

দ্বারকাধীশ মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ৪৩ মিটার। চূড়ায় রয়েছে চন্দ্র ও সূর্য লাগানো একটি ধ্বজ। প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে ওই ধ্বজ দেখা যায়। দিনে তিনবার এই ধ্বজ বদলানোর রীতি রয়েছে।

জন্মাষ্টমীর সময় এই নগরী মন্দিরে বিপুল ভক্তের সমাগম হয়।

  • ট্যাগ

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...